Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Rahul Dravid

Rahul Dravid: ফুলের সঙ্গে কাঁটাও, সংকল্প-সাধনাই মন্ত্র

সকলে এটাও দেখার অপেক্ষায় যে, ভারতীয় ড্রেসিংরুমে উপস্থিত নানা তারকা ক্রিকেটারের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নেন তারকা-কোচ। 

মহড়া: ভারতীয় দলের দুই রাহুল। কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে কে এল।

মহড়া: ভারতীয় দলের দুই রাহুল। কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে কে এল। ছবি পিটিআই।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৪
Share: Save:

রাহল দ্রাবিড়, জয়পুরের সওয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে স্বাগত। এ মাঠে ব্যাটসম্যান দ্রাবিড়ের সংগ্রহ মনে করিয়ে দেওয়া যাক। চারটি ওয়ান ডে ম্যাচে ৩৫। সর্বোচ্চ ২৮।

কোচ হিসেবে সেখানেই যাত্রা শুরু করছেন। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, দ্বিতীয় ইনিংসের রাস্তায় ফুলের সঙ্গে কাঁটাও থাকছে। সদ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুরমুশ হয়ে ফেরা। অধিনায়ক বদল নিয়ে চলতে থাকা বিশ্লেষণ। জৈব সুরক্ষা বলয়ে আটকে থাকা জীবন নিয়ে বিতর্ক। সকলে এটাও দেখার অপেক্ষায় যে, ভারতীয় ড্রেসিংরুমে উপস্থিত নানা তারকা ক্রিকেটারের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নেন তারকা-কোচ।

তারকা প্রথার মুখোমুখি আগেও হয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৪-এর মুলতান মনে করুন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় চোট পেয়ে বাইরে, আপনি অধিনায়ক। সচিন তেন্ডুলকর ১৯৪ ব্যাটিং, ডিক্লেয়ার করে দিলেন! পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক সফরের জন্য তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর বার্তা ছিল— ‘খালি ক্রিকেট নহী, দিল ভি জিতকে আইয়ে’। সত্যিই হৃদয় জিতে নিচ্ছিল টিম ইন্ডিয়া। আচমকা ওই ডিক্লেয়ারেশন ভারতীয় ক্রিকেট সংসারের অন্দরমহলে এমন আগুন জ্বালিয়ে দেয় যে, দিল-টিল সব উড়ে গিয়ে মহাভারতের যুদ্ধ লেগে যাওয়ার পরিস্থিতি!

দেখতে দেখতে মনে হয়েছিল, এক জন পার্টটাইম অধিনায়কের কী দুঃসাহস! হতে পারে আপনি ‘ব্যক্তি নয়, দল আগে’ মন্ত্রে দীক্ষিত এক সৈনিক। হতে পারে এর পর রাওয়ালপিন্ডিতে গিয়ে নিজে উদাহরণ সৃষ্টি করবেন ২৭০ রানের মাথায় রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়ে। ঐতিহাসিক সিরিজ় জয়ের সামনে ভারত, দলের চাই দ্রুত রান, তাই ট্রিপল সেঞ্চুরির হাতছানিও জলাঞ্জলি দিতে দু’বার ভাবেননি। তা বলে মহীরুহের ডাবল সেঞ্চুরি আটকে দেবেন?

কয়েক বছর আগেও আপনাকে বলতে শুনেছি, মুলতানের ডিক্লেয়ারেশন নিয়ে যা জবাবদিহি করতে হয়েছে, প্রত্যেক বার এক ডলার করে পেলে ‘মাল্টিমিলিয়নেয়ার’ হয়ে যেতেন! ভারতীয় ক্রিকেটে বড় নাম মানে ‘ওপিয়াম’। নেশার মতো আচ্ছন্ন করে রাখে মানুষকে। কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর আগে তাই চারপাশের তারকাদের দিকে ভাল করে চোখ বুলিয়ে নিন। ঠিক যে ভাবে ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে এসে চোয়াল শক্ত করে যোদ্ধা দ্রাবিড় গার্ড নিয়ে ফিল্ডিংটা দেখে নিতেন।

বিরাট কোহালি— ব্যাট করতে যান বাউন্ডারি লাইন পর্যন্ত বডিগার্ড রক্ষিত হয়ে। রোহিত শর্মা— পাঁচ বারের আইপিএল বিজয়ী। দুই অধিনায়ককে একই সঙ্গে সামলাতে হবে। এক জন আগুন, অন্য জন জল। আপনার আগে অনিল কুম্বলে ঘুরে গিয়েছেন। কোহালির সঙ্গে মধুচন্দ্রিমা টেকেনি। ধরুন বিদেশের মাঠে টেস্ট অধিনায়ক চাইলেন রবীন্দ্র জাডেজাকে। আপনি বললেন, না, অশ্বিন। কী হবে তখন? অথবা রোহিত বললেন, হার্দিক খেলবে। আপনি বললেন, আগে তো বল করুক। কী হবে? আপাত শান্ত রাহুল দ্রাবিড় কি তথন ওই বিজ্ঞাপনটার মতো ইন্দিরানগরের গুন্ডা হয়ে যাবে? চিৎকার করে বলবে, অ্যাই, ওভারটেক করছ কেন? সব কিছু ভেঙে ফেলতে উদ্যত হবে?

নতুন প্রজন্মের ট্যাটু সদস্যদের দিকে তাকান। আপনার রক্ষণশীল, মূল্যবোধের সংস্কৃতির সঙ্গে যাঁদের পৃথিবীর মিলই হয়তো খুঁজে পাবেন না। বিদেশে টেস্ট জিতে যাঁদের মুখে শোনা যায় শোলের মতো সংলাপ— ‘‘আমাদের এক জনকে খোঁচালে এগারো জন পাল্টা উত্তর দেবে।’’ যাঁদের কোটি কোটি ভক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর আপনি এখনও টুইটার অ্যাকাউন্টই খুলে উঠতে পারলেন না! নিজের কথা বলতে কেন যে ভাল লাগে না আপনার! নিজের ছবি দেখাতে কেন যে এত অনীহা!

ছেলেরা ম্যাচ জিতে টুইটারে কোচকে ট্যাগ করে ছবি, অভিনন্দন বার্তা দেবে কী ভাবে? ধোনি থেকে কোহালি— ভারতীয় দলের মহাতারকারা এখন টুইটারেই অবসর, অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা করেন। আপনাদের সময়ের মতো ও সব সাংবাদিক সম্মেলনের ধার ধারে না কেউ। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেস বিজ্ঞপ্তিও আসে তাঁদের টুইটার ঘোষণার পরে। বোর্ড কর্তারা নিজেরাও টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা নতুন কোচ তো জানতেই পারবেন না কেউ অবসর ঘোষণা করে দিলে!

আপনার ঘরানার দু’জনকে পেতে পারেন এখনকার ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। অজিঙ্ক রাহানে আর চেতেশ্বর পুজারা। একটা সময় পুজারাকে বলা হত, দ্বিতীয় দ্রাবিড়। এখন আর কেউ তুলনা-টুলনা করে না। বরং মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য নিন্দিত হচ্ছেন প্রায়ই। রাহানেও অন্ধকার সুড়ঙ্গে নিক্ষিপ্ত। ক্রিকেটজীবনে এই পরিস্থিতিতে পড়লে হয়তো আপনি চলে যেতেন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। নীচের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উপরের সিঁড়ি থেকে ভিজে টেনিস বল ছুড়তে বলতেন কাউকে। আর নিমগ্ন সাধকের মতো প্রস্তুতিতে ডুবিয়ে দিতেন নিজেকে। হয়তো খুঁজতেন সেই এলোমেলো, দুরন্ত গতির ফাস্ট বোলারকে। শ্রীনাথের থেকেও যিনি জোরে বল করতেন। কর্নাটকের নেটে যাঁকে কেউ খেলতে চাইত না। আর আপনি বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেন। যাতে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি পিচে গিয়ে বুক না কাঁপে।

এমনি-এমনি তো আর বিদেশে ব্যাটিং গড় তিপ্পান্ন নয়! ক্রিকেটজীবনে রাহুল দ্রাবিড় মানেই ছিল সংকল্প, সাধনার প্রতীক। সেই জাদুকাঠির ছোঁয়া পেলে পাল্টে যেতে পারে বহু কেরিয়ার। শুধু পুজারা-রাহানে নন, দু’বছরের উপরে সেঞ্চুরি পাননি কোহালি। মিডল অর্ডার বিদেশের মাঠে টেস্টে বড় ইনিংস গড়তে পারছে না। সেই খামতি নিয়েই অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে সফল হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে দেখে মনে হচ্ছে, ‘এক্সপায়ারি ডেট’ পেরিয়ে যাওয়া ব্যাটিং চলছে। যারা কপিবুক শটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়। রিভার্স সুইপ, স্কুপ, ল্যাপ বা হেলিকপ্টার শটের ঝুঁকি নেবে না। ক্রিকেটজীবনে যা করেননি, তা করতে হতে পারে গুরু রাহুলকে। আগামী বছর বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে আধুনিক টি-টোয়েন্টি শটের আলোকসজ্জায় সাজাতে হবে ঋষভদের। আর তার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বুধবার শুরু সিরিজ়েই।

বিজ্ঞাপনটায় সব কথা সত্যি বলা নেই। কে বলল আপনি রাগেন না? ২০১৪ আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালস জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে আপনার টুপি খুলে মাটিতে আছড়ে মারা কে ভুলতে পেরেছে! নতুন কোচের সেই অগ্নিশর্মা রূপ যেন দেখতে না হয়, রাহুল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Dravid India BCCI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE