Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ওয়াটফোর্ডের কাছেও হার, সময় ফুরিয়ে আসছে চেলসি ম্যানেজারের

ঠিক ঘুম হবে, বলছেন কন্তে

শুধু ইপিএলের মঞ্চেই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে না তাদের, আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যোগ্যতা অর্জন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

আলো-আঁধারি: ওয়াটফোর্ডের ৪-১ জয়ের নায়ক জেরার দেউলোফেউ (বাঁ দিকে)। আরও এক বিপর্যয়ের রাতে দিশাহারা দেখাচ্ছিল কন্তে-কে। ছবি: রয়টার্স, এএফপি

আলো-আঁধারি: ওয়াটফোর্ডের ৪-১ জয়ের নায়ক জেরার দেউলোফেউ (বাঁ দিকে)। আরও এক বিপর্যয়ের রাতে দিশাহারা দেখাচ্ছিল কন্তে-কে। ছবি: রয়টার্স, এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৮
Share: Save:

ওয়াটফোর্ড ৪ : চেলসি ১

ইতিহাস বলবে, ফেব্রুয়ারি মাসটা চেলসি ম্যানেজারদের জন্য খুবই নির্মম। লুই ফিলিপ স্কোলারি থেকে শুরু করে আন্দ্রে ভিয়া বোয়াস— অনেকেই যে ফেব্রুয়ারিতে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। এ বার কি সেই তালিকায যুক্ত হতে চলেছে আরও একটি নাম— আন্তোনিও কন্তে?

ওয়াটফোর্ডে আরও একটি বিশ্রী হারের পরে কন্তের মস্তিষ্কেও যদি ফেব্রুয়ারি এবং চেলসির যোগাযোগের ইতিহাস ঘুরতে থাকে, অবাক হওয়ার নেই। সোমবার রাতে ওয়াটফোর্ডের হাতে ১-৪ চূর্ণ হল চেলসি। এ নিয়ে শেষ দু’টি ম্যাচে তারা সাত গোল খেয়েছে। কন্তের দল গত সপ্তাহে ০-৩ হেরেছিল বোর্নমুথের কাছে।

শুধু ইপিএলের মঞ্চেই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে না তাদের, আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যোগ্যতা অর্জন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। চাপের মধ্যে থাকা কন্তের দল সোমবার রাতে যে ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে, তা দেখে মনে হচ্ছিল ম্যানেজারের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া হয়তো ওয়াটফোর্ডেই সম্পন্ন হয়ে গেল। কে বলবে, গত বছরেই তিনি চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন করে বিজয়োৎসব করেছেন! ইপিএলে ম্যানেজারের ভাগ্য যে ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতোই দ্রুত পাল্টে যায়!

আর যদি ক্লাবের নাম হয় চেলসি এবং তার মালিকের নাম রোমান আব্রামোভিচ, তা হলে তো কথাই নেই। আব্রামোভিচ একাই আট জন ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেছেন। কন্তে কি বিদায় ঘণ্টা শুনতে পাচ্ছেন? না হলে সোমবার রাতের ম্যাচে এতটা আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল কেন তাঁকে? জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে সারাক্ষণ তাঁর অস্থির পদচারণা দেখে মনে হচ্ছিল কোনও সফল চাণক্য নন, এক কম্পিত ম্যানেজারকে দেখা যাচ্ছে। যাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে। ৪২ মিনিটে ওয়াটফোর্ড-কে পেনাল্টি থেকে এগিয়ে দিলেন ট্রয় ডিনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে ২৫ গজের দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরালেন এডেন অ্যাজার। ম্যাচে ফিরে আসার মতো মুহূর্ত। কিন্তু কন্তে কেমন ভাবলেশহীন। যিনি সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে নিজের আবেগ বহিঃপ্রকাশ করতে ভালবাসেন, তিনি প্রতিক্রিয়াহীন। দেখে মনে হচ্ছিল, কন্তে যেন জানেন এই সমতা ফেরানোর সুখ স্থায়ী হবে না। ঝড় আসছে আর তাতে উঢ়ে যাবে তাঁর দল। সত্যিই উড়ে গেল চেলসি। শেষ ছয় মিনিটে তিন গোল খেল তারা। জারিল জানমাত, জেরার দেউলোফেউ এবং রবের্তো পেরেরা শেষ তিনটি গোল করলেন। বাকায়োকো-কে হারিয়ে দশ জনেও খেলতে হল চেলসিকে।

হারের পরেও সাংবাদিকদের সামনে এসে যথারীতি সাহসী থাকার চেষ্টা করলেন কন্তে। বললেন, ‘‘কাল একটা নতুন দিন। আমি চেলসি কোচ থাকতে পারি, না-ও থাকতে পারি। তাতে সমস্যা কী? আমি ঠিক মতোই ঘুমোতে যাব।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমি সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। যদি এটা যথেষ্ট হয়, ভাল। না হলে ক্লাব নিশ্চয়ই তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জীবন তার পরেও এগিয়ে চলবে।’’

কন্তে দাবি করতে পারেন, এখনও প্রথম চারের মধ্যে রয়েছে তাঁর দল। কিন্তু নাম মাত্রেই রয়েছে। পঞ্চম স্থানে থাকা টটেনহ্যামের চেয়ে এক পয়েন্ট এগিয়ে তারা। শেষ চারটি ম্যাচে এটা তৃতীয় হার। গত বারের চ্যাম্পিয়নদের কোনও কিছুই এ বারে ঠিকঠাক হচ্ছে না। নতুন ফুটবলার নেওয়া নিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে শীর্ষ কর্তাদের বিরোধ বেধেছে। নিংড়ে নেওয়া সূচিতে একের পর এক ফুটবলার চোট পেয়েছেন। গত বছর ড্রেসিংরুমে তিনি খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। চেলসির ফুটবলভক্তরা এখনও তাঁকে ভালবাসেন। কিন্তু সমালোচিত হচ্ছে তাঁর রণনীতি এবং মাত্রাতিরিক্ত কড়া ট্রেনিং করানোর সিদ্ধান্ত।

কারও কারও বিশ্লেষণ, অত্যাধিক কড়া ট্রেনিংয়ে ফুটবলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং চোট-আঘাতের কবলে পড়েছেন। অভিযোগের আঙুল তাই কন্তের দিকেই উঠছে। যদি প্রথম চার থেকে ছিটকে যায় চেলসি, তখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবেন আব্রামোভিচ। চাপের মধ্যে থাকা ম্যানেজার তাঁর ফুটবলারদের সমালোচনাও করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমি উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু এ দিনের পারফরম্যান্স ছিল জঘন্য। নিশ্চয়ই আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। সম্ভবত ঠিক প্রথম একাদশ বাছিনি আমি। কিন্তু এটাও ঠিক যে, বড় ক্লাবে ফুটবল খেলতে গেলে ব্যক্তিত্বও থাকতে হবে।’’ বলে দিলেন, তাঁর ফুটবলাররা ভয় পেয়ে খেলেছে। চরিত্র হয়ে উঠতে পারেনি।

দু’টো জল্পনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে ফুটবল দুনিয়ায়। এক, চেলসি ছেড়ে ফের ইতালির কোচ হতে চলেছেন কন্তে। দুই, চেলসিতে তাঁর জায়গায় আসতে পারেন বার্সেলোনায় মেসিদের প্রাক্তন কোচ লুইস এনরিকে বা রিয়ালে রোনাল্ডোদের প্রাক্তন গুরু কার্লো আনচেলোত্তি। এ মরসুমে ফুটবলের সব চেয়ে চর্চিত বিচ্ছেদ হয়তো শুধুই সময়ের ব্যাপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE