জুটি: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধওয়নের দাপট। রবিবার দুবাইয়ে। পিটিআই
এশিয়া কাপ
পাকিস্তান ২৩৭-৭ (৫০)
ভারত ২৩৮-১ (৩৯.৩)
পাকিস্তানের সঙ্গে রবিবার দুপুরে টস হওয়ার অনেক আগেই ‘বাউন্সার’টা ধেয়ে এসেছিল ভারতের দিকে।
বোলারের নাম? ইমরান খান!
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শনিবার ভারত বিদ্বেষী যে টুইট করেছেন, সেটা কোনও বিষাক্ত বাউন্সারের চেয়ে কম নয়। অতীতে ইমরানের বাউন্সার অনেক ব্যাটসম্যানকেই সমস্যায় ফেলে দিত। কিন্তু এ বার ছবিটা অন্য। একটা টুইটের জেরে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্ক জোড়া লাগার বদলে কতটা ভাঙল, সেই প্রশ্ন এখন ইমরানকে সামলাতে হবে।
টুইটের উত্তাপ এত বেশি যে মরুশহরও গরম হতে শুরু করেছে। যার জেরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এহসান মানিকে নামতে হল মাঠে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারত-পাক ম্যাচ চলার ফাঁকে সাংবাদিকদের বোঝাতে হল, ক্রিকেট আর রাজনীতিকে দয়া করে এক করবেন না।
ইমরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাশে পাচ্ছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজনদের। কিন্তু বাইশ গজে বাউন্সার দিতে গিয়ে পাক পেসারদের যে হাল হয়েছে, তাতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর লোক সম্ভবত মঙ্গলগ্রহেও পাওয়া যাবে না।
মহম্মদ আমির। গত বারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে তিন উইকেট নেওয়া নায়ক। হাসান আলি— ওই প্রতিযোগিতার সেরা বোলার। শাহিন শাহ আফ্রিদি, ছ’ফুট ছ’ইঞ্চি উচ্চতার ভয় ধরানো চেহারা। তা, এঁরা যখন মাটি কাঁপিয়ে ছুটে আসছিলেন, দূর থেকে দেখে ভয় লাগছিল ঠিকই। কিন্তু বাইশ গজে যে দুই ভারতীয় ওপেনার হেলমেট আর হৃদয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁদের মনে ভয় বলে কোনও বস্তু ছিল না। তাঁরা অনায়াস ঔদ্ধত্যে একের পর এক বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে লাগলেন। বেশ কিছু তো উড়ে গেল গ্যালারিতে।
দুবাইয়ের এই পিচটাকে দেখে একটা সময় মনে হয়েছিল, মন্থর হবে, যত সময় যাবে স্ট্রোক খেলা কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু রোহিতরা সেই ধারণা স্রেফ পারস্য উপসাগরে ছুড়ে ফেলে দিলেন। রোহিত (১১১ ন.আ.), ধওয়ন (১১৪) সেঞ্চুরি করলেন, এ তথ্যটা শুকনো পরিসংখ্যান। যে ভঙ্গিতে করলেন, তাতে বিপক্ষ দলের বোলারেরা বাকি পাঁচ দিন ঘুমোতে পারবেন কি না, সন্দেহ। তবে রোহিতের নামের পাশে গোটা কয়েক পরিসংখ্যানও জ্বলজ্বল করছে। ১৮১ ইনিংসে সাত হাজার করলেন ওয়ান ডে-তে। ব্রায়ান লারার চেয়ে দুটো ইনিংস কম খেলে। হয়ে গেল ১৯ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেরা ওপেনিং জুটিটাও (২১০ রান) দেখা গেল এ দিন।
সুপার ফোরের পর পর দুটো ম্যাচ জিতে নিশ্চিত ভাবে ফাইনালে চলে গেল রোহিতের ভারত। কারণ অন্য ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিল আফগানিস্তান। ভারতের নেট রান রেট এখন যেখানে পৌঁছছে, সেখান থেকে ফাইনালে না যাওয়াটা মরুশহরে আগামী চব্বিশ ঘণ্টায় প্রবল বৃষ্টি হওয়ার মতোই ব্যাপার হবে! এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তানের বোলিং ভাল, না ব্যাটিং, এই নিয়ে অনেক তর্ক হয়েছিল। এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার পরে প্রশ্নটা বদলে দাঁড়িয়েছে, এই পাকিস্তানের কোনটা বেশি খারাপ— বোলিং না ব্যাটিং? নাকি ফিল্ডিং? রোহিত যখন ১৪ রানে, তাঁর সহজতম ক্যাচ ফেললেন ইমাম উল হক। প্রথম ভারত ম্যাচে ভাইপো ইমামের ব্যাটিং দেখে যদি তাঁকে থাপ্পড় কষাতে ইচ্ছে করে থাকে ইনজামাম উল হকের, তা হলে রোহিতের ক্যাচ ছাড়া দেখে এ বার নিজের চুল ছিড়তে পারেন কাকা।
আরও পড়ুন: আগের জয় ভুলে মাঠে নেমেছিলাম, ম্যাচ জয়ের পর বললেন রোহিত
পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পরভেজ মুশারফের দুবাইয়েই অফিস। রবিবারের ভারত-পাক লড়াই দেখতে মাঠে হাজির ছিলেন তিনি। বিরতিতেই মাঠ ছাড়ায় দেশের লজ্জার হারটা আর দেখতে হয়নি। মুশারফ অন্তত সামান্য হলেও পাক প্রতিরোধের ছবি একটু দেখতে পেয়েছেন। যেখানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে কিছুটা লড়াই করেছিলেন শোয়েব মালিক আর সরফরাজ। এই দুইয়ের জন্যই আগের ম্যাচের চেয়ে বেশি রান তোলে পাকিস্তান। তাতে অবশ্য লাভের কিছু হয়নি।দশ ওভার তিন বল আগে ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পর গ্যালারিতে যখন ভারতের জাতীয় পতাকা উড়ছে, সাউন্ড সিস্টেমে ভেসে আসছিল, ‘বন্দে মাতরম’। ঠিক ওই সময় প্রেস বক্সে কে যেন বলে উঠলেন, ‘‘পাকিস্তানকে গ্রুপ লিগে আট উইকেটে, সুপার ফোরে নয় উইকেটে হারাল ভারত। এ বার ফাইনালে পেলে কি দশ উইকেটে জিতবে রোহিত শর্মারা?’’
সত্যি, এ রকম এক তরফা প্রাধান্য এর আগে কোন প্রতিযোগিতায় দেখা গিয়েছে, তা মনে করা কঠিন।
তবে একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল। এই ম্যাচ চলাকালীন ডিনার রুমের একটা দৃশ্য। সামনে মাটন বিরিয়ানির বড় পাত্রটা দেখে এগিয়ে গিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। কিন্তু বিরিয়ানিতে একটাও মাটনের টুকরো খুঁজে না পেয়ে হতাশই হতে দেখা গেল তাঁকে। সত্যিই তো, মাটন বিরিয়ানিতে মাংসের টুকরো না থাকলে সেটা আর কীসের বিরিয়ানি।
সে রকমই একটু লড়াই না হলে সেটা আর কীসের ক্রিকেট! তা সে শাসক দলের নাম যতই ভারত হোক না কেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy