সাউথ ক্লাবে স্বাগত। আনন্দ অমৃতরাজকে যেন সেটাই বলছেন চুনী গোস্বামী। —শঙ্কর নাগ দাস
নিজে ক্রিকেট অল্পস্বল্পের বাইরে দেখেন না! লস অ্যাঞ্জেলিসে তাঁর আমেরিকান বন্ধুবান্ধবরা আইপিএলের নাকি নামই শোনেনি। সাফ বলে দেন, ‘‘ক্রিকেটটা কমনওয়েলথ দেশগুলোর খেলা। আমেরিকায় জন্মানো, বেড়ে ওঠারা খেলা বলতে গল্ফ আর টেনিস বোঝে। আসলে ওই দু’টোই তো ওয়ার্ল্ড গেমস। বিশ্বজুড়ে খেলা হয়। ফুটবল বলতেও ওদের আগ্রহ আমেরিকান সকারে।’’
সম্প্রতি টেনিসদুনিয়াকে নড়িয়ে দেওয়া দু’টো ঘটনার একটা— ম্যাচ ফিক্সিং নিয়েও তাঁর অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার হাতে যখন এর প্রমাণ নেই, তখন কী করে বলব ব্যাপারটা সত্যি? তা ছাড়া টেনিস খেলে ইদানীং এত অঢেল টাকা পাওয়া যায় যে, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম কুড়ি জন গড়াপেটা করবে বলে বিশ্বাস করি না। ওই দু’শো-আড়াইশো র্যাঙ্কিংয়ের কেউ কেউ ফিক্সিং করলেও করতে পারে।’’
শারাপোভার ডোপিংয়ে ধরা পড়া প্রসঙ্গেও কেমন যেন অদ্ভুত নির্লিপ্ত তিনি! ‘‘বেনিফিট অব ডাউট দেব ওকে। যেটা ও গত দশ বছর ধরে খেয়ে এসেছে সেটা দুম করে ওয়াডা নিষিদ্ধ করে দিলেও একজন পেশাদার প্লেয়ার হিসেবে মারিয়ার সেটা জানা উচিত ছিল। তবে দেখুন, ওর চেহারা বা খেলায় পাওয়ার দু’টো ব্যাপারেই গত দশ বছরে বিরাট কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েনি। ডোপিংয়ে যেটা হবেই। তা হলে...!’’
নিজেই বাক্য অসমাপ্ত রাখেন তিনি— আনন্দ অমৃতরাজ।
পাক্কা তিরিশ বছর পর কলকাতায় এলেন যিনি। রাত ন’টায় সাউথ ক্লাবের সাম্মানিক আজীবন সদস্য পদ ক্লাব প্রেসি়ডেন্ট এনরিকো পির্পানোর হাত থেকে নেওয়ার পর যিনি এক সেকেন্ড না ভেবে বলে দেন, ‘‘সাউথ ক্লাব দেশের সেরা টেনিস ক্লাব আর ভারতীয় টেনিসের পীঠস্থান।’’ মনে রাখতে হবে, যিনি এই শংসাপত্র দিলেন তিনি এ দেশের এমন এক টেনিস পরিবারের অংশ যার ভারতীয় টেনিস ইতিহাসে ঐতিহাসিক অবদান বাদেও তাদের টেনিস অ্যাকাডেমি (ব্যাট) এখনও চেন্নাইয়ে বছরভর উঠতি প্লেয়ারদের আঁতুরঘর। এই মুহূর্তে ভারতের সেরা ডেভিসকাপার সোমদেব দেববর্মনকে ১২ বছর বয়সে ‘ব্যাট’-এ বেছেছিলেন আনন্দই।
তবু বিজয় অমৃতরাজের ডাবলস পার্টনার ভাইয়ের সাউথ ক্লাব নিয়ে চৌষট্টি বছর বয়সে নস্টালজিক হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। এই ক্লাবের কোর্টেই আনন্দের জীবনের প্রথম জাতীয় টেনিস ডাবলস শিরোপা পাওয়া। তার দু’বছরের মধ্যে জীবনের প্রথম জাতীয় সিঙ্গলস খেতাব জয়ও এখানেই। তাও ফাইনালে বিজয়কে হারিয়ে। সেই ১৯৭৪-কে তাঁর কেরিয়ারের সেরা বছর এখনও মনে করেন আনন্দ। ‘‘সে বছরই সাউথ ক্লাবে জোনাল ফাইনালে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতকে ডেভিস কাপের চ্যালেঞ্জ রাউন্ড ফাইনালে তুলেছিলাম। ডাবলসে বিজয় আর আমি দু’দিন খেলে জিতেছিলাম। একটা সেট মনে আছে ১৭-১৫ জিতি। আর একটা হেরেছিলাম ১৬-১৮!’’ তার পর সবাইকে অবাক করে দীর্ঘ চার দশক বাদেও সাউথ ক্লাবের কোর্ট থেকে ঠিক বাঁ দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘ওই তো সেই উঁচু বাড়িটা (ভবানীপুর এডুকেশন কলেজ)! ওটার ছাদ থেকেও অনেক লোক সেই ডেভিস কাপটা দেখেছিল। আর বেশ মনে পড়ছে, ম্যারাথন ডাবলসের সময় ওখান থেকে মাঝেমধ্যে আয়নায় রোদের রিফ্লেকশন ফেলা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ান জুটি আলেকজান্ডার-ডিবলির চোখ তাক করে। মানে যতটা আমাদের সাহায্য করা যায় আর কী!’’
তা সত্ত্বেও একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় শতকেও আনন্দ মনে করেন, এ দেশে টেনিসটা এখনও উচ্চ মধ্যবিত্তের খেলা। ‘‘বাবা-মা কেউ কোনও টেনিস ক্লাবের মেম্বার না হলে তাদের ছেলে-মেয়ের পক্ষে টেনিস খেলা চট করে সম্ভব নয় আমাদের দেশে। আমেরিকা, ব্রিটেনে পার্কে পার্কে সব পাবলিক কোর্ট। ইচ্ছে থাকলেই যে কেউ র্যাকেট হাতে নেমে পড়তে পারে। কোর্ট ভাড়ার মোটা খরচা মেটানোর সমস্যা নেই।’’
ভাই অশোক অমৃতরাজ হলিউডের একাধিক মিউজিক্যাল ফিল্মের সফল প্রোডিউসর হলেও আনন্দ শনি-রাতে সাউথ ক্লাবে নববর্ষের গানের আসরে থাকার বিশেষ আগ্রহ দেখালেন না। ‘‘ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি গানটান শুনি বটে। তবে এত রাতে কোনও কনসার্টে বসে নয়,’’ বলে এককালে তাঁর এখানকার লকাররুমের দিকে হাঁটা লাগালেন ভারতীয় টেনিসের বিখ্যাত ঝাঁকড়া চুল।
যেতে যেতে ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন দিয়ে গেলেন বোধহয় এই মুহূর্তে ভারতীয় টেনিসের দু’টো জ্বলন্ত বিষয়ের উপর নিজস্ব বিশ্লেষণ, ‘‘সামনের জুলাইয়ে আমাদের দেশের কোর্টেও দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানো কিন্তু কঠিন হবে। তার পরে রিও অলিম্পিক্সেও টেনিসে পদক জেতা খুব কঠিন ভারতের। যেটা নিয়ে সবার আশা সেই মিক্সড ডাবলসে সানিয়ার পার্টনার রোহন, না লিয়েন্ডার সেটা ঠিক করাই তো একটা বড় বিষয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy