Advertisement
E-Paper

‘বুড়োরা’ সফল হতে পারেন প্রমাণের লড়াই ফোরলানের

থিয়েরি অঁরি আজ মঙ্গলবার শহরে আসছেন কয়েক ঘণ্টার শুভেচ্ছা সফরে। ফ্রান্সের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে কলকাতা-মুম্বই ম্যাচ দেখবেন। পুরস্কার দেবেন। খেলার আগে পরিচিত হবেন দু’দলের প্লেয়ারের সঙ্গে। দিয়েগো ফোরলানের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় অঁরি একটা রসিকতা করলে হয়তো অবাকের কিছু হবে না।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৪
মহাপ্রস্তুতি। চব্বিশ ঘণ্টা আগের ফোরলান এবং মলিনা-পস্টিগা। ছবি: উৎপল সরকার

মহাপ্রস্তুতি। চব্বিশ ঘণ্টা আগের ফোরলান এবং মলিনা-পস্টিগা। ছবি: উৎপল সরকার

থিয়েরি অঁরি আজ মঙ্গলবার শহরে আসছেন কয়েক ঘণ্টার শুভেচ্ছা সফরে।

ফ্রান্সের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে কলকাতা-মুম্বই ম্যাচ দেখবেন। পুরস্কার দেবেন। খেলার আগে পরিচিত হবেন দু’দলের প্লেয়ারের সঙ্গে।

দিয়েগো ফোরলানের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় অঁরি একটা রসিকতা করলে হয়তো অবাকের কিছু হবে না। বিস্মিত মুখ নিয়ে তিনি প্রশ্ন করতে পারেন, ‘‘আমি তো কবেই অবসর নিয়েছি, টাকা কামানোর জন্য তুমি এখনও…!’’ ফোরলান বলেছেন, অঁরি তাঁর বন্ধু। তো ‘বন্ধু’কে আজ ম্যাচের আগে এই অমোঘ প্রশ্নটা ‘উপহার’ দেবেন কি না, সেটা সেই মুহূর্তের জন্যই তোলা থাক।

কিন্তু ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তো যেন সেটার উত্তরই ঘুরিয়ে দিয়ে গেলেন জোসে মলিনা। আটলেটিকো দে কলকাতা কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ফোরলানের জন্য কি আপনার আলাদা কোনও ভাবনা থাকছে? সুভদ্র স্প্যানিশ হাসতে হাসতে বলে দিলেন, ‘‘ফোরলানের বয়স তো এখন মাত্র সাঁইত্রিশ। মুম্বই ওকে প্রচুর টাকা দিয়ে নিয়েছে। হয়তো এ বার ভয়ঙ্কর হবে।’’

তাঁর ‘শো পিস’-কে নিয়ে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করে গিয়েছেন বিপক্ষ কোচ— মিডিয়ার মুখোমুখি বসার আগে আলেকজান্দ্রো গুইমারেসের কানে হয়তো তুলে দিয়েছিলেন কেউ। ফোরলান প্রসঙ্গ উঠতেই মুম্বই কোচের গলায় যেন অতি-উচ্ছ্বাসের ঢেউ। ‘‘ফোরলান হচ্ছে আমার টিমের আয়না। ও লেজেন্ড। ওর দিকে তাকিয়ে সব ফুটবলার উদ্বুদ্ধ হয়।’’

কটাক্ষ, না আয়না— কোনটা ছয় বছর আগের বিশ্বকাপ সেরার জন্য বরাদ্দ হবে শেষ পর্যন্ত, সেটার খোঁজ দিতে মঙ্গলবারের রাতের রবীন্দ্র সরোবর সেরা মঞ্চ হিসেবে হাজির। আইএসএল থ্রি-র একমাত্র অপরাজিত টিমকে হেলিয়ে দিতে ফোরলানকেই যে পিভট বাছছেন তাঁর দলের কোস্টারিকান কোচ।

দেল পিয়েরো, রবের্তো কার্লোস, আনেলকা, ডেভিড জেমস—আইএসএল খেলতে এসে সফল হননি কোনও ‘বুড়ো’ তারকাই। এ বার কি ফোরলানের পালা? চোটের কবলে পড়ে দুটো ম্যাচ খেলেননি এর মধ্যেই। সোমবারও অনুশীলনে খোঁড়াচ্ছিলেন। সবে চোট সারিয়ে ফিরেছেন, বোঝা যাচ্ছিল হাঁটাচলায়।

উইকিপিডিয়া দেখাচ্ছে, মঙ্গলবার গ্যালারিতে বসে খেলা দেখা অঁরির বয়স ৩৯। কোচিং করাচ্ছেন বেলজিয়ামে। আর ফোরলান ৩৭। মুম্বই সিটি এফসি-র মার্কি হয়ে এখনও যিনি ‘ভাল’ খেলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির নামী-দামি বিদেশি ফুটবলারদের হাল দেখে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আইএসএল কি ‘বুড়ো’ মার্কিদের খোয়াড়। ফোরলান তার উলটপুরাণ ঘটাতে পারেন কি না সেটার দিকে তাকিয়ে সবাই। ঝাঁকড়া চুলের স্ট্রাইকারের কাছেও এটা চ্যালেঞ্জ।

সাড়ে ছয় কোটি পকেটস্থ করেছেন। আগের চেয়ে অনেকটাই স্লথ হয়ে গেলেও ভাল খেলার চেষ্টা করবেন যে ফোরলান সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ দিন মলিনার হাবভাব দেখে মনে হল, উরুগুয়ের তারকা বিশ্বকাপার নয়, তাঁকে ভাবাচ্ছে বরং সনি নর্ডি আর দিফেদেরিকোর উইং প্লে। কলকাতার নতুন কোচের একটা কড়া নির্দেশ আছে তাঁর কোচিং স্টাফের জন্য— প্রতিদিন সন্ধ্যে সাতটায় যে যেখানেই থাকুক, একসঙ্গে বসে আইএসএল ম্যাচ দেখতে হবে টিভিতে। সেখানে এটিকের অ্যানালিস্ট থেকে ফিজিও সবার হাজির থাকা বাধ্যতামূলক। টিম সূত্রের খবর, সেখান থেকেই মুম্বইয়ের শক্তি-দুর্বলতা মাপার পর বেরিয়েছে, ফোরলান নয়, মুম্বইয়ের আসল শক্তি তাদের উইং, মাঝমাঠ আর কিপার। ‘‘শক্তিশালী টিম। পাওয়ার আছে। দুটো উইংয়ের উপর নজর থাকবে আমাদের,’’ সে জন্যই হয়তো বলে গেলেন মলিনা। টিমে সামান্য পরিবর্তন ঘটাবেন জানিয়ে কলকাতার কোচের ইঙ্গিত, তাঁর দলের মার্কি হেল্ডার পস্টিগাকে আঠারো জনের দলে রাখার কথা ঘুরছে মাথায়।

লিগের পয়েন্ট টেবল দেখাচ্ছে, কলকাতা যখন উর্ধমুখী, তখন মুম্বই নিম্নগামী। শেষ ম্যাচে দিল্লি-জয় করেছেন হিউমরা। সেখানে ফোরলানরা হেরেছেন গোয়ার কাছে। ফোরলান নিজে জঘন্য খেলেছিলেন। এটা তো আপনার টিমের প্লাস পয়েন্ট! যা শুনে হিউম-দ্যুতিদের কোচের সপাট জবাব, ‘‘ওল্ড ট্র্যাফোর্ড থেকে কোচি বা কলকাতা যেখানেই নামব জেতার চেষ্টা করব। এটাই আমার একমাত্র স্ট্র্যাটেজি। জিততে না পারলে ড্র-ও ভাল। কিন্তু হারতে চাই না। কালও সেটাই লক্ষ্য।’’ দিল্লিকে হারিয়ে মলিনার গলায় হঠাৎ-ই বাড়তি আত্মবিশ্বাস।

সেই বিশ্বাসে জল ঢালতে অবশ্য দিনভর নানা অঙ্ক কষছেন ফোরলানদের কোচ। কথা শুনলেই সেটা মালুম হচ্ছে। ‘‘মুম্বইয়ে হোম ম্যাচে কলকাতার সঙ্গে ড্র করেছিলাম ঠিকই কিন্তু সে দিন আমরা শেষ পঁয়তাল্লিশ মিনিট দশ জনে খেলেছি। সেই সুযোগটা ওরা নিয়েছিল। এ বার আসল পরীক্ষা। প্রমাণ হবে কারা সেরা?’’ কোস্টারিকাকে পরপর দু’টো বিশ্বকাপে কোচিং করানো গুইমারেস শান্ত গলায় যখন এ কথা বলছেন, তখন মাঠে এটিকের অনুশীলন চলছে। মিডিয়া রুমে আসার আগে গুইমারেস এক বার উঁকি মেরে দেখেও আসেন সেটা। নিশ্চয়ই তাঁর চোখে পড়েছে কৃত্রিম মানব দেওয়াল তৈরি করে হিউম-জাভি লারাদের ফ্রি কিক অনুশীলন। মুম্বইয়ের অনুশীলনেও কি তাই সেট পিসের উপর জোর? কখনও ফোরলান, কখনও সনি, মেরেই চলেছেন ফ্রি কিক, কর্নার। দু’জনেই কিন্তু নিখুঁত।

শীত আসছে কয়েক দিন ধরে জানান দিচ্ছে ভোরের শহর। দীপাবলির আলো জ্বলা শুরু হয়ে গিয়েছে বাড়িতে বাড়িতে। উৎসবের মেজাজ সরিয়ে রেখে এখনও আইএসএলে মজেনি কলকাতা। ‘আমার বুকে এটিকে’ স্লোগানেও মেতে ওঠেনি শহরের ‘রোজি ব্ল্যাঙ্কো’-রা। এই আবহে মলিনার মগজাস্ত্র ছয় বছর আগের সোনার বলের মালিককে ‘বাপি বাড়ি যা’ করতে পারে কি না সেটাই দেখার।

তবে এটাও ঘটনা, পাঁচ সপ্তাহ কলকাতায় কাটিয়েই হাবাসের উত্তরসুরি বুঝে গিয়েছেন, দিল্লির পরে মুম্বই-জয় করতে পারলে হাবাস-হাবাস আওয়াজটা আরও ফিকে হয়ে যাবে গ্যালারিতে। আরও আলো এসে পড়বে মলিনার উপর। দীপাবলির আলোর চেয়েও বেশি হয়তো!

Mumbai FC ATK ISL
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy