Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Dipa Karmakar

নতুন ভল্ট নিয়ে প্রত্যাবর্তনের সংকল্প দীপার

দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে নতুন ভল্ট-অস্ত্রে শান দিয়ে ফিরতে তৈরি রিয়ো অলিম্পিক্সে ইতিহাস তৈরি করা ভারতীয় জিমন্যাস্ট।

আশাবাদী: চোট কাটিয়ে নিজেকে ফের প্রমাণ করতে চান দীপা।

আশাবাদী: চোট কাটিয়ে নিজেকে ফের প্রমাণ করতে চান দীপা। ফাইল চিত্র।

কৌশিক দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

গত কয়েক বছরে চোট-আঘাত তাঁকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে। যে টোকিয়ো অলিম্পিক্সকে পাখির চোখ করে একটা সময় এগোচ্ছিলেন তিনি, তা এখন অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং লকডাউন তাঁর ফিরে আসার পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাও হাল ছাড়েননি দীপা কর্মকার এবং তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে নতুন ভল্ট-অস্ত্রে শান দিয়ে ফিরতে তৈরি রিয়ো অলিম্পিক্সে ইতিহাস তৈরি করা ভারতীয় জিমন্যাস্ট।

টোকিয়ো অলিম্পিক্সে এ বার ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক। দীপার কি এ বারের অলিম্পিক্সে নামার কোনও সম্ভাবনা আর আদৌ রয়েছে? কোচ বিশ্বেশ্বরবাবুর লক্ষ্য থেকে এখনও টোকিয়ো মুছে যায়নি। আগরতলা থেকে ফোনে দীপার গুরু বলছিলেন, ‘‘৩০ জুন আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে। যদি যোগ্যতা অর্জনের জন্য আর কোনও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে দীপা সেখানে নামবে। তার জন্য আমরা পুরোপুরি তৈরি আছি।’’

২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিক্সে দীপা আর প্রোদুনোভা ভল্ট প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তার পরে চোট পাওয়ায় এই ভল্ট থেকে আপাতত দূরে সরে এসেছেন দীপা। গত কয়েক বছর ধরেই প্রোদুনোভা ভল্ট দিচ্ছেন না রিয়ো অলিম্পিক্সে চতুর্থ হওয়া জিমন্যাস্ট। ইচ্ছে ছিল, অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিতে আবার এই ভল্টকে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু তা হয়নি। তাই অস্ত্র করেছেন নতুন ভল্টকে। কী সেই ভল্ট? বিশ্বেশ্বরবাবুর কথায়, ‘‘স্ট্রেট বডি সমারসল্ট উইথ ৫৪০ ডিগ্রি টার্ন। প্রোদুনোভার বদলে এটাই দিচ্ছে দীপা। সঙ্গে পুরনো সুকাহারা ৭২০।’’

এই ভল্টের সাহায্যে ফিরে আসার জন্য কতটা তৈরি দীপা? ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ২৭ বছর বয়সি এই মেয়ে বলেছেন, ‘‘এই ভল্টের সঙ্গে দারুণ ভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছি। স্যর যে ভাবে বলেছেন, সে ভাবে তৈরি হয়েছি। আমি এখন প্রতিযোগিতায় নামতে তৈরি।’’ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে বছর আড়াই বেশি দূরে থাকলেও ছাত্রীকে নিয়ে আশাবাদী কোচ। বলছেন, ‘‘যদি শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্সের জন্য কোনও প্রতিযোগিতা হয়, তা হলে দেখবেন দীপা সেখানে দারুণ ফল করবে। অলিম্পিক্সের ছাড়পত্রও জোগার করে নেবে।’’ কিন্তু কোচ এবং তাঁর ছাত্রী জানেন, সে রকম কোনও প্রতিযোগিতা হওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।

দীপাকে কি আর তা হলে প্রোদুনোভা দিতে দেখা যাবে না? কোচ সে কথা বলছেন না। কিন্তু দুটো ব্যাপার দীপাদের মাথায় রাখতে হচ্ছে। এক, বিপজ্জনক ভল্ট বলে চোট পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। দুই, আন্তর্জাতিক জিমন্যাস্টিক্স সংস্থা এই ভল্টের ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ কমিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, ভাল ভল্ট দিলেও বেশি নম্বর পাওয়া যাবে না। যে কারণে অনেক জিমন্যাস্টই আর এই ভল্ট দিতে আগ্রহ দেখান না। বিশ্বেশ্বরবাবু বলছিলেন, ‘‘আমরা কিন্তু প্রোদুনোভা একেবারে ভুলে যাব না। এই মুহূর্তে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছি না। স্ট্রেট বডি সমারসল্টও কঠিন ভল্ট, কিন্তু অতটা ঝুঁকির নয়।’’

এ বারের অলিম্পিক্সে না হলে দীপার চোখ থাকবে পরের বছরের এশিয়ান এবং কমনওয়েলথ গেমসের দিকে। গত তিন মাস ধরে নিয়মিত অনুশীলন করে চলেছেন তিনি। কিন্তু আবার লকডাউনের জেরে ধাক্কা খেয়েছে সেই প্রস্তুতি পর্ব। ‘‘করোনার ধাক্কা কিছুটা কমার পরে দারুণ চলছিল দীপার অনুশীলন। আগরতলার জিমন্যাস্টিক্স হল-এ প্রত্যেক দিন তিন, তিন করে ছ’ঘণ্টা অনুশীলন চলত আমাদের। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি,’’ বলছেন দ্রোণাচার্য জয়ী কোচ। যাঁর হাত ধরেই আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন দীপা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dipa Karmakar Gymnast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE