গ্রেগ চ্যাপেল কি অ্যাডিলেডে বসে মুচকি হাসছেন?
একদা তারুণ্যের যে কর্কশ এবং পক্ষপাতমূলক নীতি নির্ধারণের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট মহল আজও তার মুখে চুনকালি মাখিয়ে রেখেছে। তারই হুবহু প্রতিধ্বনি ভারতের বিশ্বকাপ সম্ভাব্য তিরিশ নির্বাচনে।
টিমটা বাছল কে? সন্দীপ পাটিলের জাতীয় নির্বাচক কমিটি? ধোনি নিজে? রবি শাস্ত্রী? নাকি শ্রীনিবাসন? ভারতীয় ক্রিকেট মহলে টিম ঘোষণাত্তোর এই জল্পনাটাই ঘুরে বেড়ালো। এমনকী যাঁরা বাদ পড়লেন তাঁরাও বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে এটাই খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে গেলেন।
উত্তর—নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। তাঁর নির্দেশ মেনে নির্বাচকেরা গত বারের কাপজয়ী দলের পাঁচ জন নিয়মিত প্লেয়ারকে ছেঁটে ফেলার সাহস দেখাতে পারলেন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে এটা একেবারে বিরল ঘটনা যে কাপজয়ী দলের পাঁচ জন কি না পরের বিশ্বকাপে বাদ।
শ্রীনি দলে যুবনীতি আমদানি করতে এতই উত্সাহী যে দলীপ ট্রফিতে কেন যুবরাজ-হরভজনদের রাখা হল তা নিয়েও সপ্তাহ খানেক আগে নির্বাচকদের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। আজকের পর আরও সংশয় নেই যে আদিত্য বর্মারা যা-ই দাবি করুন, সর্বোচ্চ আদালত যা-ই কড়া মন্তব্য করুক, এখনও ভারতীয় ক্রিকেট শ্রীনির অঙ্গুলিহেলনেই চলে।
ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী চেয়েছিলেন ফর্ম ছাড়াও বিশ্বকাপ-ফিটনেস। ধোনি চেয়েছিলেন ফর্ম ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মাঠযোগ্য নিপুণ ফিল্ডিং ক্ষমতা। কিন্তু দু’জনের কেউ এমন শর্ত চাপিয়ে দেননি যে বীরুর কথা ভেবো না। কী যুবিকে নিও না। শ্রীনি বরং অনেক সরাসরি যে, আমরা ফিরে তাকাতে রাজি নই।
ক্রিকেটের পঞ্চকের মধ্যে জাহিরের বয়স সবচেয়ে বেশি—পঁয়ত্রিশ। সহবাগ চৌত্রিশ। এ ছাড়া বাকি তিন জনের বয়স মোটেও এত হয়ে যায়নি যে ওয়ান ডে ক্রিকেট থেকে চিরতরে বাতিল ঘোষণা হবেন! সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটাররা কেউ কেউ অবশ্য ভয়টা পাচ্ছিলেন আর তাই চাইছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়টা দল ঘোষণার আগে বেরিয়ে যাক। তাঁরা জানতেন শুধু শ্রীনির হাতে ছাড়া থাকলে বিচারের পরিণাম কী হবে? বৃহস্পতিবার এঁদেরই এক জন বললেন, হরভজন সিংহ দেশের প্রথম তিরিশ ক্রিকেটারের মধ্যে পড়ে না এটা বিশ্বাস করতে হবে? একটা দল গড়ে দিলেই হল!
প্রশ্ন হল বিশ্বকাপ বিবর্জিত অবস্থায় এ বার এঁরা কী করবেন? একাধিক ক্রিকেটার ভেবে রেখেছিলেন গণ অনশনের মতো তাঁরা গণ-অবসর নেবেন! যাতে একটা সমবেত প্রতিবাদ দেশব্যাপী ক্রিকেটমোদীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়— দেখুন আপনারা, আমাদের দেশে ক্রিকেট ঘিরে কী পরিমাণ অনাচার চলছে।
কিন্তু উত্তেজনার বশে অবসর নেওয়ার অধিকার আধুনিক ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত অস্ত্রের মধ্যে আর নেই। সে এখন অনেক অসহায়। এখন অবসর নেওয়ার আগে তাকে সাত-পাঁচ ভাবতে হয়। কথা বলতে হয় নিজের ম্যানেজারের সঙ্গে। নিজের স্পনসরের সঙ্গে। কারণ বাণিজ্যিক চুক্তি শেষ হওয়ার আগে অবসর নিলে আয় অনেক শতাংশ কমে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যদি শ্রীনিকে সরেও যেতে হয় বিশ্বকাপে তো এঁদের আর অন্তর্ভুক্তি ঘটবে না। প্লেয়ারদের নাম এই চলে গেল আইসিসি-র খাতায়! আইপিএল বাদ দিয়ে মাঠ কেন্দ্রিক আর কিছু এঁদের জীবনে ঘটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
এটাও মূর্তিমান অনিশ্চিত, গণ-অবসরে না গেলে এঁরা এক এক জন এখন কী করবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy