Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

খেলরত্নের মঞ্চেও অনুশীলন আর পরীক্ষার চিন্তায় দীপা

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কার নিয়ে আপ্লুত দীপা কমর্কার! ভারত-সেরা জিমন্যাস্ট অবশ্য আরও খুশি তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর দ্রোণাচার্য পুরস্কারে। এ দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে ভারতের তিন কন্যা পি ভি সিন্ধু, সাক্ষী মালিক ও দীপা কমর্কারকে নিয়েই হুড়োহুড়িটা ছিল সবচেয়ে বেশি।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান তুলে দিলেন তাঁদের হাতে। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়াসম্মান তুলে দিলেন তাঁদের হাতে। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে।

স্বপন সরকার
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৭
Share: Save:

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে রাজীব গাঁধী খেলরত্ন পুরস্কার নিয়ে আপ্লুত দীপা কমর্কার! ভারত-সেরা জিমন্যাস্ট অবশ্য আরও খুশি তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর দ্রোণাচার্য পুরস্কারে।

এ দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে ভারতের তিন কন্যা পি ভি সিন্ধু, সাক্ষী মালিক ও দীপা কমর্কারকে নিয়েই হুড়োহুড়িটা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে শুধু রাষ্ট্রপতি ভবনেই নয়, তিন জনকে ঘিরে ভিড়টা ছিল সকাল থেকেই। তারই মধ্যে সকালে কোনও রকমে দীপাকে ধরা গেল হোটেলে। ত্রিপুরার মেয়ে ছিলেন দারুণ খোশমেজাজে। নিজের ট্রেডমার্ক হাসিটা দিয়ে বললেন, ‘‘আমার পাশাপাশি আমার কোচও দ্রোণাচার্য পাওয়ায় আমি আজ ভীষণ খুশি। তবে এ বার এই পুরস্কারের মান রাখতেই হবে। আমার লক্ষ্য অলিম্পিক্সের সোনার মেডেল। তার জন্য টোকিওয় নিজেকে উজাড় করে দেব।’’ সদ্য খেলরত্ন সম্মান পেয়েছেন। কোথায় সেই অনুভূতি তারিয়ে উপভোগ করবেন, তা না দীপার মাথায় ঘুরছিল জিমন্যাশিয়াম। বললেন, ‘‘আমার জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই যেহেতু জিমন্যাশিয়ামে কাটে, তাই যত তাড়াতাড়ি পারি সেখানেই ফিরে যেতে চাই।’’

তবে তারও আগে রয়েছে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা। দীপা বলছিলেন, ‘‘এখন আমি খুব তাড়াতে আছি। আগামিকাল আমার পরীক্ষা রয়েছে। কাল সকাল দশটায় আগরতলা পৌঁছোব। তার পর সোজা গিয়ে পরীক্ষায় বসব।’’ আর দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর বলছিলেন, ‘‘এটা আমার কাছে একটা বিরাট সম্মান। দীপা ছাড়া আরও কয়েক জন জিমন্যাস্টকে নিজের হাতে তুলেছি। তবে এটা বলতেই পারি যে দ্রোণাচার্য সম্মানটা দীপাই আমাকে পাইয়ে দিল।’’

যে হোটেলে তিন জন উঠেছিলেন, তার সামনে সোমবার সকাল থেকেই স্পনসরদের জমায়েত। তিন মেয়ের হোটেলের ঘরের বাইরে তো লাইনই পড়ে যায় স্পনসরদের। অলিম্পিক্স তারকাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপণে নামতে রাজি করানোর জন্য ঝুলোঝুলি। সেই ভিড় সরিয়ে সিন্ধু-সাক্ষীদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছনোই ছিল দায়। তবু রিও থেকে অলিম্পিক্সে রুপোজয়ী দেশের প্রথম মেয়েকে ধরা গেল একটা সময়। পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু নিজের খেলরত্ন সম্মান নিয়ে বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, এই পুরস্কার আমাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছনোর প্রেরণা দেবে। তবে এখন থেকে আমি ঠিক করেছি, প্রত্যেকটা টুনার্মেন্টে খেলব না। দেখে শুনে, বেছে বেছে টুনার্মেন্টে নামব।’’


চার খেলরত্ন সাক্ষী মালিক, জিতু রাই, দীপা কর্মকার ও পিভি সিন্ধু।

দীপার মতো একই হাল সাক্ষী মালিকেরও। কিন্তু রিও থেকে দেশে ফেরার পর আখড়া-মুখো হওয়ার সুযোগটাই পাননি ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগির। গত ক’দিন তাঁকে ঘিরে হইচইটা উপভোগ করেছেন ঠিকই, কিন্তু এ বার আখড়ার টানটাই প্রবল হচ্ছে। সাক্ষী বললেন, ‘‘মেয়েদের কুস্তিতে আমিই প্রথম অলিম্পিক্স পদক এনেছি। তাই যেখানে যাচ্ছি, একের পর এক সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে আমাকে। আর এখানে স্পনসররা আমাদের নিয়ে এত বেশি টানাটানি করছে যে আমি অনেকটাই বিরক্ত। কারণ বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে একদমই বসা হচ্ছে না। কবে যে আবার কুস্তির আখড়ায় ফিরব সেটাও আমি জানি না।’’

তিন কন্যার সঙ্গে এ বারের খেলরত্ন সম্মান ভাগ করে নিয়েছেন শ্যুটার জীতু রাই-ও। যিনি বলেই ফেললেন ‘‘রিও থেকে খালি হাতে ফিরেছি। তা সত্ত্বেও রাজীব খেলরত্ন পুরস্কার পাওয়ায় আমি বেশ অবাক!’’ তবে চাইছেন রিওয় যা পারেননি, পরের বার সেটাই করে দেখিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে। মেনে নিলেন, প্রথম অলিম্পিক্সে নামার মানসিক চাপটা তাঁকে কাবু করেছিল। জিতুর কথায়, ‘‘আমি পদক দিতে না পারলেও খেলাধুলোয় দেশের সেরা সম্মান আমাকে দেওয়া হল। এর মান রাখতে হবে। কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে দেশকে একটা অলিম্পিক্স পদক এনে দেবই। রিও যেহেতু আমার প্রথম অলিম্পিক্স ছিল, মানসিক চাপটা সামলাতে পারিনি।’’

এঁদের পাশে রিওয় কুস্তির ম্যাটে হাঁটুতে চোট পাওয়া কুস্তিগির বিনেশ ফোগত অর্জুন পুরস্কার নিতে এলেন হুইলচেয়ারে বসে। পুরস্কার নিয়ে ধরা গলায় বললেন ‘‘রাষ্ট্রপতি ভবনে আমাকে দেখে অনেকেই ভেবেছে আমি বোধ হয় কোনও প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়। কেউ চিনতেই পারল না। এই আফসোসটা রয়ে গেল। তবে আমি চেষ্টা করব, রিওতে যা পারলাম না টোকিওয় সেটা করে দেখাতে। পদক জিতে এই দুঃখটা মিটিয়ে নেব।’’

বিনেশের মতোই অজুর্ন সম্মান পেলেন বাংলার তারকা গোলকিপার সুব্রত পাল ও টেবলটেনিসের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সৌম্যজিৎ ঘোষ।

ছবি: প্রেম সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE