দু’বছর পর ফের ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ফিরতে চলেছে ফুটবলার নিলাম প্রথা। এবং সেটা চালু হলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান-সহ আই লিগের ক্লাবগুলি পড়বে তীব্র সঙ্কটে। ভাল টিম তৈরি করাই কঠিন হয়ে যাবে তাদের।
আইএসএল কর্তৃপক্ষ আট ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে কোনও বিদেশি এবং স্বদেশি ফুটবলারের সঙ্গে যেন এই মরসুমের জন্য চুক্তি না করা হয়। চিঠিতে না লেখা হলেও মুম্বইয়ের খবর, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মৌখিকভাবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সরাসরি নয়, এ বার সব ফুটবলারকেই নিলাম থেকে নতুন করে কিনতে হবে।
আর এটা জানার পরই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন দুই প্রধানের কর্তারা। কারণ ফেডারেশন ভারতীয় ফুটবলের যে ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করার কথা ভাবছে তাতে আইএসএল আর আই লিগ পাশাপাশি চলবে। এবং সেটা হলে আগের মতো দু’টো টুনার্মেন্টে ফুটবলাররা আর খেলতে পারবেন না। সে জন্যই দুই প্রধানের আশঙ্কা, নিলাম হলে দেশের সেরা ও মাঝারি মানের সব ফুটবলারই বেশি টাকা নিয়ে চুক্তি করবেন আইএসএলের টিমগুলিতে। দুই প্রধানের কর্তাদের প্রাথমিক হিসেব, আইএসএল দশ দলের হলে সুনীল ছেত্রী, বলবন্ত সিংহ, রবিন সিংহ, জেজে লালপেখলুয়া-সহ একশোর বেশি ফুটবলার চলে যাবেন আইএসএলে।
কারণ ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের অর্থ বা ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন না লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন বা আইজলের মতো টিমের কর্তারা। এ ব্যাপারে একমাত্র ব্যতিক্রম হতে পারে বেঙ্গালুরু। অনেকেই মনে করছেন, আতলেতিকো দে কলকাতা বা চেন্নাইয়িন এফসি-র মালিকদের সঙ্গে টাকা খরচে পাল্লা দিতে পারেন বেঙ্গালুরুর মালিকরা। তাঁরা অবশ্য এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ। ‘‘ফেডারেশন প্রস্তাব দিয়েছে। চূড়ান্ত তো কিছু হয়নি। দেখা যাক না কী হয়,’’ কটক থেকে বলে দিলেন টিমের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা।
তবে কলকাতার দুই ক্লাবের দুই শীর্ষ কর্তা বুধবার বললেন, ‘‘এমনিতেই ভাল ফুটবলারের প্রচণ্ড অভাব। ১০০ জন ফুটবলার ওই লিগে চলে গেলে আমাদের তো বাতিল, বুড়ো আর অ্যাকাডেমির ফুটবলার নিয়ে খেলতে হবে। তাঁদের দেখতে মাঠে সমর্থকরা আসবেন কেন? আমাদের তো ভবানীপুর বা কুমারটুলির মতো অবস্থা হবে।’’
আরও পড়ুন: ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট, বিশ্বরেকর্ড ঝুলনের
আর সেই আশঙ্কা থেকেই আইএসএল এবং আই লিগ পাশাপাশি চলুক, চাইছে না দুই প্রধান। তাদের প্রস্তাব দুটো লিগ চার মাস করে ভাগ করা হোক। তাতে ফুটবলার পেতে কারও অসুবিধা হবে না। ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে এক কর্তা বুধবার বলে দিলেন, ‘‘পাশাপাশি দু’টো লিগ করার প্রস্তাবে আমাদের সম্মতি নেই। আমরা চার মাস করে দু’টো টুনার্মেন্ট হোক চাইছি। সেটা সভাতে আমরা এবং মোহনবাগান বলে এসেছি।’’ মোহনবাগানের এক কর্তা বললেন, ‘‘দু’টো লিগ পাশাপাশি হলে হোক। তবে আই লিগের বিজয়ীকে উপেক্ষা করে আইএসএলের চ্যাম্পিয়ন টিমকে এএফসি কাপে খেলতে দিলে আমরা আইনি যুদ্ধে যাব। ছেড়ে দেব না।’’
আই লিগ বনাম আইএসএলের ঝামেলা না মিটিয়েই প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল-সহ ফেডারেশন কর্তারা চলে গিয়েছেন বাহরিনে। এএফসি-র সভায় যোগ দিতে। সেখানে তাঁরা এএফসি-র কর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং এএফসি কাপ, এই দুটো টুনার্মেন্টে কারা খেলার সুযোগ পাবে? ফেডারেশন সূত্রের খবর, এএফসি-র কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, দুটো টুনার্মেন্টে খেলার যোগ্যতা পাবে দেশের এক নম্বর লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সরা। এই অবস্থায় বেকায়দায় প্রফুল্ল-কুশলরা। আই লিগকে দেশের এক নম্বর লিগ ঘোষণা করা হলে সেখানকার চ্যাম্পিয়ন, রানার্সরা এএফসি-র দুটো টুর্নামেন্টই খেলবে। ঠিক হয়েছে, আইএসএলের কর্তাদের খুশি করতে নতুন ফমুর্লার প্রস্তাব দেওয়া হবে এএফসি-তে। সেই মতো আই লিগ চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং আইএসএল চ্যাম্পিয়নদের এএফসি কাপে খেলার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে। জানা গিয়েছে, ২৫ মে এএফসি তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
এএফসি যে সিদ্ধান্তই জানাক, তাতে কলকাতার দুই প্রধান বা আই লিগের টিমগুলোর কোনও সুবিধে হবে বলে মনে হয় না। দু’টো লিগ পাশাপাশি চললে টিম গড়তে হাবুডুবু খাবেন কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy