Advertisement
১৯ মে ২০২৪

‘বাংলার ব্যর্থতায় রাগের চেয়েও কষ্ট হচ্ছে বেশি’

কর্নাটক প্রথমে ব্যাট করে ৭৯১ রান তোলার পরে শ্রীকান্ত ২৬০ রান করে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় করেছিল ৭৪ রান। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল এক জনের হার না মানা লড়াই।

উল্লাস: রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে উঠে উচ্ছ্বাস দিল্লির। মঙ্গলবার। ছবি:টুইটার 

উল্লাস: রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে উঠে উচ্ছ্বাস দিল্লির। মঙ্গলবার। ছবি:টুইটার 

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

সালটা ছিল ১৯৯১। রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনাল। ইডেনে বাংলার বিরুদ্ধে কর্নাটক। যে দলের বোলারদের মধ্যে ছিল জাভাগল শ্রীনাথ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ, অনিল কুম্বলে, রঘুরাম ভট্ট।

কর্নাটক প্রথমে ব্যাট করে ৭৯১ রান তোলার পরে শ্রীকান্ত ২৬০ রান করে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় করেছিল ৭৪ রান। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল এক জনের হার না মানা লড়াই। তার নাম স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চিড় ধরা সত্ত্বেও মারাত্মক যন্ত্রণা নিয়ে ১১৬ রানের অসম্ভব একটা ইনিংস খেলেছিল স্নেহাশিস। ও সেই ইনিংসটা না খেললে বাংলার সে বার রঞ্জি সেমিফাইনালে খেলা হত না বোধহয়।

মঙ্গলবার দুপুরে পুণেয় বাংলার ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখতে দেখতে মনে পড়ে যাচ্ছিল স্নেহাশিসের সেই লড়াইয়ের কথা। বারবার মনে হচ্ছিল, যে বাংলার হয়ে সেই লড়াই করেছিল স্নেহাশিস, সেই বাংলার ছেলেরা এ ভাবে হারতে পারে!

আরও পড়ুন: প্রত্যাবর্তনের পথে বাঁ-হাতি উনাদকাট

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগের বছর দিল্লির কাছে ১৮০ রানে অল আউট হয়ে গিয়ে হেরেছিলাম আমরা। পরের বছর সেই দিল্লিকেই ২৪৮ রানের মধ্যে গুটিয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। সে বার ত্রিপুরার কাছে হেরে যাওয়াটা আমাদের কাছে এত বড় অপমান হয়ে উঠেছিল যে, ওই হারটাই পরে বারুদের মতো কাজ করেছিল। এই হার না মানা মানসিকতাটাই মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতে দেখছি এখনকার বাংলা দলের ছেলেদের মধ্যে।

ফোকাস বা প্রত্যয় ঠিক থাকলে, আর অসম্ভব মানসিক শক্তি থাকলে গোড়ালিতে চিড় নিয়ে সেঞ্চুরি করা যায়। কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরন, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদার, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়দের একের পর এক ফিরতে দেখে মনে হল, কী ভাবে এই ভরা়ডুবি সম্ভব? এদের তো দক্ষতার অভাব নেই। তা হলে এত শৃঙ্খলার অভাব কেন? কেন সামান্য লড়াইয়ের চেষ্টাটা দেখা যাবে না?

মাত্র ২৪.৪ ওভারে এই আত্মসমর্পণ দেখে রাগের চেয়েও কষ্ট হচ্ছিল বেশি। আগের দিন এই ছেলেগুলোকেই তো পুণেয় গিয়ে উৎসাহ দিয়ে এলাম। হোটেলে ডিনার টেবলে সুদীপ, অনুষ্টুপ, শামি, ডিন্ডাদের দেখে ভাল লেগেছিল। আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল ওদের। সেই ছেলেগুলোকে এ ভাবে হারতে দেখে তো কষ্ট হবেই।

সকালে শামি সাতটার মধ্যে পাঁচটা উইকেটই তুলে নেয়। দিল্লিকে ২৮০-৩ থেকে ৩৯৮-১০-এ শেষ করে দেওয়ার পরেও মাত্র দেড়খানা সেশনে এই ধস! পুণের উইকেট স্বচক্ষেই দেখেছি। যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক। পঁচিশ ওভারও দাঁড়াতে না পারার মতো একেবারেই নয়। এই উইকেটে এই ব্যাটিং ব্যর্থতার কোনও ক্রিকেটীয় বিশ্লেযণ করা সম্ভব নয়।

মনোজ যে বলে আউট হল, সেটা অবশ্য ম্যাচের সেরা বল। তবে সুদীপের আউটটা দুর্ভাগ্যজনক। এই স্তরের ক্রিকেটে ওকে এ সব বল সামলাতে হবে। ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের রান আউটটাই বোধহয় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। পরপর এই উইকেট পড়ে যাওয়ায় বাকিরা হয়তো বেশি চাপ নিয়ে ফেলে। যার জেরে ফোকাসটা নড়ে যায়।

আসলে একটা স্তরে গিয়ে ক্রিকেটে টেকনিক ১৯-২০ জায়গায় চলে আসে। মানসিকতাই তখন দুই দলের তফাত গড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। একটা সময় দিলীপ বেঙ্গসরকরকে বলতে শুনেছি, বাংলার ছেলেদের নাকি কলিজার জোর নেই। ওর কথায় প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু এ সব হার দেখে মনে হয়, তা হলে কি দিলীপের কথাই সত্যি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi ranji trophy Final Bengal Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE