Advertisement
০৪ মে ২০২৪
FIFA World Cup Qatar 2022

দ্রুত পাল্টা আক্রমণেই বাজিমাত ইংল্যান্ডের

দুর্বল ইরানের বিরুদ্ধে একটিও গোল খাওয়া উচিত হয়নি গ্যারেথ সাউথগেটের দলের। এই দু’টি গোলই কিন্তু বুঝিয়ে দিল, ইংল্যান্ডের রক্ষণ কতটা দুর্বল।

জবাব: ইংল্যান্ডের চতুর্থ গোল। উচ্ছ্বসিত সাকা। সোমবার।

জবাব: ইংল্যান্ডের চতুর্থ গোল। উচ্ছ্বসিত সাকা। সোমবার। ছবি রয়টার্স।

সুব্রত ভট্টাচার্য
সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫২
Share: Save:

ইউরো ২০২০ ফাইনালের শেষ বাঁশি বাজার মুহূর্তটা স্মৃতিতে এখনও তরতাজা। ইটালি শিবির ততক্ষণে উৎসব শুরু করে দিয়েছে। এ দিকে ওয়েম্বলির ঘাসে হাঁটু মুড়ে বসে মাথা নিচু করে রয়েছে বুকায়ো সাকা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল আর্সেনালের তরুণ উইঙ্গার। কোচ গ্যারেথ সাউথগেট সান্ত্বনা দিলেও লাভ হয়নি।

ঘরের মাঠে ফাইনালে ইংল্যান্ড সমর্থকদের সামনে টাই ব্রেকারে গোল করতে না পারার যন্ত্রণা সহজে মেটে না। সেই ক্ষত আরও দগদগে হয়ে উঠেছিল গণমাধ্যমে টানা বিদ্রুপে। বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছিল সাকা। তরুণ উইঙ্গার সে দিনের কথা কখনও ভুলতে পারবে না। কিন্তু প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলতে নেমে দেশের হয়ে ওর জোড়া গোল, কিছুটা হলেও সেই ঘায়ে প্রলেপ দিতে বাধ্য। সাকার জোড়া গোল ও জুড বেলিংহ্যামের মাঝমাঠে দাপট ইরানের বিরুদ্ধে ৬-২ জিততে সাহায্য করল ইংল্যান্ডকে। অবশ্য এই দুর্বল ইরানের বিরুদ্ধে একটিও গোল খাওয়া উচিত হয়নি গ্যারেথ সাউথগেটের দলের। এই দু’টি গোলই কিন্তু বুঝিয়ে দিল, ইংল্যান্ডের রক্ষণ কতটা দুর্বল।

ম্যাচের শুরুর দিকে ইরানকে দেখে মনে হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত রক্ষণে এই বাঁধনটা বজায় রাখতে পারবে। কিন্তু নিজেদের ফুটবলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গোলকিপার আলিরেজ়া বেইরানভান্দ চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতেই কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল ইরান। নতুন গোলকিপার হোসেইনি আসার পর থেকেই রক্ষণভাগ কেমন যেন নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল। ফাঁকা জায়গা করে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করল ইংল্যান্ড। অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক মনোভাব ডুবিয়ে দিল ইরানকে। বাঁ-প্রান্ত থেকে ভাসানো বলে হেড করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেয় জুড বেলিংহ্যাম। দ্বিতীয় গোল আসে ৪৩ মিনিটে। বক্সের মধ্যে বাঁ-পায়ের ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দেয় সাকা। এই গোল মুগ্ধ করে দেয় ডেভিড বেকহ্যামকেও। নতুন তারকাকে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানান ইংল্যান্ডের প্রাক্তন নায়ক।

তৃতীয় গোলটিও আসে প্রথমার্ধের শেষে। অবশ্য কৃতিত্ব বেশির ভাগটাই হ্যারি কেনের। ওর মতো স্ট্রাইকার যে কোনও দলের সম্পদ। শুধুমাত্র বক্সের মধ্যেই নিজেকে বেঁধে রাখে না। বল বাড়ানোর দক্ষতাই বাকিদের চেয়ে ওকে আলাদা করে দিতে পারে। ওর ক্রস থেকে ঠান্ডা মাথায় ট্যাপ করে বল জালে জড়িয়ে দেয় রাহিম স্টার্লিং। যদিও ইংল্যান্ডের চোখ ধাঁধানো দু’টি গোল এল দ্বিতীয়ার্ধে। বক্সের মধ্যে কাট করে ঢুকে সাকা যে ভাবে গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিল, তা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। পিছিয়ে রাখব না মার্কাস র‌্যাশফোর্ডকেও। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমে প্রথম বল পেয়েই দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যায় বক্সের দিকে। গোলকিপার ভেবেছিল র‌্যাশফোর্ড ডান পায়ে শট নেবে। ডান পা দিয়ে ভাঁজ দিয়ে বাঁ-পায়ের টোকায় গোলকিপারকে বিভ্রান্ত করে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড তারকা। শেষ গোলেও র‌্যাশফোর্ডের কৃতিত্বই বেশি। ও চাইলে নিজেই শট নিতে পারত। কিন্তু সতীর্থ জ্যাক গ্রিলিশকেও বিশ্বকাপের প্রথম গোলটি করার সুযোগ দেয়।

প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড ছ’গোল করলেও, বড় ম্যাচে কিন্তু এই দলটি বিপদে পড়তে পারে। মাঝ মাঠে বেলিংহ্যাম ছাড়া কারও মধ্যে সেই দক্ষতা দেখা গেল না। নৈপুণ্যের অভাব রয়েছে। শুধুমাত্র উইং নির্ভর ফুটবল খেললে বড় দলের বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। হ্যারি কেন নিজে চেষ্টা করছে মাঝ মাঠ থেকে আক্রমণ তৈরি করার। কিন্তু বাকিরা সেই কৌশল আয়ত্তে আনতে পারেনি। রক্ষণে জন স্টোনস আরও সতর্ক না হলে পরবর্তী পর্বে সমস্যা হতে পারে। বরং হ্যারি ম্যাগুয়ারকে অনেক বেশি সক্রিয় মনে হয়েছে স্টোনসের চেয়ে। ওয়েলস অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই ফুটবল খেলে জেতা খুবই কঠিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE