ঘরের মাঠে রবিবার সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার ব্যর্থতা দেখার পর প্রাক্তন ফুটবলাররা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে আসায় ভাটা পড়েছে। সেই জায়গাতেই টেক্কা দিল কেরল। ডুবেছে বাংলা।
আই লিগ, আইএসএল হাতছাড়া হওয়ার পর সন্তোষ অল্পের জন্য হাতছাড়া হল। তা সত্ত্বেও সুব্রত ভটাচার্যের মন্তব্য, ‘‘ফাইনালে উঠেছে বাংলা। টাইব্রেকারে হারতেই পারে। আরে, চুনী গোস্বামী, তুলসীদাস বলরাম, পিটার থঙ্গরাজরাও তো ’৬২ থেকে ’৬৮ সন্তোষ ট্রফি পায়নি। তখন তো বলা হয়নি, বাংলা রসাতলে গেল! তবে এটা যেহেতু বাংলার ট্রফি, না পেলে খারাপ লাগে বুঝি।’’ আট বার বাংলা ও রেলের হয়ে সন্তোষে খেলে ছ’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সুব্রত। বলছিলেন, ‘‘নতুন নিয়মে সন্তোষ জৌলুস হারিয়েছে। সেটা ফিরিয়ে আনা দরকার। আমাদের সময় এখান থেকেই ভারতীয় দল বাছা হত। এখানে তো স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনকে দেখলাম না। ফেডারেশেনের উচিত, ভাল ফুটবলার তুলে আনতে আই লিগের পর দেড় মাস ধরে এই টুনার্মেন্টটা করা।’’
পারিবারিক সমস্যা থাকায় মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারেননি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। ইন্টারনেটে খেলা দেখার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রঞ্জন কোচ হয়ে এসে এক দিনও পুরো টিমকে অনুশীলনে পায়নি। আমিও কোচ হয়ে এই সমস্যায় পড়েছিলাম। বাংলা জেতার মতো খেলেনি ঠিকই। কিন্তু এটা বাস্তব, বাংলায় প্রতিভাবান ফুটবলারের অভাব এখন। কেরল টিমে যে সমস্যা নেই।’’ পাশাপাশি বহুবার সন্তোষ জেতা দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার বললেন, ‘‘অধঃপতন ঠিক বলা যাবে না। তবে বলব সার্বিক ভাবে বাংলার ফুটবলের খারাপ সময় চলছে। সবাই মিলে সেটা ফেরাতে হবে। পরিকল্পনা করে এগোনো দরকার।’’
সুব্রত-মনোরঞ্জনের মতো বাড়িতে বসে বাংলার জয় দেখতে চাইছিলেন সমরেশ চৌধুরী। ম্যাচটা টিভিতে দেখানো হয়নি বলে বারবার ফোন করেছেন মাঠে থাকা প্রাক্তন ফুটবলারদের। সন্তোষে তাঁরও দুরন্ত ট্র্যাক রেকর্ড। পাঁচ বার খেলে চার বার চ্যাম্পিয়ন। ‘‘আরে ওটা তো আমাদের ঘরের ট্রফি। না পেলে খারাপ তো লাগবেই। ছেলেগুলো এত ভাল খেলে ফাইনালে তুলল। কিন্তু কেরলের সঙ্গে শুনলাম খেলতেই পারল না। কী হল কে জানে।’’ বলার পাশাপাশি দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা মিডিও বললেন, ‘‘কেরল-পঞ্জাব আমাদের সময়ও সমস্যায় ফেলত। তবে ঘরের মাঠে খেলা। আমার মতো সবারই প্রত্যাশা ছিল, ট্রফিটা পাওয়া যাবে।’’
গ্যালারিতে বসে বাংলার জন্য চেঁচাচ্ছিলেন মানস ভট্টাচার্য। তার পাশে তখন বলাই দে, রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়, কম্পটন দত্ত, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের মতো এক সময়ের সন্তোষ ট্রফি জেতা অনেক তারকা ফুটবলার। নিয়মিত ময়দানে থাকা মানস বলছিলেন, ‘‘শেষ মিনিটে গোলটা শোধ হওয়ার পর মনে হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। হল না। কার প্রধান কারণ টাইব্রেকারের কিক নিতে কারা যাবে সেই নির্বাচনটা ঠিক হয়নি। গোলকিপারও ভাল নয়। এর চেয়ে বহু ভাল গোলকিপার কলকাতা লিগে আছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কেরলের চারটে ছেলেকে দেখে আই এম বিজয়ন, জো পল আনচেরিদের স্কিলের কথা মনে পড়ছিল। মনে হচ্ছিল, ওদের রাজ্যের তরুণ প্রতিভা তুলে আনার পরম্পরা বাংলায় হারিয়ে গিয়েছে। তীর্থঙ্কর সরকার আর সঞ্চয়ন সমাদ্দার ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি।’’ জানা গেল, মোহনবাগানের স্পটার হয়ে আসা কম্পটন দত্তর নোটবুকে কেরলের চার ফুটবলারের সঙ্গে বাংলার দু’জনেরও নাম উঠেছে।
বাংলা ট্রফি পায়নি। ফলে কোনও আর্থিক পুরস্কারই জোটেনি রঞ্জন চৌধুরীর ছেলেদের। তবে তীর্থঙ্কর, সঞ্চয়ন, জিতেন মুর্মু-সহ ছ’জন ফুটবলারকে পরের মরসুমে দেখা যাবে আই লিগ বা আই এস এলে। এটুকুই যা প্রাপ্তি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy