Advertisement
E-Paper

সিডনিতে খেলা বন্ধ নিয়ে বিতর্ক, মোবাইল জ্বালিয়ে ব্যঙ্গ দর্শকদের

সারা দিনে মাত্র সাড়ে পঁচিশ ওভার খেলা করালেন আম্পায়ারেরা। অথচ, সকালের দিকটা বাদ দিলে বৃষ্টি প্রায় হয়নি।

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩১
খেলা থামানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ব্যঙ্গ দর্শকদের। ছবি: এএফপি।

খেলা থামানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ব্যঙ্গ দর্শকদের। ছবি: এএফপি।

রাতের ইডেনে এই দৃশ্য খুব দেখা যায়। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে ভারতীয় দল বা কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের উৎসব করছেন দর্শকেরা। রবিবার সিডনির মাঠেও সেই দৃশ্য দেখা গেল। তবে ভারতের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের আগাম উৎসব হিসেবে নয়, ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে।

সারা দিনে মাত্র সাড়ে পঁচিশ ওভার খেলা করালেন আম্পায়ারেরা। অথচ, সকালের দিকটা বাদ দিলে বৃষ্টি প্রায় হয়নি। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, অনায়াসে আরও তিরিশ-পঁয়ত্রিশ ওভার অন্তত খেলানো যেত। এখন টেস্ট ক্রিকেটে নিয়ম হচ্ছে, ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে তত ক্ষণ খেলা চালানো যাবে যত ক্ষণ না প্রাকৃতিক আলো থেকে কৃত্রিম আলো জোরালো হয়ে যাচ্ছে। কী ভাবে বোঝা যাবে সেটা, তারও একটা সহজ ফর্মুলা আছে। যখন দেখা যাবে মাঠে ক্রিকেটারদের চারটে ছায়া পড়ছে, তার মানে বুঝতে হবে ফ্লাডলাইটের চারটে স্ট্যান্ডের আলো প্রকৃতির আলোর চেয়ে জোরালো হয়ে গিয়েছে। এ দিন অনেক বারই দেখে মনে হয়েছে, প্রকৃতির আলো খেলা না-হওয়ার মতো কমে যায়নি। ফ্লা়ডলাইটের সাহায্যে দিব্যি খেলা চালানো যায়। তবু আম্পায়ারেরা মাঠে নামার উদ্যোগ দেখাননি।

সেই কারণেই অভিনব প্রতিবাদের ভঙ্গি হিসেবে দর্শকরা ব্যঙ্গ করে নিজেদের মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে দোলাতে থাকেন। কটাক্ষ করে বোঝানোর চেষ্টা যে, আলো কম হয়ে থাকলে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে আলো বাড়িয়ে দিচ্ছি। এ বার তো খেলা চালু করো। বৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে রবিবারেও কুড়ি হাজারের কাছাকাছি দর্শক মাঠে এসেছিলেন। সারা দিন ধরে মাঠে বসে থেকে তাঁরা মাত্র সাড়ে পঁচিশ ওভার দেখতে পেলেন। এক-এক সময় মনে হচ্ছিল, বছরের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেলেঙ্কারি হয়ে থাকল এটা। দু’টোই অস্ট্রেলিয়াকে ঘিরে। প্রথমটা কেপ টাউন টেস্টের সেই বল-বিকৃতির ঘটনা, যার জেরে নির্বাসিত থাকতে হচ্ছে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারদের। দ্বিতীয়টা এ দিনের সিডনিতে আলো কেলেঙ্কারি। যার জেরে দুই আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো এবং ইয়ান গোল্ডকে ডেকে অন্তত জবাবদিহি চাওয়া উচিত আইসিসি-র। কেরি প্যাকারের হাত ধরে ফ্লাডলাইটের জন্ম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতেই। সেই দেশের মাঠে সারা দিন ধরে ফ্লাডলাইট জ্বলল এবং তা খেলা করার মতো উপযুক্ত বলে বিবেচিত হল না। বিচিত্র ঘটনা!

লাইট মিটারে পরীক্ষা আম্পায়ারের। ছবি: এপি।

খেলা বন্ধ রাখার প্রধান কারণ হিসেবে আম্পায়ারেরা মন্দ আলোকেই দেখাচ্ছেন। এখনকার দিনে আগের মতো ব্যাটসম্যানেরা আর মন্দ আলোর জন্য আবেদন করতে পারেন না। আম্পায়ারের কাছে লাইটমিটার থাকে। তা নিয়ে আলো মেপে তাঁরাই ঠিক করেন, খেলা চালু রাখার মতো অবস্থা আছে কি না। এ দিন যে অতটা অন্ধকার ছিল না, সেটা সকলেই চোখের সামনে দেখছিলেন। শেষের দিকে হয়তো সত্যিই যথেষ্ট আলো ছিল না, কিন্তু আগে অনেক সময়েই আলোর উন্নতি ঘটেছিল। সেই সময়গুলো নিয়েই বেশি করে প্রশ্ন উঠছে যে, আম্পায়ার খেলা করানোর চেষ্টা করলেন না কেন? একই সঙ্গে কথা উঠছে, কেন শুধু লাইটমিটারের উপরে ভরসা করব? কেন নিজের চোখেও যাচাই করে দেখব না?

ভারতীয় দল অবশ্যই খেলতে চেয়েছিল। অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে বেশ কয়েক বার দেখা গিয়েছে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলছেন। খেলা বন্ধ করে দিয়ে আম্পায়ারেরা যখন মাঠ ছাড়ছেন, তখনও কোহালিকে খুব একটা খুশি দেখাচ্ছিল না। ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সামনেটা এক বার টিভি ক্যামেরা ফোকাস করল। তখন দেখা গেল কোহালি আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁর পাশে হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। পরে শোনা গেল, বেশ খানিক্ষণ ধরে কথাবার্তা চলেছিল ভারত অধিনায়ক ও কোচের সঙ্গে আম্পায়ারদের। মনে হয় না শাস্ত্রী বা কোহালি কেউ খুব প্রসন্ন ছিলেন খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে।

আলো-আঁধারি: খারাপ আলোর কারণ দেখিয়ে আগেই চা-পানের বিরতি ঘোষণা আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের। হতাশ কোহালি। ছবি: রয়টার্স।

এই সময়ে টিভি-র পরদায় আর এক বার দেখা গেল দুই স্পিনার রবীন্দ্র জাডেজা এবং কুলদীপ যাদবকে নিয়ে ড্রেসিংরুমের সামনের চেয়ারে বসে আছেন কোহালি। দেখে মনে হল যেন সেনাপতি অপেক্ষা করছেন দুই ঘোড়াকে নিয়ে। আম্পায়ার মাঠে নামার নির্দেশ দিলেই প্রতিপক্ষের দিকে তেড়ে যাবেন। কিন্তু কোহালিকে ও ভাবেই বসে থাকতে হল। খেলা আর চালুই হয়নি। বিরক্ত হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের অনেকেই গজগজ করছিলেন। ‘‘খেলা বন্ধ রাখার মতো আলো কম ছিল না মোটেও,’’ বলতে থাকেন তাঁরা, ‘‘আম্পায়ারদের মনে রাখা উচিত যে, লোকে মাঠে আসে খেলা দেখতে, খেলা বন্ধ আছে দেখতে নয়।’’ অস্ট্রেলিয়ার মাঠের নিয়ম অনুযায়ী, পঁচিশ ওভার হয়ে যাওয়ায় দর্শকেরা টিকিটের টাকাও ফেরত পাবেন না।

ভারতীয় শিবির থেকে কেউ এ নিয়ে কথা না বলতে চাইলেও শোনা যাচ্ছে, প্রয়োজনে পেসারদের দিয়ে বল না-করিয়ে খেলা চালানোর পক্ষে ছিলেন কোহালি। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা হওয়ার সময়ে সেটা তিনি সম্ভবত বলেওছিলেন। ভারতের হাতে তিন স্পিনার ছিল। জাডেজা, কুলদীপ এবং পার্টটাইম স্পিনার হনুমা বিহারী। এর মধ্যে বিহারী ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাঁধে চোট পাওয়ায় কিছুটা অনিশ্চিত ছিলেন বল করা নিয়ে। কিন্তু বাকি দুই প্রধান স্পিনার ছটফট করছিলেন বল করার জন্য। প্রথম ইনিংসে কুলদীপ (৯৯ রানে ৫ উইকেট) এবং জাডেজা (৭৩ রানে ২ উইকেট) মিলে অস্ট্রেলিয়ার সাত উইকেট নেন। আলো এত খারাপ ছিল না যে, স্পিনারদের বিরুদ্ধে খেলা যেত না। কিন্তু দুই আম্পায়ার সেই সুযোগটাও দিলেন না।

খেলা বন্ধ হওয়ার ওই ওভারেই যশপ্রীত বুমরার বাউন্সারে কম্পিত ভাবে মাথা বাঁচাতে গিয়ে মার্কাস হ্যারিসের গ্লাভস লেগে উঁচু হয়ে বল গিয়ে পড়ে গালিতে। আউট হতে হতে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি কোনও রকমে আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচেন হ্যারিস। সম্ভবত ওই বলটা দেখেই আম্পায়ারদের মনে হয়েছে, খেলা চালানোর মতো যথেষ্ট আলো নেই। তক্ষুনি তাঁরা কোহালিকে ডেকে পরামর্শ করেন এবং তার পরেই মাঠ থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু পাল্টা যুক্তি উঠছে যে, হ্যারিস গোটা সিরিজে অনেক বার বুমরার বলে হেলমেটে বা শরীরে আঘাত পেয়েছেন। তখন দিনদুপুরে রোদ্দুর জ্বলজ্বল করছিল। তাই এর জন্য যতটা না আলো দায়ী, তার চেয়ে বেশি শর্ট বলের বিরুদ্ধে তাঁর ‘ডাক’ করার ভূতুড়ে টেকনিকই কারণ। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহলেও অনেকে মানছেন, বাউন্সারে হ্যারিসের অস্বস্তি দেখে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়ে থাকলে সেটা একেবারেই ঠিক হয়নি। মাইকেল ক্লার্ক থেকে স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও সমালোচনা করেছেন আলো খুব খারাপ না থাকা সত্ত্বেও খেলা অতক্ষণ বন্ধ রাখার।

সোমবার ভারতীয় ক্রিকেট নতুন ইতিহাসের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার দিন। আর তার মধ্যেই চলতে থাকবে মন্দ আলো নিয়ে বিতর্কের ঝড়!

স্কোরকার্ড
ভারত ৬২২-৭ ডি
অস্ট্রেলিয়া ৩০০ এবং ৬-০


অস্ট্রেলিয়া (আগের দিন ২৩৬-৬ থেকে প্রথম ইনিংস)
পিটার হ্যান্ডসকম্ব বো বুমরা ৩৭
প্যাট কামিন্স বো শামি ২৫
মিচেল স্টার্ক ন.আ ২৯
নেথান লায়ন এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ০
হেজলউড এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ২১
অতিরিক্ত ১১
মোট ৩০০
পতন: ৭-২৩৬ (কামিন্স, ৮৪.৩), ৮-২৫৭ (হ্যান্ডসকম্ব, ৮৯.৪), ৯-২৫৮ (লায়ন, ৯০.৫), ১০-৩০০ (হেজলউড, ১০৪.৫)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ১৯-২-৫৮-২, যশপ্রীত বুমরা ২১-৫-৬২-১, রবীন্দ্র জাডেজা ৩২-১১-৭৩-২, কুলদীপ যাদব ৩১.৫-৬-৯৯-৫, হনুমা বিহারী ১-০-২-০।
অস্ট্রেলিয়া (ফলো-অন, দ্বিতীয় ইনিংস)
উসমান খোয়াজা ব্যাটিং ৪
মার্কাস হ্যারিস ব্যাটিং ২
অতিরিক্ত ০
মোট ৬-০
বোলিং: মহম্মদ শামি ২-১-৪-০, যশপ্রীত বুমরা ২-১-২-০।

Border-Gavaskar Trophy 2018 Cricket Cricketer India Vs Australia Sydney Test
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy