ডার্বির মঞ্চে ভাইচুংকে পাশে নিয়ে কনস্ট্যান্টাইন।
গত আড়াই বছর ধরে টানা ভাল খেলে চলেছেন তিনি। আই লিগ, ফেড কাপ থেকে আইএসএল— তাঁর পারফরম্যান্সের উপরে ভর করেই তো সাফল্য পেয়েছে মোহনবাগান থেকে আটলেটিকো দে কলকাতা। তবুও জাতীয় দলের ডাক পাননি উত্তরপাড়ার এই গোলকিপার।
তিনি— দেবজিৎ মজুমদার। দুরন্ত ফর্মের জন্য ময়দানে যাঁর নামই হয়ে গিয়েছে ‘সেভজিৎ’।
এ রকম মারকাটারি ফর্মের পরেও প্রশ্ন উঠছে কেন জাতীয় দলে ব্রাত্য এই বঙ্গসন্তান কিপার!
রবিবার শিলিগুড়িতে ডার্বি দেখতে এসে এই কারণটা পরিষ্কার করে দিলেন জাতীয় দলের কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন নিজেই। সবাইকে কিছুটা চমকে দিয়েই তিনি বলে দেন, ‘‘গত বছর ওকে ডাকা হয়েছিল, কিন্তু ও শিবিরে যোগ দেয়নি। তাই আমার মনে হয়েছে, ও দেশের জার্সিতে খেলতে আগ্রহী নয়। জাতীয় দলে ওর রাস্তা এখন বন্ধ।’’ নির্বিষ ডার্বির পর স্টিভনের এই মন্তব্যে হঠাৎ আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বিতর্কও।
জাতীয় কোচের এই মন্তব্য শুনে অবাক বাগান কর্তারা। ক্লাবের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত বলছেন, ‘‘কবে ওকে ডাকা হয়েছে, আর কোন ম্যাচের জন্য, সেটা স্টিভন আগে বলুক। আমার মনে পড়ছে না ওকে লিখিত ভাবে কখনও ভারতীয় দলের জন্য ডাকা হয়েছে বলে!’’
মোহনবাগান কর্তারা এ কথা বললেও স্টিভনের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গিয়েছে, গত বছর ২৬ মার্চ আইজলের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের আই লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচ ছিল। এর তিন দিন পর তুর্কমেনিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচে নাকি দেবজিৎকে টিমে ডাকা হয়। সবুজ-মেরুন কর্তারা তখন দাবি করেছিলেন, ফেডারেশন থেকে দেবজিতের বিমানের টিকিট না পাঠানোয় যেতে পারেনি এই বঙ্গসন্তান কিপার।
স্বভাবতই স্টিভনের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন কোচ ও ফুটবলাররা। সুব্রত ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘জাতীয় দলের কোচের কী ধরনের মানসিকতা! আসলে ভাইচুং ভুটিয়া-সহ বেশ কিছু ফুটবলারকে মাথায় বসানো হয়েছে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য। কিন্তু কোথায় যে উন্নতি হচ্ছে, কেউ জানে না। প্রাদেশিকতার শিকার হচ্ছে বাংলার ফুটবলাররা। স্টিভনকে এই মুহূর্তে বের করে দেওয়া উচিত এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মানসিকতার জন্য।’’
ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় আবার বলছেন, ‘‘কাদের কোচ করে নিয়ে আসা হচ্ছে! কোচ যদি এ রকম বিদ্বেষ দেখান কোনও বিশেষ প্লেয়ারের উপর, তা হলে তিনি যোগ্য দল কী ভাবে গড়ে তুলবেন?’’
ডেরেক পেরেরাও বললেন, ‘‘এটা উনি কেন বললেন, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। একজন প্লেয়ারকে জাতীয় দলে ডাকা হলে সে ইচ্ছাকৃত যাবে না, সেটা হতে পারে না। নিশ্চয়ই কোনও কারণ ছিল। ওর ক্লাব বা ফেডারেশনের সেটা জানা উচিত। সে ভাবে স্টিভনের সঙ্গে কথা বলা উচিত। না হলে প্লেয়ার পারফর্ম করা সত্ত্বেও অন্যায়ের শিকার হবে।’’
দেবজিৎ যাঁকে নিজের আইডল মনে করেন, সেই সন্দীপ নন্দী পুরো বিষয়টা জেনে হতবাক। তিনি আবার ক্লাব এবং ফেডারেশনকে দেবজিতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব প্লেয়ারই জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলার স্বপ্ন দেখে। এটা যে কোনও প্লেয়ারের কাছে বড় সম্মানের বিষয়। আর দেবজিৎ তো টানা ভাল খেলে চলেছে। এটাই তো জাতীয় দলে ঢোকার জন্য ওর আসল সময়। আমার মনে হয়, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। ক্লাব আর ফেডারেশন মিলিত ভাবে সেই জায়গাটা মিটিয়ে দিক। যাতে দেবজিৎ ওর পারফরম্যান্সের সঠিক মূল্য পায়।’’
(সহ-প্রতিবেদন: তানিয়া রায়)
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy