Advertisement
E-Paper

রেকর্ড করে শটপাটে সোনা তাজিন্দরের

তাজিন্দরপালের বয়স তেইশ। পঞ্জাবের মগার বাসিন্দা। বাড়ির সবাই কৃষক। ছোটবেলায় ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার আগ্রহে শটপাটে চলে আসেন। ফেডারেশন কাপে পদক জিতে প্রথম বার তিনি পাদপ্রদীপে আসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩০
সফল: সোনা জয়ের পথে শটপাটার তাজিন্দার। শনিবার জাকার্তায় সপ্তম সোনা জিতল ভারত। এএফপি

সফল: সোনা জয়ের পথে শটপাটার তাজিন্দার। শনিবার জাকার্তায় সপ্তম সোনা জিতল ভারত। এএফপি

পঞ্জাবের এক হাসপাতালে তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাই কাজটা নিছক জাকার্তায় শটপাটের যুদ্ধ ছিল না তাজিন্দরপাল তুরের। নিজের মনটাকে যতটা সম্ভব শক্ত করে তাঁকে লড়তে হয়েছে। সেই অবিশ্বাস্য যুদ্ধে সাফল্যও এল। অ্যাথলেটিক্স থেকে ভারতকে সোনা দিলেন তাজিন্দরপাল। শটপাটে এশিয়ান গেমসে রেকর্ড করে তিনি ছুড়লেন ২০.৭৫ মিটার। এই ইভেন্টে তাজিন্দরপাল এতটাই দাপট দেখালেন যে প্রথম থ্রো থেকেই তাঁর ধারেকাছে কাউকে দেখা যায়নি। প্রথম বার তিনি ছোড়েন ১৯.৯৬ মিটার। দ্বিতীয় বার ১৯.১৫ মিটার। তবে তৃতীয়টি ফাউল হয়ে যায়। আর দ্বিতীয় রাউন্ডও তিনি শুরু করেন ১৯.৯৬ মিটারে। এবং নির্ণায়ক থ্রো তো এশিয়ান গেমসের রেকর্ড ম্লান করে দিল!

তাজিন্দরপালের বয়স তেইশ। পঞ্জাবের মগার বাসিন্দা। বাড়ির সবাই কৃষক। ছোটবেলায় ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবার আগ্রহে শটপাটে চলে আসেন। ফেডারেশন কাপে পদক জিতে প্রথম বার তিনি পাদপ্রদীপে আসেন। তার পর একে একে জাতীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য। বর্তমানে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মী। গত বছর ভুবনেশ্বরে এশীয় অ্যাথলেটিক্স ও এশীয় ইন্ডোর মিটে তিনি রুপো জেতেন। আন্তঃরাজ্য মিটে সোনা। এই মুহূর্তে তিনিই এশীয় সেরা। তবে কমনওয়েলথ গেমসে অষ্টম হয়ে হতাশ করেন। এবং তার পরই এশিয়াডে এই অসাধারণ সাফল্য। গেমসে আগের রেকর্ডটি ছিল ওম প্রকাশ কারহানার। তিনি শটপাট ছুড়েছিলেন ২০.৬৯ মিটার।

সোনা জিতে তাজিন্দর বলেছেন, ‘‘আমার একটাই লক্ষ্য ছিল। ২১ মিটার অতিক্রম করা। বিশ্বাস করুন সোনার কথা মাথাতেই রাখিনি। তবে সোনা পেয়ে তো খুশি হবই। তার উপর জাতীয় রেকর্ডও ভাঙলাম। আসলে গত দু’তি বছর ধরেই এই রেকর্ডটা ভাঙার জন্য খাটছিলাম। শেয পর্যন্ত এখানে সেই মুহূর্তটা এল।’’ আবেগাপ্লুত তাজিন্দরের আরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘গত দু’বছর ধরে আমার বাবা ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। কিন্তু আমার পরিবারের কেউ আমাকে এটা নিয়ে ভাবতে দেয়নি। যাতে খেলা থেকে আমার মন সরে না যায়, তার জন্য ওরা সব করেছে। আজ ওদের সেই সব ত্যাগের পুরস্কারটাই আমি পেলাম।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘জানেন, আমার বন্ধুরা আমায় বাবাকে দেখতে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে দিতে চায়নি। হাসপাতাল ভুলে যান। ধরমশালায় তৈরি হওয়ার জন্য নিজের বাড়িতে পর্যন্ত যাইনি কত দিন। এ বার সবার আগে বাবার কাছে যাব। দু’দিন থাকবও। তার পর নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হবে আমার।’’

আরও পড়ুন: হ্যাটট্রিক করে হকিতে শেষ চারে মেয়েরা

এমনিতে এশিয়াডের সপ্তম দিন ভারত তিনটি ব্রোঞ্জও জিতেছে। তিনটিই স্কোয়াশে। তবে সেটা খুব একটা গৌরবের নয়। কারণ দীপিকা পাল্লিকাল, জ্যোৎস্না চিনাপ্পা ও সৌরভ ঘোষাল ব্রোঞ্জ পেয়েছেন সেমিফাইনালে হেরে। এ দিকে, পুসারলা ভেঙ্কট সিন্ধু ও সাইনা নেহওয়াল এশিয়ান গেমস ব্যাডমিন্টনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন শনিবার। দু’জনই জিতেছেন স্ট্রেট গেমে।

অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী সিন্ধু খেললেন স্থানীয় মেয়ে, বিশ্বের ২২ নম্বর মারিসকা তানজুনের সঙ্গে। এই ম্যাচের আয়ু ৩৫ মিনিট। সিন্ধু হাসতে হাসতে জিতলেন ২১-১২, ২১-১৫ গেমে। সহজে জিতেছেন কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী সাইনাও। বিশ্বের ৪০ নম্বর ফিত্রানিকে তিনি হারালেন ২১-৬, ২১-১৪ গেমে।

সাইনা, সিন্ধু দু’জনই বলেছিলেন, ইন্দোনেশীয়রা ঘরের মাঠে খেলছেন বলে প্রচুর জনসমর্থন পাবেন। যা ভারতীয়দের কাছে সব সময়ই চাপের ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই হল না। সিন্ধুরা জিতলেন অনায়াসে।

কমনওয়েলথ গেমসে রুপোজয়ী ভারতীয় ডাবলস জুটি সাত্ত্বিকসাইরাজ রানিকরেড্ডি এবং চিরাগ শেট্টি কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডেই ছিটকে গেলেন। তাঁদের ২১-১৭, ২১-১৯, ২১-১৭ হারিয়েছেন কোরীয় জুটি চোই সলগিউ-মিন হিউক ক্যাং।

এ দিকে ফেত্রিয়ানিকে হারিয়ে সাইনা বলেছেন, ‘‘সন্দেহ নেই সহজেই জিতলাম। কিন্তু ফেত্রিয়ানি প্রতিপক্ষ হিসেবে মোটেই সহজ ছিল না। এখানে দলগত খেলায় ওকুহারার (নজোমি) বিরুদ্ধে ও রীতিমত লড়াই করেছিল। আজও বেশ কয়েক বার লম্বা র‌্যালি হয়েছে। দেশবাসীর সমর্থন তো সারাক্ষণই পেয়েছে। তাই আমার ভিতরে একটা স্নায়ুর চাপ ছিলই।’’ তাঁর আরও কথা, ‘‘পরিবেশটা অনেকটা ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচের মতো হয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল, একজন না, কয়েক হাজার মানুষের বিরুদ্ধে খেলছি। তবে পয়েন্ট হারাতে থাকলে কখনও কখনও ওরা আমাকেও উৎসাহ দিয়েছে। যেটা আমার বেশ ভাল লেগেছে। ’’

সাইনা আরও জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ায় এর আগে তিনি বহু বার খেলেছেন। তাই সেখানকার পরিবেশ কেমন তিনি ভাল মতোই জানতেন। সঙ্গে বলেছেন, ‘‘এশিয়ান গেমসের মতো প্রতিযোগিতায় খেললে সব সময়ই একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়। তাই নিজের সঙ্গে নিজেরও একটা লড়াই চলতে থাকে। এখানেও সেটা হচ্ছে। আপাতত আমার লক্ষ্য মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের খেলাটা খেলে যাওয়া। সে ভাবে খেলছিও। আশা করছি শেষ পর্যন্ত ভালই হবে।’’

এ দিন মেয়েদের তিরন্দাজির রিকার্ভে ভারত ৫-৩ হারিয়েছে মঙ্গোলিয়াকে। এই একই বিভাগে পুরুষরা জিতেছে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে। পুরুষ ও মেয়েদের ব্রিজে ভারতের পুরুষ ও মহিলা দল সেমিফাইনালে উঠেছে। মেয়েদের বক্সিংয়ের লাইট ৬০ কেজি বিভাগে জিতেছেন পবিত্রা।

Asian Games 2018 Shot Put Gold Tejinder Pal Singh Toor India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy