উদাহরণ এক) চোখের সামনে আম্পায়ারিং ভিডিওতে নাকি দেখা যাচ্ছে, পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। বল স্টাম্পে যেতে যেতে পেয়ে গিয়েছে ব্যাটসম্যানের পা। আউট দিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব দেখেটেখে প্রশ্নকর্তার সংশ্লিষ্ট আম্পায়ারকে অবাক প্রশ্ন, এটা আউট হল কী ভাবে!
উদাহরণ দুই) আম্পায়ার্স রিভিউ কমিটির বৈঠকে গেলেই সদস্যদের পিঠ চাপড়ানি পাচ্ছেন এক বঙ্গ আম্পায়ার। তাঁকে নাকি বলাও হচ্ছে, ভাল কাজ করেছেন আপনি। আপনিই সেরা। আটত্রিশ র্যাঙ্ক হল। কিন্তু সেটাই যখন বোর্ডে ঘুরেফিরে হাতে এল, বেড়ে ওটা ছিয়াত্তর!
বোর্ডের আম্পায়ার্স রিভিউ কমিটিতে যে একুশে আইন চলছে, তারই নিদর্শন উপরের দুই উদাহরণ। যে কমিটির অদ্ভুত পরিচালনে গত তিন বছরে একটাও রঞ্জি ম্যাচ পাননি বাংলার কোনও আম্পায়ার! যে কমিটি নিয়ে অভিযোগ, শুধু দক্ষিণের আম্পায়ারদেরই রঞ্জি ট্রফিতে আম্পায়ারিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়। চলে একবগ্গা পক্ষপাতিত্ব। ভাল কাজ করলে শুধু মুখেই বলা হয়। র্যাঙ্কিংয়ে তার কোনও প্রতিফলন থাকে না।
এবং বেঙ্কটরাঘবনের নেতৃত্বাধীন এই রিভিউ কমিটি নিয়ে আপাতত অসন্তোষের ঝড় বঙ্গ আম্পায়ারমহলে। যা নিয়ে সরকারি অভিযোগপত্রও জমা দেওয়া হচ্ছে।
পুরো ঘটনাটা কী?
দেশের কোন আম্পায়ার রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ পাবেন, বা কে পাবেন দলীপ-দেওধরের মতো আরও উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ম্যাচ, তা ঠিক করে এই কমিটি। সাধারণত র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে থাকা আম্পায়ারকে দেওয়া হয় দলীপ-দেওধর বা রঞ্জির নকআউট পর্বের ম্যাচ। পরের জনা কুড়িকে দিয়ে করানো হয় রঞ্জি ট্রফি। এই মুহূর্তে চার জন বোর্ড আম্পায়ার আছেন বাংলা থেকে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র দুই আম্পায়ারের ভাগ্যে দলীপ-দেওধর দূরে থাক, ন্যূনতম একটা র়ঞ্জি ম্যাচও গত তিন বছরে জোটেনি। সত্রাজিৎ লাহিড়ী শেষ রঞ্জি ম্যাচ করিয়েছেন ২০১০ সালে। প্রেমদীপ চট্টোপাধ্যায় করিয়েছেন ২০১১-১২ মরসুমে। আর বাকিরা? থাক।
কাঠগড়ায় মূলত দু’জনকে তোলা হচ্ছে। কমিটির চেয়ারম্যান বেঙ্কটরাঘবন। এবং সদ্য প্রাক্তন সদস্য এভি জয়প্রকাশ। বেঙ্কটরাঘবনকে নাকি রিভিউয়ের পাওয়াই যেত না। তিনি দেশেই নাকি থাকতেন না। তিনি দেখতেনও না এত কিছু। অভিযোগ উঠছে, সব কিছু নাকি নিয়ন্ত্রণ করতেন শ্রীনি-প্রভাবিত জয়প্রকাশ। দাক্ষিণাত্যের একের পর এক আম্পায়ারের কাছে রঞ্জি ম্যাচ, দলীপ-দেওধর চলে যেত। বাংলা কিছুই পায়নি।
যে নিয়ে সরকারি অভিযোগও জমা পড়েছে। বোর্ডের ফিনান্স কমিটি সদস্য বিশ্বরূপ দে-কেও বঙ্গ আম্পায়ারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ব্যাপারটা দেখতে। বিশ্বরূপ বললেন, ‘‘অভিযোগটা ঠিকই। এটা ঠিক হয়নি। চেষ্টা করছি শুধরোনোর।’’ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বোধহয় প্রেমদীপের। তাঁকে নাকি বৈঠকের পর বৈঠকে গিয়ে শুনতে হয়েছে, আম্পায়ার হিসেবে তাঁর যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু র্যাঙ্ক সেটা বলত না। বরং একবার আইপিএলে পোস্টিং পেয়েছিলেন। একটা ম্যাচও পরিচালনা করেননি। অথচ কিছু না করেও র্যাঙ্ক নামতে নামতে ছিয়াশিতে চলে যায়! এই মুহূর্তেও দুই বঙ্গ আম্পায়ারের অবস্থা খুব ভাল নয়। প্রেমদীপের র্যাঙ্ক পঁয়তাল্লিশ। সত্রাজিতের সাতান্ন।
মূল অভিযুক্ত জয়প্রকাশকে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্যের রাস্তায় গেলেন না। বললেন, ‘‘আমি আর কমিটিতে নেই। এ সব অভিযোগের কোনও উত্তরও দেব না। বোর্ডকে জিজ্ঞেস করুন।’’ জয়প্রকাশের জায়গায় সদ্য এসেছেন হরিহরণ। আশা করা হচ্ছে, অবস্থা পাল্টাবে। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নন। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আবার কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে নতুন র্যাঙ্ক ঘোষণা হবে বলে খবর। র্যাঙ্ক মনঃপূত হলে ঠিক আছে। কিন্তু না হলে?
বৈঠকেই পারমাণবিক বিস্ফোরণের সম্ভাবনা কিন্তু এখন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy