Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বিমানবন্দরে বীর-বরণ

সন্তোষ ট্রফি হাতে কলকাতা ফিরেই ভূমিকা বদলে গেল মনবীর সিংহের। বদলে গেল ফোকাসও। বাংলার বদলে এ বার তাঁর নিশানা দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ। রবিবার বিকেলে গোয়ার মাঠে সন্তোষ ট্রফি ফাইনালে তিনি নেমেছিলেন গোল শিকারে।

জয়োল্লাস: সন্তোষ ট্রফি নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরেই উল্লাসে মাতোয়ারা বাংলার ফুটবলাররা। পাশে কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

জয়োল্লাস: সন্তোষ ট্রফি নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরেই উল্লাসে মাতোয়ারা বাংলার ফুটবলাররা। পাশে কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

সন্তোষ ট্রফি হাতে কলকাতা ফিরেই ভূমিকা বদলে গেল মনবীর সিংহের। বদলে গেল ফোকাসও। বাংলার বদলে এ বার তাঁর নিশানা দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগ।

রবিবার বিকেলে গোয়ার মাঠে সন্তোষ ট্রফি ফাইনালে তিনি নেমেছিলেন গোল শিকারে। আর সোমবার বিকেলে বিক্রমগড়ের ফ্ল্যাটে ফিরেই জলন্ধরের ছেলে ছুটলেন মাংস কিনতে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন ‘‘রুমমেট মুমতাজ আব্দার করেছে সেলিব্রেশন ডিনারে পঞ্জাবী খানার জন্য। তাই মাটন কিনতে যাচ্ছি। আজ রাতে তন্দুরির রুটির সঙ্গে ধাবে দা কিমা হবে।’’

বিমানবন্দরেই বাংলার বত্রিশতম সন্তোষ জয়ের নায়ককে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন উপস্থিত ফুটবল অনুরাগীরা। যে আবেগ স্পর্শ করে জলন্ধরের ছেলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বুঝলাম কেন কলকাতা ফুটবলের মক্কা। এই ভালবাসা কোথাও পাব না।’’ আই লিগ দ্বিতীয় ডিভিশনের মূলপর্বে সাদার্ন সমিতির হয়ে খেলবেন মনবীর। যেখানে তাঁর সঙ্গী স্ট্রাইকার ওডাফা ওকোলি। এ দিন বিমাবন্দরে সে প্রসঙ্গ উঠলে চকচক করে ওঠে মনবীরের চোখ। বলেন, ‘‘ওডাফার নাম এত দিন শুনতাম। এ বার ওর পাশে খেলব। ওঁর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’’

সুনীল ছেত্রীর ভক্ত মনবীর না থেমে বলে চলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের গুরবিন্দর সিংহ আমাদের গ্রামের ছেলে। মোহনবাগানের বলবন্ত ভাইয়াও। দু’জনেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এ রকম ভালবাসা আমার উৎসাহ বাড়াল।’’

সেই ভালবাসার নমুনা? গোয়া থেকে এ দিন সন্তোষ জয়ী বাংলার দমদমে নামার কথা ছিল বিকেল চারটে নাগাদ। কিন্তু দুপুর তিনটে থেকেই ঢাক নিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন শ’তিনেক ফুটবল সমর্থক। দক্ষিণ কলকাতা থেকে ফুল, মালা, ফেস্টুন হাতে ভিড় জমিয়েছিলেন সাদার্ন সমিতির সমর্থকরাও। সেখানে কোথাও লেখা ‘চ্যাম্পিয়ন’। কোথাও লেখা— বাংলাকে গর্বিত করার জন্য তোমাদের শুভেচ্ছা। ঢাকের বাজনায় বিমাবন্দর মেতে ওঠে বাংলা দল কলকাতার আকাশে প্রবেশ করার আগেই। পুত্র দেবার্ঘ্যকে নিয়ে হাজির ছিলেন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী অনুশ্রীও।

সভাপতি সুব্রত দত্ত, সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আইএফএ কর্তারা উত্তরীয়, মালা হাতে অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরের লাউঞ্জেই। বাংলা দলের বিমান কলকাতায় নামার কিছু আগে সেই দলে এসে যোগ দেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্ল। লাউঞ্জেই কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ গোটা দলকেই সংবর্ধিত করেন তাঁরা। সেখানেই হাজির জিতেন মুর্মুকে দেখে আইএফএ সচিব ও সভাপতিকে বাংলা কোচের আর্জি, ‘‘ফুটবলারদের সংবর্ধনা মঞ্চে জিতেনকেও ডাকবেন।’’ কোচের এই আবেদনে সম্মতি জানান আইএফএ কর্তারাও।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ ট্রফি হাতে অধিনায়ক রানা ঘরামির সঙ্গে বেরিয়ে আসেন মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলা দল। বিমাবন্দরের গেট থেকে বের হওয়া মাত্র শঙ্কর রায়, মনবীর, বসন্ত সিংহদের কাঁধে তুলে নেন সমর্থকরা।

যা দেখে বাংলা গোলকিপার শঙ্কর রায়ের চোখে জল। গোল না খেয়ে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করা গোলকিপার বলছিলেন, ‘‘আরও ভাল খেলতে হবে। ফুটবলই আলো আনতে পারে আমাদের মা-ছেলের পরিবারে।’’

আর কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়? এ দিন সকালে তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জোসে রামিরেজ ব্যারেটো, গৌতম সরকাররা। যে কথা জানিয়ে বাংলা কোচ বলেন, ‘‘চলতি মরসুমটাই এখনও পর্যন্ত জীবনের সেরা। এ বারের সন্তোষ জয় হয়তো প্রমাণ করল বাঙালিরাও কোচিং করতে পারেন।’’ আগামী মরসুমে আই লিগ কোনওএ দলের প্রধান কোচ হিসেবে তাঁকে দেখা যেতে পারে কি? জবাবে বাংলা কোচ বলে দেন, ‘‘যাঁরা নিয়োগ করবেন তাঁরা ভরসা রাখলে বাঙালি কোচরাও কম যাবে না কারও চেয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Santosh Trophy Bengal vs Goa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE