Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বড় নাম মানে বড় কোচ নয়

শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফর থেকে শুরু করে আগামী দু’বছরের জন্য যে কোচিং টিমটা হাতে পেল বিরাট কোহালি, তাতে রবি শাস্ত্রী রয়েছে। আছে সঞ্জয় বাঙ্গার, ভরত অরুণও।

ভরত অরুণ, রবি শাস্ত্রী ও সঞ্জয় বাঙ্গার।

ভরত অরুণ, রবি শাস্ত্রী ও সঞ্জয় বাঙ্গার।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩২
Share: Save:

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের কোচ নির্বাচন নিয়ে যে নাটক চলল, তার পরে আমার একটা কথা মনে হচ্ছে। যেন তারকা ক্রিকেটারদের কোচ বানানোর জন্য একটা লড়াই চলছিল। যেন তারকা ক্রিকেটার ছাড়া আর কেউ কোচ হতে পারে না!

শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সফর থেকে শুরু করে আগামী দু’বছরের জন্য যে কোচিং টিমটা হাতে পেল বিরাট কোহালি, তাতে রবি শাস্ত্রী রয়েছে। আছে সঞ্জয় বাঙ্গার, ভরত অরুণও। আমি বলব, ঠিক টিমটাই হাতে পেয়েছে বিরাট। এই টিম নিয়ে ও সফল হবে কি না, সেটা সময় বলবে। তবে এটা এখনই বলে দেওয়া যায়, এই টিমটার সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে কোহালি। ক্যাপ্টেন এবং কোচিং টিমের মধ্যে রসায়নটাও ভাল থাকবে বলে আমার মনে হয়। যে কোনও টিমের সফল হওয়ার পিছনে যা প্রাথমিক শর্ত।

কোচ নিয়ে একটা কথা আমার বলার আছে। বড় নাম, খুব দারুণ ক্রিকেটার হওয়া মানেই কিন্তু সে বড় কোচ হবে, এমনটা নয়। এই ধারণাটাই ভুল। বরং দেখা গিয়েছে, উল্টোটাই ঠিক। পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোকে দেখুন। ওরা কিন্তু কোচের জন্য কখনওই বড় নামের পিছনে দৌড়য়নি। মিকি আর্থার, ট্রেভর বেলিস, রাসেল ডোমিঙ্গো, বা ডারেন লেম্যান-রা বিশাল দরের ক্রিকেটার ছিলেন বলে তো আমার মনে হয় না!

কিন্তু ভারতেই দেখা যায় কোচ বাছতে বসলেই সব সময় বড় নামের কথা ভাবা হয়। কখনও কপিল দেব, কখনও গ্রেগ চ্যাপেল, কখনও অনিল কুম্বলে। এ বার দেখলাম বীরেন্দ্র সহবাগের নামও চলে এসেছিল। এদের সবার যে কোচিং সম্পর্কে দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সুপারস্টার বলে প্রাধান্য পেয়ে যায়। অথচ দেখুন, ভারতকে কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েও সে রকম ভাবে প্রশংসিত হয়নি লালচাঁদ রাজপুত। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে একটা প্রায় নতুন টিম নিয়ে ও ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেছিল।

আরও পড়ুন: সীমান্তের কাঁটাতার ডিঙিয়ে ভারত-পাক বিরাট সম্প্রীতি

এ বারের বোলিং কোচ নিয়ে দেখছিলাম লড়াই চলছিল জাহির খানের সঙ্গে অরুণের। জাহির নিঃসন্দেহে বড় বোলার। কিন্তু বড় কোচ কী? ওর তো সে রকম কোচিং অভিজ্ঞতা নেই। অন্য দিকে অরুণ কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এসেছে। এনসিএ-তে ছিল। রাজ্য দলের কোচিং করিয়েছে। তার পর জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অন্য দিকে জাহির কিন্তু এখনও আইপিএল খেলে চলেছে। শুনলাম, মঙ্গলবার উমেশ যাদব বলেছে, অরুণ ওকে অনেক সাহায্য করেছে। এটাও হয়েছে অরুণ নিজে সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এসেছে বলে। ও জানে, কার ত্রুটি কী ভাবে ঠিক করে দিতে হয়।

কোচ হিসেবে এক জনের মধ্যে ঠিক কী কী গুণ থাকা দরকার? খুব অল্প সময় হলেও ভারতীয় দলের সঙ্গে আমি কাজ করেছি। বাংলারও কোচ ছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সবচেয়ে আগে দরকার নিজের ইগোটা সরিয়ে রেখে ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিশে যাওয়া। কোচকে পুরোপুরি ভুলে যেতে হবে, অতীতে সে কত বড় খেলোয়াড় ছিল। কোচকে বুঝে নিতে হবে, এখন টিমের খেলোয়াড়রাই সব কিছু। ওরাই তারকা। তাই কোচকে সব সময় পিছনে থাকতে হবে। প্রচারের আলো এবং মহাতারকার ঔজ্জ্বল্য, সব কিছু বরাদ্দ থাকবে ক্যাপ্টেন এবং টিমের বাকিদের জন্য।

আর যখন এটা হবে না, তখনই ঠোকাঠুকি লেগে যাবে। ভারতীয় ক্রিকেটে আমরা এর অনেক উদাহরণ দেখেছি। কপিলের সময়, গ্রেগ চ্যাপেলের সময়। আমার তো মনে হয় কুম্বলেও টিমের সঙ্গে সে ভাবে মানিয়ে নিতে পারেনি। যার জেরে ওকে সরে যেতে হল।

এই জায়গায় কিন্তু অনেকটা এগিয়ে আছে রবি শাস্ত্রী। ও ম্যান ম্যানেজমেন্টে খুবই পারদর্শী। এই পর্যায়ের ক্রিকেটে যেটা খুব জরুরি। আরও একটা ব্যাপারে নজর রাখতে হয়। সেটা হল, ড্রেসিংরুমে একটা সুস্থ, ভাল পরিবেশ ধরে রাখা। আমি নিশ্চিত, রবি যখন এর আগে বিরাট-ধোনিদের সঙ্গে ছিল, তখন এই কাজটা ঠিক করে সামলেছে। নিজের ইগো দূরে সরিয়ে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যেতে পেরেছে।

এক জন ক্যাপ্টেন যদি তাঁর পছন্দ মতো কোচ না পায়, তা হলে সব সময় একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমি তাই মনে করি, ক্যাপ্টেনের ইচ্ছেমতোই তাকে কোচ দেওয়া হোক। এবং, তার পর অধিনায়ক এবং কোচ মিলে বাকি সাপোর্ট স্টাফ বেছে নিক।

ভাল কথা হল, অনেক নাটক এবং টালবাহানার পরে সেটাই ঘটল ভারতীয় ক্রিকেটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE