পেনাল্টি বাঁচাচ্ছেন দেবজিৎ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: টুইটার
আটলেটিকো দে কলকাতা-২ (হিউম, লারা)
দিল্লি ডায়নামোস-২ (মিলন, মালুদা)
ম্যাচটা শেষ হওয়ামাত্র টিভিতে দেখলাম ক্যামেরা ক্লোজ শটে ধরেছে মালুদার মুখ। গ্যালারির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাঠ ছাড়ছিল ফরাসি বিশ্বকাপার।
উল্টো দিকে এটিকের ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ফুটবলারদের চোখমুখেও আফসোস। টিভির পর্দায় কলকাতা এক ঝলকে হিউমদের দেখেই যেটা বোঝা যাচ্ছিল। কলকাতার কানাডিয়ান স্ট্রাইকার এ বারের আইএসএলে দিল্লির বিরুদ্ধে রবীন্দ্র সরোবরেও গোল করেছিল। এ দিন অ্যাওয়ে ম্যাচটাতেও করল। কিন্তু সে দিনের মতো তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে ব্যর্থ।
হিউমদের আফসোসের আমার মতে আরও একটা বড় কারণ থাকতে পারে। প্রথম লেগে এটিকে যে রকম তরতর করে এগোচ্ছিল, ফিরতি লেগে সেই গতিতে হঠাৎ-ই যেন ব্রেক পড়েছে। শেষ তিনটে ম্যাচে একটা হার, একটা জয়, আর রবিবারের ২-২ ড্র-তে মাত্র চার পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় ফিরতে হচ্ছে এটিকে-কে। আনন্দবাজারেই পড়েছিলাম, এই তিন অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে আটলেটিকো কোচ মলিনা সাত পয়েন্ট ঝুলিতে ঢুকছে ধরে রেখেছিলেন। সেখানে তিন পয়েন্টের ঘাটতি থেকে গেল। দিন কয়েক আগে হাবাসের পুণের বিরুদ্ধে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’ হারের পর এ দিন রাজধানীতে দু’পয়েন্ট হাতছাড়া করে লিগ টেবলে চার নম্বরে নেমে গিয়েছে কলকাতা। তাও আবার প্রায় গোটা দ্বিতীয়ার্ধটা জামব্রোতার দিল্লিকে দশ জনে পেয়ে। দু’-দু’বার ম্যাচে নিজেরা এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও!
গোল পেলেন লারা। ছবি: আইএসএল
কিন্তু দিল্লি ডায়নামোসের মার্কি মালুদার করুণ চোখের কারণ? আসলে লিগে একটা সময় ধুঁকছিল ওদের টিম। সেখান থেকে এ দিন টুর্নামেন্টের দশ রাউন্ডের শেষে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে দিল্লি-ই। একইসঙ্গে এখনও ঘরের মাঠে অপরাজিত ওরা। তবু এটিকের সঙ্গে ম্যাচের প্রায় অর্ধেকটা একজন কম নিয়ে যে উজ্জীবিত ফুটবলটা খেলল দিল্লি, তার পরে কেন লুইস, সৌভিক চক্রবর্তীরা ম্যাচ ড্র করে ফেরায় ওদের হতাশাটা স্বাভাবিক। হাফটাইমের পরে মালুদা পেনাল্টি কিকটা নষ্ট না করলে এ দিন তো জিতেই যেত দিল্লি!
ম্যাচের শুরুতেই হিউমের গোল। তার পর আটলেটিকোর আসল শক্তি রাইট উইঙ্গার সামিঘ দ্যুতির চোট পেয়ে বাইরে চলে যাওয়া। দু’বার হলুদ কার্ড দেখে দিল্লি স্ট্রাইকার বাডজির মার্চিং অর্ডারে জামব্রোতার দলের দশ জন হয়ে পড়া। মালুদার পেনাল্টি মিস। ঘটনাবহুল খেলায় একের পর এক ম্যাচ ঘোরানো মুহূর্ত। তবে আমার মতে সেরা মুহূর্ত দিল্লির মিলন সিংহের গোলটা। এটিকে বক্সের বাইরে থেকে যে শটে গোলটা করে গেল ভারতীয় মিডিও, তা দেখার জন্যই তো ফুটবল মাঠে মানুষ ভিড় করে। ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে যে গোলটা দেখে আমারও গর্ব হচ্ছে।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন ম্যাচের সেরা হয়েছে মিলন। কিন্তু আমার মতে এই ম্যাচের দু’জনের সেরা ফুটবলারের চেকটা আধাআধি পাওয়া উচিত ছিল। আর সেই দুইয়ের মধ্যে মিলন নেই। বরং তারা দু’দলের দুই বাঙালি ফুটবলার। কলকাতার গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার আর দিল্লির সৌভিক চক্রবর্তী। আদতে হোল্ডিং মিডফিল্ডার সৌভিককে এ দিন লেফট ব্যাকে খেলালেন দিল্লি কোচ জামব্রোতা। কিন্তু একবারও দেখে মনে হয়নি সৌভিক ওখানে অনভ্যস্ত। যেমন ট্যাকল, তেমনই ডিস্ট্রিবিউশন দেখলাম আগাগোড়া।
ম্যাচের নায়ক। ছবি: আইএসএল
আর দেবজিৎ? ইদানীংকাল ধরলে সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ নন্দী, সুব্রত পালের পর ফের দেশ আরও এক সেরা গোলকিপার পেয়েছে বাংলা থেকে। সন্তোষ ট্রফিতে দেবজিতের সঙ্গে বাংলা দলে খেলেছি। ওর কিপিংয়ের বড় গুণ অ্যান্টিসিপেশন আর অদম্য সাহস। প্র্যাকটিসে প্রচণ্ড সিরিয়াস। কলকাতায় এসেও দিল্লি ম্যাচের রাশ হাতে রেখে পেনাল্টি থেকে গোল করতে না পেরে হেরেছিল। এ দিন তফাতের মধ্যে ড্র রেখেছে ম্যাচ। রবিবার দেবজিৎ যে দক্ষতার সঙ্গে মালুদার পেনাল্টি বাঁচিয়ে কলকাতার মানরক্ষা করল তার পরে মনে হচ্ছে, জাতীয় দলে সুব্রত, গুরপ্রীতদের উত্তরসূরি পেয়ে গিয়েছি আমরা।
এটিকে কোচ মলিনা রাইট ব্যাকে প্রীতমকে বসিয়ে প্রবীর দাসকে নামান। তাতেও মলিনার দলের ব্যাক ফোর এতটাই নড়বড় করল যে, বলপজেশন রেখেও দিল্লিকে হারাতে পারল না। ওদের আরও একটা সমস্যা পস্টিগার ফিটনেস। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে পস্টিগা একা স্ট্রাইকার। কিন্তু খেলা পাঁচ মিনিটও না গড়াতে ওকে ঘুরঘুর করতে দেখলাম মাঝমাঠে। ফলে দিল্লি ডিফেন্স অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পেরেছে দশজন হয়ে পড়েও। তা ছাড়া আমি মনে করি, পস্টিগা-হিউম এটিকের আক্রমণে থাকা মানে বয়সের ভারে দু’জনের কেউই নিচে নেমে ডিফেন্সকে সে ভাবে সাহায্য করতে পারছে না। আজকের ফুটবলে যে গতিতে আক্রমণে উঠতে হয় সেই গতিতে ট্র্যাক ব্যাক-ও করতে হয়। এটিকের সেটা না হওয়ায় গত কয়েকটা ম্যাচে ওদের মিডল আর ডিফেন্সিভ থার্ডের উপর চাপ বাড়ছে। এ দিনও তাই। ম্যাচে পিছিয়ে থেকেও দশজনের দিল্লি যখনই আক্রমণে এসেছে, তখনই চাপে ফেলেছে কলকাতাকে। মিলনের গোলটার সময় কেউ ওর গায়ে ভিড়তে পারল না। মালুদাও বল ধরে হেলায় টার্ন নিয়ে গোল করে গেল।
এই সমস্যা থেকে খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে হবে কলকাতাকে। আর মিস্টার মলিনা, আপনার দলের ব্যাক ফোরেও এত ঘনঘন বদল চলবে না কিন্তু!
আটলেটিকো দে কলকাতা: দেবজিৎ, প্রবীর, সেরেনো, তিরি, রবার্ট, বোরহা, জুয়েল (বিদ্যানন্দ), দ্যুতি (লারা), হিউম (বেলেনকোসো), লালরিন্দিকা, পস্টিগা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy