Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘স্ট্রাইড’ কমিয়ে রানের খোঁজে নতুন ধোনি

কাঁচা-পাকা দাড়িটা ইদানীং রাখছেন না। হঠাৎ দর্শনে আগের চেয়ে তাই অনেক বেশি ফিটফাট, ফ্রেশ। সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হতে না হতে তাঁর সামনে রাখা সাংবাদিকদের মোবাইলের একটা বাজতে শুরু করল। অবলীলায় ফোন কানে তুলে নিজেই ‘হ্যালো’ বলে ফেললেন। উল্টো দিক থেকে কী শুনলেন কে জানে, মুচকি হেসে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন।দু’একটা প্রশ্ন পরে ফের মোবাইল উপদ্রব।

নতুন স্টান্স। নতুন মহড়া।

নতুন স্টান্স। নতুন মহড়া।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কানপুর শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:২৭
Share: Save:

কাঁচা-পাকা দাড়িটা ইদানীং রাখছেন না। হঠাৎ দর্শনে আগের চেয়ে তাই অনেক বেশি ফিটফাট, ফ্রেশ।
সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হতে না হতে তাঁর সামনে রাখা সাংবাদিকদের মোবাইলের একটা বাজতে শুরু করল। অবলীলায় ফোন কানে তুলে নিজেই ‘হ্যালো’ বলে ফেললেন। উল্টো দিক থেকে কী শুনলেন কে জানে, মুচকি হেসে ফোনটা নামিয়ে রাখলেন।দু’একটা প্রশ্ন পরে ফের মোবাইল উপদ্রব। একটুও বিরক্ত না হয়ে এ বার ফোনটা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের হাতে তুলে দিতে গেলেন। ভদ্রলোক নার্ভাস হয়ে মোবাইলটা নিলেন ঠিকই, কিন্তু পিছনের কভারটা পড়ে থাকল। একমুখ হাসি নিয়ে সেটাও এ বার এগিয়ে দিলেন প্রবীণ সাংবাদিকের দিকে।
পাঁচ মিনিটও গেল না, আলটপকা অবিন্যস্ত হিন্দিতে একজনের প্রশ্ন, রাঁচিতে কোন দুর্ঘটনায় নাকি কয়েকজন তরুণ আহত হয়েছেন। তিনি কি তাদের আর্থিক সাহায্য করবেন? মিডিয়া ম্যানেজার একরাশ বিরক্তি নিয়ে ‘পরের প্রশ্ন’ বলার আগে হাসতে হাসতে তাঁর জবাব, ‘‘লগতা হ্যায় আপ গলত প্রেস কনফারেন্স মে আ গয়ে হ্যায়!’’
শনিবার মিডিয়ার সামনে আবির্ভূত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেন মানসিক ভাবেও আগের চেয়ে বেশি ফিটফাট, ফ্রেশ।
আর টিম ইন্ডিয়ার নেটে আবির্ভূত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি?
সেখানেও নতুন চমক। তিনটে নেটের মধ্যে বাউন্ডারি লাইনের ঠিক পাশেরটায় তিনি আসতে যেটা দেখা গেল। প্রথমে খালি চোখে, পরে ইউটিউবে তাঁর ব্যাটিংয়ের পুরনো ভিডিও দেখে যা নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়। ব্যাটিং স্ট্রাইড কিছুটা হলেও পাল্টে ফেলেছেন এমএসডি। কমিয়ে এনেছেন দু’পায়ের মধ্যেকার ব্যবধান। যার আপাত অর্থ, শট খেলার জন্য নিজেকে সেকেন্ডের কয়েক ভগ্নাংশ বেশি দিতে চাইছেন ভারত অধিনায়ক। আরও গভীরে গেলে হয়তো পাওয়া যাবে তাঁর নতুন সংকল্পের সন্ধান। রান খরা কাটানোর সংকল্প, সাম্প্রতিক সমালোচনার ক্রিকেটীয় পাল্টা দেওয়ার সংকল্প।

এই নব অন্বেষণের পথে ধোনি এতটাই একাগ্র যে, পারিপার্শ্বিক তাঁর মনে দাগ কাটছে বলে মনেই হচ্ছে না। মাঠে ঢুকে কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে যাচ্ছেন উইকেট দেখতে। দীর্ঘক্ষণ কথা বলছেন পিচ কিউরেটরের সঙ্গে। ট্রেনিং শেষে গন্তব্য ফের গ্রিন পার্কের বাইশ গজ। দেখে নিতে হবে, দুপুরে দেওয়া জল ঠিকঠাক শুকোল তো? কানপুরের কান পুড়িয়ে দেওয়া রোদ্দুরে পিচে বেশি ফাটল ধরল না তো? যেটুকু ঘাস আছে, তাতে পিচের বাঁধন অটুট থাকবে তো?

ধোনি যখন নেটে ব্যাট করছেন, একটু দূরে বিশাল ছাতার ছায়ায় বসে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা। দমকা হাওয়ায় উড়ে যেতে বসা ছাতাটা ধরতে গিয়ে আর একটু হলে পড়েই যাচ্ছিলেন বিরাট। সেটা নিয়ে একচোট হাসাহাসি হয়ে গেল টিমের মধ্যে। কিন্তু তিনি, এম এস ধোনি নির্বিকার। একটু পরে নেটের পাশে টকটকে লাল টি-শার্ট পরা রাজীব শুক্লর রংচঙে, চোখে পড়ার মতো উদয়। প্রায় গোটা টিম এগিয়ে গেল তাঁর দিকে। কিন্তু তিনি, ধোনি একবার তাকালেনও না। একমনে বোলারকে পরের পর বল টাঙিয়ে দিতে থাকলেন। কোনওটা গ্যালারিতে, কোনওটা মাঠের চৌহদ্দি পেরিয়ে।

‘আহত’ বোলারের নাম, উমেশ যাদব। ওয়ান ডে টিমে যোগ দেওয়া পেসার রবিবার প্রথম এগারোয় থাকবেন কি না, নিশ্চিত নয়। নেটে টানা বল করলেন ঠিকই, কিন্তু তার আগে ধোনি বলে গিয়েছেন, গ্রিন পার্কের লো, স্লো উইকেটে গতির আগে তাঁর চাই সঠিক লাইন আর লেংথ। বলে গিয়েছেন, উমেশের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাবের কথা। সে দিক দিয়ে দেখলে উমেশের চেয়ে ভুবনেশ্বর বা মোহিত শর্মা এগিয়ে।

তার উপর রবিবার নাকি তিন স্পিনার খেলানোর চিন্তা নিয়ে নাড়াচাড়া চলছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টে। ধোনি বলেও গেলেন, ‘‘এখানে ম্যাচ সকাল ন’টায় শুরু। শিশির ফ্যাক্টর নেই। কানপুর এমন একটা মাঠ যেখানে তিন স্পিনারে যাওয়া যেতেই পারে। আমরা সেটা ভাবছিও। দেখা যাক।’’ অমিত মিশ্র যে ভাবে টানা বল করে গেলেন, তাতে অশ্বিনের সঙ্গী হিসেবে তাঁকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তৃতীয় স্পিনার স্লটের জন্য অক্ষর পটেল আছেন। যিনি এ দিন বলের পাশাপাশি ব্যাটটাও করলেন। সে ক্ষেত্রে এক পেসারে চলে যেতে পারে ভারত। তবে রায়নাকে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে যদি চালানো হয়, উমেশ সুযোগ পেলেও পেতে পারেন।

এ সবের মধ্যে যাঁকে মোটামুটি খরচের খাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হল, তিনি অজিঙ্ক রাহানে। ও টপ অর্ডারে বেশি স্বচ্ছন্দ, চার নম্বরটাও জায়গা নয়, ছয় বা সাতে আমাদের অলরাউন্ডার চাই যে ডেথে বলটাও করতে পারবে— ভারত অধিনায়কের এহেন সব মন্তব্যে রাহানের ভাগ্যে আপাতত সিলমোহর পড়ে গিয়েছে। অবশ্য তাতে চুপচাপ মুম্বইকর হতাশায় আরও চুপচাপ হয়ে গেলে বোধহয় ভুল করবেন।

ক্রিকেট এমনই নিষ্ঠুর অধিপতি, যে তার অসীম শৌর্যসম্পন্ন সেনাপতিকেও ক্রিকেট-বার্ধক্যের দোরগোড়ায় নতুন লড়াইয়ে নামার হুকুম দেয়। সেখানে তিনি, রাহানে তো নিছকই এক পদাতিক সৈন্য মাত্র!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE