Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Tejaswin Shankar

Tejaswin Shankar: বাধা ছিলেন বাবা, মৃত্যুর এক মাস আগে কমনওয়েলথ পদকজয়ীকে খেলাধুলো করার অনুমতি

বাবাকে লুকিয়ে স্কুলের টিফিনের সময় অনুশীলন করতেন। অন্য উপায় ছিল না তেজস্বীনের। স্কুল মিটে অংশ নিতে বাবাকে চিঠি লিখে চলে যান রাঁচি।

আরও সাফল্য চান তেজস্বীন।

আরও সাফল্য চান তেজস্বীন। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২২ ১৮:২৫
Share: Save:

ভারতের প্রথম হাই জাম্পার হিসাবে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতেছেন তেজস্বীন শঙ্কর। তাঁর সফল অ্যাথলিট হয়ে ওঠার পথ সহজ ছিল না। বরং, বাবার রক্তচক্ষুর আড়ালেই তাঁকে অনুশীলন করতে হয়েছে দিনের পর দিন। সেই বাবার শেষ নির্দেশ মেনেই প্রতি দিন আরও বেশি উচ্চতায় লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেন।

স্কুল জীবনেই অ্যাথলেটিক্স শুরু তেজস্বীনের। তাঁর বাবা হরিশঙ্কর ছিলেন আইনজীবী। খেলাধুলো নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল না। তিনি চাইতেন, ছেলে পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। বিশেষ করে অ্যাথলেটিক্স ছিল তাঁর ঘোর অপছন্দ। হরিশঙ্করের ধারণা ছিল, অ্যাথলেটিক্সে সকলেই বয়স লুকিয়ে খেলে। সবাই নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহার করে। এ সব তাঁর পছন্দ ছিল না। তাই ছেলের অ্যাথলিট হওয়ার ইচ্ছায় সায় দেননি। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, খেলার মাঠে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

বাবার নির্দেশ অমান্য করার সাহস ছিল না তেজস্বীনের। তাই স্কুল ছুটির পর বাকিদের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারতেন না তিনি। কারণ বাড়ি ফিরতে দেরি হলে বাবার রোষ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় জানা ছিল না স্কুল পড়ুয়া তেজস্বীনের। কিন্তু অ্যাথলেটিক্স ছিল তাঁর বড্ড প্রিয়। নিজেই উপায় বের করেন।

বার্মিংহামে ব্রোঞ্জজয়ী বলেছেন, ‘‘স্কুলের আগে বা পরে অনুশীলন করার কোনও সুযোগ ছিল না আমার। বাবা জানতে পারলেই সমস্যা হত। তাই টিফিনের সময় অনুশীলন করতাম। সেটা বাবা বুঝতে পারতেন না। সে ভাবেই দিল্লির রাজ্য মিটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। রাজ্য মিটে পদক জয়ের পর আন্তঃরাজ্য মিটে সুযোগ পাই। ২০১৪ সালে জাতীয় স্কুল মিটেও সুযোগ পাই। তখন আর বাবাকে না জানিয়ে উপায় ছিল না। কারণ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য রাঁচি যেতে হত। বাবা শুনেই রেগে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তুমি কি সারা দিন এই সবই কর! পড়াশনায় মন দাও একটু।’ খেলা এবং পড়াশোনার মধ্যে একটা বেছে নিতে বলেন।’’

তখনই প্রথম জানতে পারেন, তাঁর বাবা রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত। তেজস্বীন বলেছেন, ‘‘বাবার ক্যান্সারের কথা জানতাম না। আমাকে তার আগে কেউই বলেনি। বাবাই প্রথম বলেন। তখন বাবার আর বাঁচার আশা ছিল না। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন। বাবাও জানতেন সে কথা। সেটা জানুয়ারির শেষ বা ফ্রেব্রুয়ারির শুরু হবে।’’

বাবাকে আর কষ্ট দিতে চাননি তেজস্বীন। তখন তাঁর বয়স ১৫। ঠিক করেন বাবাকে একটি চিঠি লিখবেন। জানাবেন, পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বাবাকে চিঠি দিয়ে তেজস্বীন জানিয়েছিলেন, আর কখনও অ্যাথলেটিক্স করবেন না। জাতীয় স্কুল মিটই তাঁর শেষ প্রতিযোগিতা। তাই যাওয়ার অনুমতি চাইছেন। রাঁচি থেকে ফিরে শুধু পড়াশোনা করবেন।

বাবার হাতে চিঠি দিয়ে রাঁচির ট্রেনে ওঠেন তেজস্বীন। জানতেন না বাড়ি ফিরলে কী অপেক্ষা করবে তাঁর জন্য। তেজস্বীন বলেছেন, ‘‘তখন বয়স কম ছিল। অত কিছু বুঝতাম না। রাঁচির প্রতিযোগিতায় প্রথম ব্রোঞ্জ পদক জিতি। সেটাই ছিল আমার জাতীয় স্তরের প্রথম প্রতিযোগিতা। বাড়ি ফেরার পর মা আমাকে জানান, রাঁচি চলে আসার পর ওঁরা দু’জনে কথা বলেছিলেন। আমার লেখা ওই চিঠিটাই বাবার মন পরিবর্তন করেছিল। বাবা বুঝেছিলেন, অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে থাকতে পারব না। রাঁচিতে পদক জেতায় বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পর আমাকে বলেন, ‘নিজের স্বপ্নকে তাড়া কর।’ এর পর আর বাবাকে বেশি দিন পাইনি। মার্চে মারা যান। মৃত্যুর মাত্র এক মাস আগে আমাকে অ্যাথলেটিক্স করার অনুমতি দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা।’’

স্কুল মিটের সেই ব্রোঞ্জই তেজস্বীনের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ব্রোঞ্জ জিতেছেন এ বারের কমনওয়েলথ গেমসেও। তেজস্বীন বলেছেন, ‘‘যখনই কোনও প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতি, মনে হয় এটাই নতুন করে শুরু করার সময়। নতুন কিছু অর্জন করতে পারি। এক বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপেও ব্রোঞ্জ পেয়েছি। তার পর বার্মিংহামে। ব্রোঞ্জ পদক দেখলেই মনে হয় বাবা যেন বলছেন, নিজের স্বপ্নকে তাড়া কর...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE