Advertisement
০২ মে ২০২৪
mary kom

Mary Kom: ঝুপড়ি থেকেই মেরি কম হওয়ার স্বপ্ন মণিকার

ভবানীপুরের শশীশেখর বসু রোডের ধারের ঝুপড়িতেই থাকেন মণিকারা। বাবা সুরেশ মল্লিক কলকাতা পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মী।

প্রেরণা: মণিকার এগিয়ে চলার বড় শক্তি বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র

প্রেরণা: মণিকার এগিয়ে চলার বড় শক্তি বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২২ ০৬:৫৭
Share: Save:

এ যেন কুটিরে থেকেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। আর তার জন্য যাবতীয় ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি বাংলার সপ্তদশী বক্সার মণিকা মল্লিক। যিনি সদ্য সমাপ্ত খেলো ইন্ডিয়া গেমসে ৫২ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে সেই প্রত্যাশা আরও জোরদার করেছেন।

কলকাতার ঝুপড়িতে থেকেই ভারতীয় বক্সিংয়ের সোনার মেয়ে হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মণিকা।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাড়া ভবানীপুরের শশীশেখর বসু রোডের ধারের ঝুপড়িতেই থাকেন মণিকারা। বাবা সুরেশ মল্লিক কলকাতা পুরসভার অস্থায়ী সাফাই কর্মী। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাড়িতে ছয় বোন ও এক ভাইকে নিয়ে ন’জনের সংসার। যা চালাতে গিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা। বক্সিংয়ের সামগ্রী, জুতো অনেক সময়েই ঠিকঠাক মেলে না। কিন্তু আর্থিক প্রতিকূলতা ও অভাবের মধ্যেও মণিকা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন একাগ্র চিত্তে। এবারের খেলো ইন্ডিয়াতে বাংলার বক্সিংয়ের নজর কাড়া প্রতিভা বলা হচ্ছে তাঁকে। আর মণিকা নিজে বলছেন, ‍‘‍‘পঞ্জাবের বক্সারের বিরুদ্ধে সামান্য ভুল করে হেরে গেলাম। না হলে স্বপ্ন আরও বড় দেখেছিলাম। আমি সোনা জিততে চাই।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘আমার আদর্শ মেরি কম। বক্সিং করে ওঁর মতো জায়গায় পৌঁছতে চাই। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেখান থেকেও সাফল্য আনতে চাই। জানি একাধিক প্রতিকূলতা নিয়ে আমাকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু বড় হতে গেলে এ সব মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে আরও একাগ্র হতে হবে। সময় বাড়াতে হবে অনুশীলনে।’’

বাড়িতে দু’বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাকিরা সবাই পড়ুয়া। কী ভাবে বক্সিংয়ে এলে? প্রশ্ন শুনেই মণিকা বলতে শুরু করেন, ‍‘‍‘আমাদের বাড়ির কাছেই আদি গঙ্গার গোপাল ঘাট। সেখানে বক্সিং হত। আমি ছোট বেলায় দেখতে যেতাম। সেখান থেকেই এই খেলাটার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বছর সাড়ে চার আগে ওখানেই আমাদের কোচ সঞ্জয় প্রসাদ স্যর বালাজি বক্সিং অ্যাকাডেমি তৈরি করেন। আমার আগেই খেলাটা ভাল লাগত। আমি ওখানকার ছেলেদের সঙ্গে অনেক সময় খালি হাতে অনুশীলন করতাম। জুতোও কেনারও সামর্থ্য ছিল না। তার পরে কোচই কিটস দেন। আমি খালি পায়েই অনুশীলন শুরু করেছিলাম। পরে বাবা অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে জুতো কিনে দিয়েছিলেন।’’ এর আগে গুয়াহাটি ও দিল্লিতে জাতীয় যুব প্রতিযোগিতায় নামলেও সাফল্য আসেনি। কিন্তু এ বার খেলো ইন্ডিয়া গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে কলকাতার মেয়ের। তাঁর কোচ সঞ্জয়বাবু বলছেন, ‍‘‍‘মেয়েটার সাহস আছে। আর আছে শেখার আগ্রহ। করোনা সংক্রমণের পরে অনুশীলন শুরু করতেই সবার আগে ও আমার কাছে ট্রেনিং শুরু করে। চকিতে আক্রমণ করার প্রতিভা রয়েছে। ওর রক্ষণটাকে আরও ভাল করতে হবে। তা হলে জাতীয় পর্যায়ে নজর কাড়তে পারে।’’

জাতীয় শিবিরে যাওয়ার জন্য এখন থেকেই দিনে ছ’ঘণ্টা অনুশীলন করছে মণিকা। বাবা ও মা দু’জনেই বললেন, ‍‘‍‘লোকের বাড়িতে পরিচারক ও সাফাই কর্মীর কাজ করেই মেয়েকে সফল দেখতে চাই। আশা করি ও বড় কিছু করবে।’’ মণিকা বলছেন, ‍‘‍‘খুব ইচ্ছা মেরি কম দিদির সঙ্গে দেখা করার। তা হলে কী ভাবে আরও নিখুঁত ভাবে এগোতে পারব, তা শিখে নিতে পারব আমার প্রেরণার কাছ থেকে। শুনেছি মেরি দিদিও এ রকম অভাব-অনটনকে হারিয়েই উঠে এসেছিলেন ভারতীয় বক্সিংয়ে। সেই কারণেই রাস্তাটার হদিশ ওঁর থেকেই পেতে চাই। ভারতের হয়ে এশিয়ান গেমস, অলিম্পিক্সে যেতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘ব্রোঞ্জ জেতার পরে রাজ্য অলিম্পিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্লাবের পক্ষ থেকে দু’মাসের রেশন তুলে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু অর্থ দিয়েছেন জুতো ও গ্লাভস কেনার জন্য। যা আরও ভাল করার প্রেরণা দিচ্ছে আমাকে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

mary kom boxing Indian Boxing Team
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE