Advertisement
E-Paper

রিওর দুঃখ ভুলতে দীপা-ভল্ট আবিষ্কারের নেশায় দ্রোণাচার্য

রিও অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য স্বপ্নপূরণ হয়নি। মাত্র ০.১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় তাঁর ছাত্রীর ওঠা হয়নি ভিকট্রি স্ট্যান্ডে। ব্রোঞ্জ হারানো দীপা কর্মকারকে নিয়ে এ বার তাই নতুন স্বপ্নের সন্ধানে নামতে চান দ্রোণাচার্য। বিশ্বেশ্বর নন্দী চাইছেন তাঁর ছাত্রীর নাম বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সে চিরকালীন হয়ে থাকুক।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০২

রিও অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য স্বপ্নপূরণ হয়নি। মাত্র ০.১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় তাঁর ছাত্রীর ওঠা হয়নি ভিকট্রি স্ট্যান্ডে।

ব্রোঞ্জ হারানো দীপা কর্মকারকে নিয়ে এ বার তাই নতুন স্বপ্নের সন্ধানে নামতে চান দ্রোণাচার্য। বিশ্বেশ্বর নন্দী চাইছেন তাঁর ছাত্রীর নাম বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সে চিরকালীন হয়ে থাকুক।

প্রোদুনোভার মতোই একটা নতুন ভল্টের সন্ধানে নামছেন দীপার কোচ। যে চেষ্টা সফল হলে নাম হবে ‘দীপা ভল্ট’।

‘‘কাজটা কঠিন। ভয়ঙ্কর ঝুঁকিও আছে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে। তবুও আমি স্বপ্ন দেখছি। ভাবছি, এমন একটা চেষ্টা করলে ক্ষতি কী। দীপার যা জেদ আর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, তাতে ও চেষ্টা তো করবেই।’’ বিশ্বেশ্বর মনে করেন অসম্ভব কিছুই নয়। বলছিলেন, ‘‘আমরা তো এতদিন স্বপ্ন দেখতাম অলিম্পিক্সে নামব। তখন মনে হত, এমন কী সম্ভব হবে। সেটা তো হয়েছে। তাই এখন নতুন স্বপ্ন।’’

সংবর্ধনা, সরকারি পর্যায়ে অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেওয়া নিয়ে নানা আলোচনা, ফিট থাকতে তিন ঘণ্টার জিম সেশন—সারা দিন ব্যস্ত দীপা কর্মকার এবং তাঁর কোচ। এ রকম ব্যস্ততার মধ্যেও আগরতলা থেকে ফোনে তাঁর স্বপ্নের কথা বলে দেন সদ্য দ্রোণাচার্য বিশ্বেশ্বরবাবু। ‘‘এখনও দীপাকে বলিনি আমার ইচ্ছেটা। অনুশীলনে যখন পুরো দমে নামব, তখন ওকে বলব। আলোচনা করব।’’ সঙ্গে সংযোজন, ‘‘রিওতে ওর সঙ্গে আলোচনা করেই প্রোদুনোভা ভল্টকে দ্বিতীয় ভল্ট করার স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলাম। তাতে ও সফল হয়। পয়েন্ট অনেক বাড়ে। তবু অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল পদক। দুঃখ আর যন্ত্রণাটা রয়েই গিয়েছে। টোকিও অলিম্পিক্স তো অনেক দূরে। তাই ভাবছি দেখি না, অন্য ভাবে স্বপ্নটা পুরণ করা যায় কি না?’’

দীপার কোচ যেটা ছাত্রীকে দিয়ে করাতে চাইছেন সেটা ঠিক কী? জিমন্যাস্টিক্সের টেকনিক্যাল কচকচানি বাদ দিলে সোজা কথায়— এখন প্রোদুনোভার সময় বাতাসে যে ডাবল সমারসল্ট দীপা করেন সেটা আরও একশো আশি ডিগ্রি বাড়ানো। অর্থাৎ দৌড়ে এসে স্প্রিং বোর্ডে টেক অফ করার পর শূন্যে উঠে এখনকার ডাবল করার পর আবার হাফ টুইস্ট। রিওয় প্রোদুনোভা ভল্ট দেওয়ার পর দীপা মাটি ছোঁয়ার সময় তাঁর মুখটা ছিল সামনের দিকে। নতুন যে ভল্ট ছাত্রীকে দিয়ে করানোর কথা ভাবছেন কোচ, সেটা হলে দীপার মুখ থাকবে ভল্টিং টেবলের দিকে। আর সেটা হলেই ‘দীপা ভল্ট’ মান্যতা পাবে।

জিমন্যাস্টিক্সের ভাষা যাই হোক, শূন্যে আরও একশো আশি ডিগ্রি বাড়তি ঘোরার জন্য হাত ও কাঁধের জোর আরও বাড়াতে হবে দীপাকে। স্প্রিং বোর্ডে টেক অফ করার সময় হাতের উপর বাড়তি চাপ দিয়ে শূ্ন্যে শরীর আরও বেশি ছুড়ে না দিতে পারলে ‘দীপা ভল্ট’ সম্ভব হবে না।

দীপার কোচ তাঁর এই স্বপ্নের কথা প্রথমে জানাতে চাইছিলেন না। তবে এটাই তাঁর স্বভাব। ছাত্রী এবং নিজেকে আড়ালে রাখতেই বরাবর ভালবাসেন অত্যন্ত নম্র স্বভাবের মানুষটি। একেবারে স্কুল শিক্ষকের মতো কড়া নজরে রাখেন ছাত্রীকে। বাইরের কোনও ফোন পর্যন্ত ধরতে দেন না। কলকাতা থেকে অসংখ্য দূর্গাপুজোর উদ্বোধনের অনুরোধ ইতিমধ্যেই জমা দীপার কোচের কাছে। রয়েছে নানা অর্থিক প্রস্তাবও। রিওয় ইতিহাস গড়ে দীপা যে এখন মহা-তারকা। অলিম্পিক্সে সুযোগ পাওয়া ভারতের প্রথম মেয়ে জিমন্যাস্ট এখন সারা দেশের আইডল। রিওয় পদক পাওয়া পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু, সাক্ষী মালিকের সঙ্গে একই রকম সম্মান পাচ্ছেন আগরতলার মেয়ে। চতুর্থ হওয়া সত্ত্বেও। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা তো থাকবেই। আর এ সবের ফলে যাতে হারিয়ে না যান ছাত্রী সে দিকে কড়া নজর বিশ্বেশ্বরবাবুর। রিও থেকে ফেরার পর থেকেই।

আসলে অলিম্পিক্সে চতুর্থ হওয়ার পর পি টি উষা বা জয়দীপ কর্মকারের মতো নিজের ছাত্রীকে হারিয়ে যেতে দিতে চান না কোচ। চেষ্টা চালাচ্ছেন, রিও যাওয়ার আগের দিনগুলোর মতোই দীপাকে অনুশীলন এবং শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখতে।

সেটা কী রকম টের পাওয়া গেল দীপার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। সরকারি ভাবে অনুশীলন শুরু না করলেও ছাত্রীর ফিটনেস ঠিক রাখতে আগরতলায় ফেরার পর থেকেই জিমে নিয়ে যাচ্ছেন কোচ। জিম করার ফাঁকে কোচের ফোন থেকে দীপা বলছিলেন, ‘‘শুনছি প্রচুর পুজোয় যাওয়ার অনুরোধ এসেছে। কী করব স্যারই ঠিক করবেন। আমি কিছু জানি না।’’ কোচ যে আপনাকে নতুন ভল্ট শোখানোর স্বপ্ন দেখছেন? সেটা জানেন? দীপা বলে দেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। কোচ যা বলবেন তাই করব। ওঁর কাছ থেকে জেনে নিন।’’ বলেই দ্রুত ফোন ছেড়ে দেন এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ।

ত্রিপুরা সরকার নেতাজি ইনস্টিটিউটে ফোম পিট বসানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের রাজ্যের সোনার মেয়েকে। তাতেই নতুন স্বপ্ন পূরণের অনুশীলন শুরু করতে চান বিশ্বেশ্বর।

এ বার রিও অলিম্পিক্সের পর প্রোদুনোভার মতোই দুই মেয়ে জিমন্যাস্টের নামে দু’টি নতুন ভল্টের নামকরণ হয়েছে। বিম ইভেন্টে ‘ডিক টু’ আর আনইভেন বারে ‘জিবিশিয়ান’।

‘দীপা ভল্ট’ যদি সেই তালিকায় ওঠে তা হলে আরও এক নতুন ইতিহাস গড়বেন দীপা কর্মকার।

Dipa Karmakar Dipa Vault Bishweshwar Nandi Focused to Discover Gymnastics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy