Advertisement
E-Paper

মডেল হোক ভবানীপুর, বলছেন শত্রু শিবিরের কোচেরাও

একঝাঁক ঘটি-বাঙালে ভরা দল নিয়ে সাফল্য! এও কি সম্ভব? ভিনরাজ্যের দিকে না তাকালেই যে নয়।সাতাশ বছর রঞ্জি ট্রফির অধরা সাফল্যে শোকাচ্ছন্ন বাংলার ক্রিকেট মহলে এই তত্ত্ব যখন বহুতল ইমারত গড়ছিল, তখন ওঁরাই যেন সেই ইমারত ভেঙে চুরমার করে দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০৪:০০
দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে ভবনীপুর কোচ মুনায়াম। ছবি : উৎপল সরকার

দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে ভবনীপুর কোচ মুনায়াম। ছবি : উৎপল সরকার

একঝাঁক ঘটি-বাঙালে ভরা দল নিয়ে সাফল্য! এও কি সম্ভব? ভিনরাজ্যের দিকে না তাকালেই যে নয়।

সাতাশ বছর রঞ্জি ট্রফির অধরা সাফল্যে শোকাচ্ছন্ন বাংলার ক্রিকেট মহলে এই তত্ত্ব যখন বহুতল ইমারত গড়ছিল, তখন ওঁরাই যেন সেই ইমারত ভেঙে চুরমার করে দিলেন।

ওঁরা কারা?

পার্থসারথী, ঋত্বিক, প্রিনান, অগ্নিভ, উদ্দীপন, অরিত্র, অয়ন, শুভম, অর্ণব। এঁরা কেউ ভট্টাচার্য তো কেউ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ মুখোপাধ্যায়, আবার কেউ দাস, ঘোষ বা দত্ত। রবিকান্ত সিংহর জন্ম, বেড়ে ওঠাও তো এই বাংলাতেই।

কলকাতার ক্রিকেট মরসুমে তিন-তিনটে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে ঐতিহ্যবাহী ভবানীপুর ক্লাবের এই তরুণ বাঙালি ক্রিকেটাররা অনেককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, ভিনরাজ্যের দিকে আর নাই বা তাকালেন, বাঙালিদের উপর একটু ভরসা রাখুন না। দেখবেন, সাতাশ বছর আগের সেই সাফল্য ফিরে আসবে।

ময়দানি ক্রিকেটে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের বাইরে কালীঘাট, শ্যামবাজারের মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠাই ছিল চল। কিন্তু এ ভাবেও যে উঠে আসা যায়, তা দেখিয়ে দিল ভবানীপুর। এ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন তারা। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, কালীঘাটকে হারিয়ে। এএন ঘোষ ট্রফিতে রানার্স। আর সেরা আট ক্লাব নিয়ে সুপার লিগের ফাইনালেও। যা দেশের সেরা স্পোর্টস চ্যানেল মারফৎ পৌঁছে যাবে সারা দেশে। বৈপ্লবিক গোলাপি বলে প্রথম ম্যাচের অন্যতম দল হিসেবে জড়িয়ে থাকতে চলেছে তারা। যেন সাফল্যের বন্যা এসেছে ভবানীপুর ক্লাবে।

ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট চিত্রক মিত্র, সচিব সৃঞ্জয় বসুরা যার অর্ধেক কৃতিত্ব দিচ্ছেন ক্রিকেটারদের। বাকি অর্ধেক কোচ আব্দুল মুনায়েমকে। যাঁর নিরলস প্রচেষ্টাতেই ছ’বছর ধরে তৈরি হয়েছে এই সাফল্যের রাস্তা। সৃঞ্জয় বললেন, ‘‘আমরা আর কী করি? টিমটা তৈরির জন্য টাকা জোগাড় করে দিই মাত্র। তাও বেশি নয়। বাকিটা তো পুরো আমাদের কোচের কৃতিত্ব। ক্রিকেটারদের কৃতিত্ব তো আছেই।’’

চিত্রকবাবু বলেন, ‘‘পুরো টিমটা আব্দুল নিজের মতো করে তৈরি করে। ছেলেদের টিম এফর্টও ছিল অসাধারণ। আমরা আশা করেছিলাম, দুটো ট্রফি পাবই। চারটে ফাইনালে খেলতে পারতাম। তিনটেতে খেলছি। যথেষ্ট। ঋত্বিক, পার্থ, রবিকান্ত, অরিত্ররা প্রত্যেকে ভাল খেলেছে।’’ জানা গেল, দুই প্রধান, কালীঘাটের চেয়ে কম বাজেটে তৈরি দল এ বার ভবানীপুরের। অথচ সাফল্যের বহরে কোনও অংশে কম নয়।

ছ’বছর ধরে এই দল নিয়ে ঘাম ঝরাচ্ছেন যিনি, সেই আব্দুল মুনায়েম অবশ্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন ক্রিকেটারদের মানসিকতাকে। তাঁর মতে, ‘‘আমি ছেলেদের শুরুতেই বলে দিয়েছিলাম, ক্লাব নয়, এখানে বাংলার হয়ে খেলার মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। ওরা সেটাই করে দেখিয়েছে।’’

কর্মকর্তা-কোচ-ক্রিকেটার রসায়ন এই ক্লাবে অসাধারণ বলেই এই সাফল্য, ব্যাখা মুনায়েমের। বুধবার দলের ছেলেদের নিয়ে ক্লাব তাঁবুতে বসে বলেন, ‘‘ক্লাবের কর্তারা আমাকে স্বাধীনতা দেন যেমন, আমিও আমার ছেলেদের তেমনই স্বাধীনতা দিই। খবরদারি করি না। এতেই দলের সেরাটা বেরিয়ে আসে বলে আমার বিশ্বাস। হয়ও তাই।’’ ক্যাপ্টেন ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করে নেন, ‘‘কোচই আমাদের থেকে বাড়তি এফর্টটা বার করে নেন।’’ ইস্টবেঙ্গল থেকে আসা ব্যাটসম্যান পার্থসারথীর বক্তব্য, ‘‘কোচ যে ভাবে মোটিভেট করেন, তাতে ভাল পারফরম্যান্স আপনিই বেরিয়ে আসে।’’

আর ময়দানে তাদের দুই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী মোহন-ইস্ট কোচেরাও বলছেন এই রসায়নই ভবানীপুরের সাফল্যের প্রধান কারণ। মোহনবাগান কোচ পলাশ নন্দী যেমন বললেন, ‘‘আব্দুলকে এই স্বাধীনতা দেওয়ারই ফল পাচ্ছে ভবানীপুর। এ বার ওরা সারা মরশুম যা খেলেছে, তার তুলনা নেই। ওদের এই উঠে আসাটা আমার কাছে দারুন খবর।’’

আর ইস্টবেঙ্গল কোচ প্রণব নন্দীর মতে, ‘‘এই ব্যাপারটা যে কোনও ক্লাবের কাছে মডেল হওয়া উচিত। আব্দুল যা কাজ করেছে, ওকে তো এ বার বাংলার কোনও দলেরও দায়িত্বও দিয়ে দেওয়া উচিত।’’

মুনায়েম অবশ্য স্বীকার করে নেন, ‘‘রঞ্জি দলের দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। জুনিয়রদের দায়িত্ব দিলে অবশ্যই নেব।’’

কিন্তু তখন যে ভবানীপুর ক্রিকেট দল যে হারাবে তার সাফল্যের রাস্তার কারিগরকে।

Bhawanipur cricket
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy