Advertisement
E-Paper

মাস্টারদার শহরে বঙ্গ ক্রিকেটের সামনে আজ অপেক্ষায় অন্য বিপ্লব

সাকিব-আল-হাসানকে দেখলে মনে হবে, একটা স্বপ্নে ডুবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দেশ ওয়ান ডে সিরিজের তাজ টান মেরে নিয়ে নিচ্ছে, ভাবলেই কেমন বিভোর হয়ে যাচ্ছেন। ‘‘বড়, বিশাল বড় একটা ব্যাপার হবে এটা। এটা তো কখনও হয়নি। যা আপনি পাননি কখনও, সেটা যদি পাওয়া যায় তার ব্যপ্তিটা খুব বড় হয়।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৪
আরেকবার এই দৃশ্য দেখতে চাইছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি।

আরেকবার এই দৃশ্য দেখতে চাইছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি।

সাকিব-আল-হাসানকে দেখলে মনে হবে, একটা স্বপ্নে ডুবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দেশ ওয়ান ডে সিরিজের তাজ টান মেরে নিয়ে নিচ্ছে, ভাবলেই কেমন বিভোর হয়ে যাচ্ছেন। ‘‘বড়, বিশাল বড় একটা ব্যাপার হবে এটা। এটা তো কখনও হয়নি। যা আপনি পাননি কখনও, সেটা যদি পাওয়া যায় তার ব্যপ্তিটা খুব বড় হয়।’’
মাশরফি মর্তুজা মুগ্ধ। বঙ্গ-এক্সপ্রেসের ভেবে ভাল লাগছে যে, কঠিন পরিস্থিতিতে সহজ থাকতে শিখে গিয়েছে তাঁর টিম। যে ভাবে চাপের হিমশৈলের সামনে টুকরো না হয়ে তাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে টিম, দেখে বাংলাদেশ অধিনায়কের ভাল লাগছে। বলে ফেলছেন, ‘‘আমি দেখতে চেয়েছিলাম খারাপ পরিস্থিতিতে টিম কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করে। আর যে ভাবে আমার টিম। টিমমেটরা রিঅ্যাক্ট করল, একটা ভাল টিম সেটা করে।’’
আফ্রিকার সিংহদের দশা বড়ই বেগতিক। একে তো তামিম ইকবালকে কাঁধ দিয়ে গুঁতিয়ে রাইলি রুসো জরিমানার গর্তে ছটফট করছেন। তার উপর অধিনায়ক হাসিম আমলা! তিনি কী দরের ব্যাটসম্যান, বোলার-শাসনে সাধারণত কী ভূমিকা নিয়ে থাকেন, ক্রিকেটবিশ্ব জানে। তা দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানের দেখা যাচ্ছে, সময় বড়ই খারাপ। ব্যাট ধরলেই হাফসেঞ্চুরি, এমন একটা ধারণা তাঁকে নিয়ে প্রচলিত আছে ক্রিকেট-সার্কিটে। কিন্তু বর্তমানে যা চলছে, তা আজ পর্যন্ত তাঁকে কখনও দেখতে হয়নি। এত দীর্ঘায়িত হাফসেঞ্চুরি-খরা কখনও আসেনি জীবনে! ছ’টা ম্যাচ হয়ে গেল, একটাও আসেনি! আর বঙ্গ বোলারদের সামনে পড়ে যা অবস্থা, চট্টগ্রামে অভিশাপ যে কাটবে জোর দিয়ে কেউ বলতেও পারবে না।

টুকরো-টুকরো দৃশ্যপট। কিছু ছবি, কিছু কথা, কিছু তথ্য। ব্যক্তি, দেশ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু একটা অলিখিত বার্তা যেন ছড়িয়ে পড়ছে দু’শিবিরের ডেরা থেকে। প্রবল ভাবে মনে হচ্ছে, অ্যাডভান্টেজ বাংলাদেশ।

ঠিকই মনে হচ্ছে।

নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারত। এর পরেও যদি কেউ পুরনো বাংলাদেশের মানদণ্ডে নতুন বাংলাদেশকে মাপতে বসেন, ক্রিকেট-পাণ্ডিত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা উচিত। টিমটার নাম যতই দক্ষিণ আফ্রিকা হোক, যতই টিমে একটা আমলা, একটা মিলার, একটা রাবাদা থাকুন, তাঁরা যে কংক্রিটের প্রাচীর নন দেখিয়ে তো দিয়েছে বাংলাদেশ। বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কঠোর ক্রিকেটীয় সিস্টেমকেও সময়ে-সময়ে দুলিয়ে দিয়ে যেতে পারে আবেগ। যুদ্ধ থেকে এক রকম ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে সযত্নে লিখে ফেলা যেতে পারে ইতিহাস। কেউ যদি বলেন, বাংলাদেশ শেষ ম্যাচ জিতে শেষ বার সিরিজ জিতেছে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে, তা হলে স্ট্যাটসটা গুটিয়ে ফেলা ভাল। বুধবার কিন্তু নতুন পরিসংখ্যানের জন্মের প্রবল সম্ভাবনা নিয়ে নামবে টিমচা। সত্যি বলতে, আজ সাকিব যে স্বপ্ন দেখছেন। মাশরফিকে যে মুগ্ধতার মোড়কে মোহাচ্ছন্ন দেখাচ্ছে, তা কোনও ঠুনকো খড়কুটোর উপর দাঁড়িয়ে নেই। বরং গ্রানাইট পাথরের উপরে তৈরি হয়েছে বিশ্বাসের মাল্টিস্টোরিড।

কথা-টথা ছেড়ে দিন। সিরিজের দু’টো ম্যাচকে বিচার করে দেখুন। কোনও এক কাগসিও রাবাদার অভিষেকের হলকায় বাংলা প্রথম ম্যাচে পুড়ে গেলে দ্বিতীয়তে আফ্রিকার ক্রিকেট-অরণ্যকে ছারখার করে দিয়েছে টিম গেমে। দেড়শোর আশেপাশে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আটকে রাখার স্বপ্ন অনেক তাবড় তাবড় টিম দেখে। তারাও সেটা করতে পারলে গর্বিত বোধ করবে। বাংলাদেশ সেটা করে দেখিয়েছে। ব্যাট করে নেমে চাপে পড়েছিল, সৌম্য সরকারের আবির্ভাবে চাপ পদ্মার অতলে। শেষ পাঁচ ম্যাচ দেখুন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেখানে তিন জয়, দুই হার। বাংলাদেশেরও তাই। তিন জয়, দুই হার।

এর পরেও ও পার বাংলাকে পিছিয়ে রাখা সম্ভব?

মজার হচ্ছে, চট্টগ্রামের তৃতীয় তথা সিরিজের শেষ যুদ্ধের আগে যাবতীয় যা আলোচনা, চলছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘিরে। মোটেও সেটা তাদের পক্ষে খুব সুখকর নয়। বলা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে হলে তাদের টিমের ব্যালান্স ফেরাতে হবে। বুঝে নিতে হবে, কোন স্লটে কাকে দরকার। প্রতিভার অভাব নেই দক্ষিণ আফ্রিকায়। যোগ্য ক্রিকেটারেও নয়। সমস্যা হচ্ছে দল নির্বাচনে। বলা হচ্ছে, হাসিম আমলা যত দ্রুত সেটা বুঝতে পারবেন, যত তাড়াতাড়ি সেটা টিমে আমদানি করতে পারবেন তাঁর ও টিমের মঙ্গল। উল্টো দিকে বাংলাদেশ নিয়ে চর্চাটা দেখা যাক। ও দিকে বলাবলি চলছে, আর এক বার গর্জে উঠুক সৌম্য-তামিমরা। শেষ বারের মতো। তা হলে একটা স্বপ্নের বৃত্ত শেষ হবে। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন মহাশক্তির বিরুদ্ধে তিনটে সিরিজ, আর তিনটেই তখন পকেটে। আর হেরে গেলে? মোটেও সেটা অসম্মানের নয়। মোটেও সেটা বঙ্গ ক্রিকেটের বিস্তৃতির চওড়া হাইওয়েতে অনন্ত ট্র্যাফিক জ্যামের বাধা হবে না। ছোটখাটো স্পিড-ব্রেকার ধরা যেতে পারে।

কিন্তু স্বপ্নের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কে আর কবে স্বপ্নভঙ্গের কথা ভেবেছে? বাংলাদেশও বা ভাবতে যাবে কোন দুঃখে? বরং লাল-সবুজ রঙে মুখ রাঙিয়ে, হাতে দেশের পতাকা দুলিয়ে, গ্যালারি থেকে ব্যাঘ্রগর্জনের আওয়াজে প্রতিপক্ষকে ‘বধির’ করে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের শহরে আজ ঢুকবে বাংলাদেশ। ঢুকবে, মাস্টারদার শহরে অন্য বিপ্লবের সূচনা দেখতে।

ক্রিকেট-বিপ্লব!

bangladesh cricket revolution chittagong one day master da surya sen bangladesh cricket team MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy