Advertisement
E-Paper

ডার্বি-কম্প শুরু পাহাড়ে ওঠার শহর শিলিগুড়িতে

বিকেল চারটের সময় বিতর্কিত টিকিট নতুন লোগো লাগিয়ে আসবে। তা জেনেও সকাল দশটায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের কাউন্টারে লম্বা লাইন।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২১
আমরা তৈরি, ক্লাব তাঁবুর বাইরে সমর্থকদের আশ্বাস সনি-ডাফির।

আমরা তৈরি, ক্লাব তাঁবুর বাইরে সমর্থকদের আশ্বাস সনি-ডাফির।

বিকেল চারটের সময় বিতর্কিত টিকিট নতুন লোগো লাগিয়ে আসবে। তা জেনেও সকাল দশটায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের কাউন্টারে লম্বা লাইন।

ইস্টবেঙ্গলের জার্সি বা লোগো দেওয়া নানা স্মারক বিক্রির জন্য ক্লাবের দেওয়া স্টল বসে গিয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালই। জটলার ভিড়ও খারাপ নয়।

এর বাইরেও মাঠের চারপাশে অন্তত জনা চারেক ফেরিওয়ালা লাল-হলুদ টুপি, হেয়ার ব্যান্ড, পতাকা বিক্রি করছে দেদার।

শুক্রবার সকালে ডার্বির দু’দিন আগে স্টেডিয়াম চত্বর দেখে মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলের ‘দ্বিতীয় ঘরের মাঠে’ কি তা হলে সবুজ-মেরুন রংটাই ব্রাত্য হয়ে গেল!

ঘণ্টাখানেক পর স্টেডিয়ামের পাশে সেবক রোডের রাস্তায় কিন্তু একেবারে উল্টো ছবি। সেখানে কোথায় লাল-হলুদ? মোহনবাগান টিম হোটেলের দরজায় সনি, ডাফি, কাতসুমির পেল্লায় কাট আউট। সঙ্গে কোচ সঞ্জয় সেনেরও। একশো ফুটের একটা সবুজ-মেরুন পতাকা নিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে শ’খানেক যুবক। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাগান টিম বাস থেকে নেমে সনি-দেবজিৎরা হোটেলের সবুজ কার্পেটে পা দিতেই এমন একটা শব্দব্রহ্ম হল, যা শুনে মনে হচ্ছিল এটা রবিবার স্টেডিয়ামে উঠলে হয়তো কাঞ্জনজঙ্ঘার আবহ হয়ে যাবে যুবভারতীর মতো। ফুটবলারদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে, গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বরণটাও তো ছিল না গত বছরে হওয়া আই লিগের মোহন-ইস্টের ধুন্ধুমার ম্যাচে।

সকাল থেকে সন্ধে— শিলিগুড়িতে ঘুরে মনে হল, দশ মাস আগে এখানে যে আই লিগের কলকাতা ডার্বি হয়েছিল তাঁর সঙ্গে এ বারের মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। আই লিগে বহু-বহুদিন পর লিগ টেবলে এক এবং দু’নম্বরে থেকে মুখোমুখি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গল টিমে বদল বেশি। সব বিদেশিই ডার্বির মাঠে একেবারে আনকোরা। ভারতে আগে না খেলায় এই ম্যাচের মাহাত্ম্যটাই জানেন না প্লাজা-ওয়েডসনরা। যা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও হয়নি লাল-হলুদে। বাগানেও ডাফি আর এডু দু’জন নতুন। গত এপ্রিলে এখানকার সেই ম্যাচে সনি নর্ডি এসেও খেলতে পারেননি চোটের কারণে। বসে ছিলেন হোটেলে। তবে সনি দু’বছরে বুঝে গিয়েছেন বাংলার ফুটবলের ক্যানভাসে বড় ম্যাচ কতটা রং ছড়ায়।

ডার্বির আগে শহরে শেষ প্র্যাকটিসে লাল-হলুদের প্লাজা, ওয়েডসন ও রবিন সিংহ।

উত্তরবঙ্গ উৎসব আর বসে আঁকো প্রতিযোগিতার কল্যাণে কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঠে নানা জায়গায় ক্ষত। দু’টো গোল পোস্টের সামনে অসমান দগদগে মাটি। কিপারদের সমস্যা হবেই বল ওখানে ড্রপ পড়ার পর ধরতে গেলে। সাইডলাইনে বহু জায়গায় ঘাস নেই। মাটি দেখা যাচ্ছে। তা ছাড়া মোটা ঘাসের জন্য বরাবরই এই মাঠ বল প্লেয়ারদের বদ্ধভূমি। সংগঠকরা অবশ্য মাঠের শ্রী ফেরাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন সাতাশ হাজারি স্টে়ডিয়ামে। মাঠে আজ শনিবার দু’দল অনুশীলন করার পর অবশ্য মনোভাব জানা যাবে সঞ্জয় সেন আর ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের। টিকিট বিক্রি নিয়ে বিতর্ক থামলেও মাঠ নিয়ে যে নতুন কোনও ঢেউ উঠবে না সেটা কে বলতে পারে?

তার আগে অবশ্য শিলিগুড়িতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের সমর্থকদের তাতাতে নতুন রসদ উপহার দিতে শুরু করে দিলেন দুই কোচ। এই মাঠ মর্গ্যানের পয়মন্ত। ফেড কাপ জিতেছিলেন এখানে। তবে বাগানকে হারানোর রেকর্ড এখানে নেই তাঁর ঝুলিতে। সেটা মনে করিয়ে দিতে লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচের জবাব, ‘‘পয়মন্ত বা লাক এ সব জানি না। এখানে আমরা তিন পয়েন্ট নিতে এসেছি। এটা জিতলে লিগ পাব না। তবে অনেকটা এগিয়ে যাব।’’ এ কথা বললেও নিজেদের ফেভারিট বলতে রাজি হলেন না লাল-হলুদের সাহেব কোচ। এয়ারপোর্ট থেকে বাইক মিছিলের অভর্থ্যনায় টিম হোটেলে পৌঁছে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা টানা ছ’টা ম্যাচ জিতেছি ঠিক। তবে এএফসি-র ম্যাচ ধরলে বাগান আমাদের চেয়ে বেশি জিতেছে। তা হলে আমরা ফেভারিট হলাম কী করে? তবে আমাদের ছেলেরা জেতার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই এখানে এসেছে।’’ মর্গ্যান ব্রিটিশ। চতুরতা তাঁর মজ্জাগত। কথা বললেই বোঝা যায় এটা তাঁর কৌশল। সাংবাদিকদের সামনে এসে সেটাও দেখালেন তিনি। মোড়কে পুরে রাখলেন নিজেকে। তাঁর দলের চার নম্বর বিদেশি ক্রিস পেইন খেলার আগে এখানে এলেও তাঁকে ফাটকা হিসাবে খেলাবেন কি না সেটাও খোলসা করেননি লাল-হলুদ কোচ।

ওয়েডসনদের কোচ তাঁর ডার্বির আগের পুরনো স্ট্র্যাটেজি বজায় রাখলেও তাঁর টিমের স্টপার বুকেনিয়া বরং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বাগান ফরোয়ার্ড লাইনকে। ডাফি-জেজে দু’জনে মিলিতভাবে দশ গোল করে চমকে দিলেও (যা অন্য কোনও টিমের জোড়া স্ট্রাইকারের নেই) বুকেনিয়া বলে দিয়েছেন, ‘‘বাগানের রক্ষণ সেরা মানি না। ওদের সনিকে নিয়েও আমাদের আলাদা কোনও পরিকল্পনা নেই। বাগানকে হারানোর জন্যই আমাদের আসা।’’ রক্ষণ থেকে উঠে এসে ইতিমধ্যেই তিন গোল করেছেন উগান্ডার এই স্টপার। ‘‘রবিবার সুযোগ পেলে আবার উঠে গিয়ে গোল করে আসব।’’ হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন তিনি। যা শুনে কোনও মন্তব্য না করলেও ফোন ধরে হেসেছেন সনি। চোখ টিপেছেন জেজে। নিষেধাজ্ঞা আছে তাই বাগানে কথা বলছেন না কেউই। যা বলার বলছেন তাঁদের কোচ। টিম ঢোকার পর সনি-ডাফিদের নিয়ে উচ্ছ্বাস আর হুড়োহুড়ি এবং সেলফি তোলার বহর দেখে চটে গেলেও বাগান কোচ সঞ্জয় সেন আবার বুকেনিয়ার পাল্টা তোপ দেগেছেন। ‘‘ওরা ছ’টা ম্যাচ জিতেছে বলে ভাল টিম বলেছি। তাই বলে ওরা ফেভারিট কে বলেছে? লোকে বাংলাও বোঝে না! ম্যাচটা আমরাই জিতব, বলে দিয়ে গেলাম।’’ বলতে বলতে টিম হোটেলের লিফটে উঠে পড়েন বাগানকে তেরো বছর পর আই লিগ জেতানো কোচ। গতবার শাস্তির কারণে রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে পারেননি সঞ্জয়। এখনও মনে করেন শিলিগুড়িতে গত এপ্রিলের ডার্বিতে তিনি থাকলে জেজে-কে পেনাল্টি মারতে পাঠাতেন না। ম্যাচটাও তাঁর টিম হারত না।

মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল শিলিগুড়ির হোটেলে তাঁবু ফেলার পর শহরের চেহারাটাই বদলাতে শুরু করেছে। কলকাতা থেকে প্যাকেজ ট্যুরে ডুয়ার্স, লোলেগাঁও, পেলিং দেখানোর প্যাকেজে ডার্বি ঢুকিয়ে আসতে শুরু করেছে বহু বাস। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে অন্তত ছয় হাজার মানুষ আসছেন একসঙ্গে রথ দেখা এবং কলা বেচার আশায়। তাতে অবশ্য লাল-হলুদের সমর্থকই বেশি। টিকিট বিক্রির যা ট্রেন্ড তাতে মাঠেও নাকি সত্তর শতাংশই থাকবে ‘কাইট্যা ফ্যালামু, হারাইয়া দিমু’ বাহিনী। সেটা কি বাগানের নৌকো ডুবিয়ে দেওয়ার শিঙ্গা হয়ে দেখা দেবে স্টেডিয়ামে। না কি আরও তাতিয়ে দেবে সনি-ডাফিদের।

রবিবার রাতে যাই হোক পাহাড়ে ওঠার শহরে কিন্তু ডার্বির ভূকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস ও সুদীপ্ত ভৌমিক।

Sony Norde Darryl Duffy Siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy