Advertisement
০৫ মে ২০২৪
‘নাইটদের তাতিয়েছে শাহরুখ ভাইয়ের টুইট’

ইডেনে দু’টো ম্যাচ জিতে ফাইনালে যাব, ভবিষ্যদ্বাণী উথাপ্পার

কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে তিনি ‘রবিনহুড’। যখনই দল বিপদে পড়েছে, তখনই তাঁর চওড়া ব্যাট সেই বিপদ সামলেছে। সব শেষে বুধবারের কেকেআর-রাজস্থান ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতেও ভুললেন না তিনি।

আত্মবিশ্বাসী: কেকেআর ছন্দে ফিরেছে, মনে করেন উথাপ্পা। মঙ্গলবার টিম হোটেলে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আত্মবিশ্বাসী: কেকেআর ছন্দে ফিরেছে, মনে করেন উথাপ্পা। মঙ্গলবার টিম হোটেলে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে তিনি ‘রবিনহুড’। যখনই দল বিপদে পড়েছে, তখনই তাঁর চওড়া ব্যাট সেই বিপদ সামলেছে। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন প্লে-অফ ম্যাচে নামার ২৪ ঘণ্টা আগে টিম হোটেলে বসে আনন্দবাজার-কে দীর্ঘ, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন রবিন উথাপ্পা। যেখানে উঠে এল মুম্বই বিপর্যয়ের পরে শাহরুখ খানের করা টুইট নিয়ে দলের মনোভাব, নাইটদের সাফল্যের রসায়ন, নিজের ব্যাটিং দর্শন-সহ নানা প্রসঙ্গ। সব শেষে বুধবারের কেকেআর-রাজস্থান ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতেও ভুললেন না তিনি।

প্রশ্ন: সবাই বলছেন, কেকেআর ঠিক সময়ে সেরা ফর্মে পৌঁছেছে। সেরা খেলাটা খেলছে। আপনি কী বলবেন?

রবিন উথাপ্পা: এই আইপিএলে আমরা একটু অদ্ভুত ক্রিকেট খেলছি। কখনও দুর্দান্ত, কখনও বা অতি সাধারণ। শেষ তিনটে ম্যাচ থেকে আমরা সেরা খেলাটা খেলছি। আমার সেই ২০১৪ সালের আইপিএলের কথা মনে পড়ছে। তখন এমন অবস্থা হয়েছিল, কেউ আমাদের ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেনি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ন’টা ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এ বারও মনে হচ্ছে, সেই ছন্দটা পেয়ে গিয়েছি। ২০১৪ সালের মতোই ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছি।

প্র: ইডেনে আপনাদের দু’টো প্লে-অফ ম্যাচ। এটা তো কেকেআরের পক্ষে বিরাট সুবিধে।

উথাপ্পা: অবশ্যই। ঘরের মাঠের সুবিধে তো পাবই। সব চেয়ে বড় সুবিধেটা কী জানেন? ইডেনের দর্শক। আমি তো ইডেনের দর্শককে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে দেখি। সরি, শুধু দ্বাদশ নয়। দলের তেরো, চোদ্দো, পনেরো, ষোলো নম্বর সদস্য হিসেবেও দেখি। ওদের সামনে ভাল খেলার একটা আলাদা প্রেরণা পাওয়া যায়।

প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, এই ইডেনের পিচে স্পিনাররা নন, পেসাররাই বেশি সাহায্য পাবেন। বাউন্স থাকবে উইকেটে।

উথাপ্পা: গত এক বছর ধরেই ইডেনের পিচের চরিত্র বদলে গিয়েছে। এ বারও আমরা খুব ভাল পিচে খেলছি। যে জন্য দাদা (সৌরভ) এবং সিএবিকে ধন্যবাদ। আশা করি, বুধবারের পিচও আমাদের পছন্দসই হবে। সমান বাউন্স থাকলে স্ট্রোক খেলারও সুবিধে হয়।

প্র: রাজস্থানের দু’জন প্রধান ক্রিকেটারই দলে নেই। জস বাটলার এবং বেন স্টোকস। এই দলের বিরুদ্ধে তো আপনারা অনেক এগিয়ে শুরু করবেন?

উথাপ্পা: ভুলে যাবেন না, বাটলার-স্টোকস ছাড়াই আরসিবি-র মতো দলকে হারিয়েছিল রাজস্থান। আমরা সব সময়ই বিপক্ষকে সম্মান করি। কাউকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। আমাদের কাজ হবে মাঠে নেমে সেরাটা দেওয়া।

স্নেহ: ছেলে নীলের সঙ্গে হোটেলের সুইমিং পুলে উথাপ্পা। মঙ্গলবার। ছবি: টুইটার

প্র: দেখা যাচ্ছে, ইডেনে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ৯ মে-র ওই বিপর্যয়ের পর থেকে টানা জিতে চলেছে দল। মুম্বই ম্যাচে একশোর বেশি রানে হারটা কি দলকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে? নিজেদের প্রমাণ করার তাগিদটা আরও বেশি করে দেখা দিয়েছে?

উথাপ্পা: আপনার এই প্রশ্নের উত্তরটা আমি এক সপ্তাহ পরে দিতে চাই। আমি বলেই দিতে পারি, ওই হার আমাদের অনেক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তুলেছিল। কিন্তু শুধু বললে হবে না, আমরা কাজটা করে দেখাতে চাই। আগামী রবিবার আইপিএল ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পরে লোকে বুঝবে ওই হারটা আমাদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল। অপেক্ষা করে দেখুন, তার ফল কী হল।

প্র: মুম্বই ম্যাচটার পরে শাহরুখ খানও খুব হতাশ হয়েছিলেন। টুইট করে ক্ষমা চান, দলের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এখন কি শাহরুখ হাসছেন?

উথাপ্পা: (হেসে উঠে) শাহরুখ ভাইয়ের মতো মানুষ হয় না। জয় (মেটা) ভাই, জুহিজি (চাওলা)— সবাই আমাদের পাশে থাকেন। আমরা ওদের হতাশ করলেও কাঁধে হাত রেখে বলেন, আজ হয়নি তো কী হয়েছে, পরের দিন হবে। কখনও চাপ দেন না।

প্র: কিন্তু শাহরুখের ওই টুইটটা...

উথাপ্পা: (একটু গম্ভীর হয়ে গিয়ে) সে দিন আমাদের পারফরম্যান্স সবাই দেখেছিল। শাহরুখ ভাই যে কথা আমাদের সম্পর্কে বলেছিলেন, একেবারে ঠিক বলেছিলেন। আর হ্যাঁ, ওই টুইটটা আমাদেরও তাতিয়ে দিয়েছিল মাঠে নেমে আরও ভাল খেলার জন্য।

প্র: নিলামের পরে কেকেআর নিয়ে বলা হয়েছিল, দলটা সে রকম মজবুত হয়নি। রিজার্ভ বেঞ্চ শক্তিশালী নয়। সবাইকে তো ভুল প্রমাণ করেছেন আপনারা।

উথাপ্পা: আমাদের দলে সে রকম কোনও বড় নাম হয়তো নেই, কিন্তু প্রথম ১১-১২ জন ক্রিকেটারের সবাই খুব ভাল টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়। তারুণ্যের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিশেলটাও খুব ভাল হয়েছে। এই তো সে দিন আমি, দীনেশ (কার্তিক) বলাবলি করছিলাম, আগামী দশ বছরের জন্য আমাদের দল নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। এটা কেকেআর ম্যানেজমেন্টের দূরদৃষ্টির পরিচয়।

প্র: কেকেআর এ বার মাত্র ১৯ জন খেলোয়াড়কে দলে রেখেছিল। এত কম ক্রিকেটারে সমস্যা হয়নি?

উথাপ্পা: আমি উল্টোটা বলব। কম ক্রিকেটার হওয়ায় লাভই হয়েছে। সবাই বেশি করে একাত্ম হয়ে গিয়েছে দলের সঙ্গে। একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি আমরা। খুব বেশি ক্রিকেটার থাকলে, দু’-চার জনের মনে হতেই পারে, তারা ঠিক একাত্ম হতে পারছে না। খুব ভাল ম্যানেজমেন্ট হওয়ায় কেকেআরে এই সমস্যাটা হয়নি। কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যায়।

প্র: আপনাদের এই দলের সব চেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট কী?

উথাপ্পা: দলগত সংহতি। আমাদের মধ্যে কোনও ব্যক্তিত্বের সংঘাত নেই। কেউ নিজেকে নিয়ে অহঙ্কার করে না। আইপিএলের মতো বড় প্রতিযোগিতায় যে ব্যাপারটা খুবই প্রয়োজন। দেখুন, প্রতিভা অনেকেরই আছে। কিন্তু যারা দলের জন্য খেলবে, নিজের স্বার্থ দেখবে না— এ ধরনের ক্রিকেটার থাকা খুবই প্রয়োজন। এ ছাড়া আমাদের ভক্তরা তো আছেই। যারা দুঃসময়ে আমাদের পাশে থাকে। ওরাও আমাদের শক্তি।

প্র: আপনি ছন্দে থাকলেও বড় রান সে ভাবে পাননি। কী ভাবে দেখছেন ব্যাপারটা?

উথাপ্পা: আমার ফর্ম নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। নিয়মিত রানও পাচ্ছি। এখন লক্ষ্য, শেষ পর্যন্ত থেকে দলকে জেতানো। আসলে গত বছর থেকে দলে আমার ভূমিকা একটু বদলেছে। ৩০, ৪০ রান নিয়মিত করছি, এ বার একটু বড় রান চাই।

প্র: আগে আপনাকে নিয়মিত সুইচ হিট মারতে দেখা যেত। এখন একেবারে ছেঁটে ফেলেছেন। কেন?

উথাপ্পা: আমি যদি ঝুঁকি কম নিয়ে দ্রুত রান করতে পারি, তা হলে কেন ও সব শট মারব? জানি, সুইচ হিট বা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে পেসারদের বিরুদ্ধে শট খেলা, এ সব দেখতে দর্শক পছন্দ করে। কিন্তু দর্শক মনোরঞ্জনের চেয়েও আমার কাছে বড় দলের জয়। রিভার্স সুইপের মতো শট একটা দলকে কতটা ধাক্কা দিতে পারে, এটা আমরা রাজস্থান ম্যাচে (ইডেনে রাহানে এবং বাটলার রিভার্স সুইপ মেরে আউট হন) দেখেছি। আর আমার দক্ষতা আছে, ঝুঁকি না নিয়েও দ্রুত রান করার।

প্র: একটু ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি। বাবা হওয়ার পরে জীবন কতটা বদলেছে?

উথাপ্পা: এই তো সোমবার আমরা একটা সিনেমা দেখছিলাম, যেখানে বলা হয়েছে, শিশুরাই মানুষের সেরা দিকটা বার করে আনে। আমার আর শীতলের (উথাপ্পার স্ত্রী) সেই অভিজ্ঞতাই হচ্ছে।

প্র: এ বারের আইপিএল তো বাবাদের আইপিএল! আপনি, ধোনি, রায়না— সবার ছবি দেখা যাচ্ছে সন্তানদের সঙ্গে।

উথাপ্পা: (হাসতে হাসতে) পরিবার, সন্তান সঙ্গে থাকা মানে নিজের ওপর থেকে চাপ সরিয়ে নেওয়া যায় মুহূর্তে। মাঠ থেকে বেরিয়ে এসেই স্বামীর ভূমিকা, বাবার ভূমিকায় ঢুকে যাওয়া যায়। টেনশন কমে। এই ‘সুইচ অন, সুইচ অফ’ খুব দরকার আমাদের জীবনে।

প্র: কলকাতার সব চেয়ে কী ভাল লাগছে?

উথাপ্পা: এই তো সে দিন কে বলল, রসগোল্লা হল বাংলার রাজধানী। কলকাতার খাবার তো আছেই। কিন্তু আমার কাছে কলকাতা মানে এখানকার মানুষের ভালবাসা। যার জন্য আমার এই শহরে আসতে এত ভাল লাগে।

প্র: শেষ প্রশ্ন। কলকাতা-রাজস্থান ম্যাচ নিয়ে আপনার ভবিষ্যদ্বাণী?

উথাপ্পা: আমরাই জিতব। এই ম্যাচ আর পরের ম্যাচটা জিতে ফাইনালে যাব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE