Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাগানে ট্রফি আনতে পিকের ভোকাল টনিকের দ্বারস্থ সঞ্জয়

আর্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে অ্যালেক্স ফার্গুসনের লড়াই আজ গুয়াহাটিতে! না কি লড়াইটা বাংলার আর্সেনালের সঙ্গে মিজোরামের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের? ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে শনিবাসরীয় সন্ধ্যেয় ফেড কাপ ফাইনালের আগে দু’টো ব্যাপারই যেন হাজির। তবে অন্য মোড়কে।

ফাইনাল-মহড়া। গুয়াহাটিতে শনিবার।

ফাইনাল-মহড়া। গুয়াহাটিতে শনিবার।

রতন চক্রবর্তী
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৪:৪৬
Share: Save:

আর্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে অ্যালেক্স ফার্গুসনের লড়াই আজ গুয়াহাটিতে!

না কি লড়াইটা বাংলার আর্সেনালের সঙ্গে মিজোরামের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের?

ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে শনিবাসরীয় সন্ধ্যেয় ফেড কাপ ফাইনালের আগে দু’টো ব্যাপারই যেন হাজির। তবে অন্য মোড়কে।

তেরো বছর পর গত মরসুমেই মোহনবাগানকে আই লিগ এনে দেওয়া কোচ সঞ্জয় সেনের পছন্দ, ওয়েঙ্গারের ফুটবল দর্শন। তারকা নির্ভর ফুটবল নয়, টিমগেম। পাসের ফুলঝুরি আর মুহুর্মুহু উইং আক্রমণে বিপক্ষের গলা টিপে ধরো। সেমিফাইনালে এ ভাবেই তো শিলং লাজংকে পাঁচ গোল দিয়ে এই মরসুমের প্রথম ট্রফি জয়ের দরজায় সনি নর্ডিদের কড়া নাড়া।

প্রথম বার ফেড কাপ খেলেই ফাইনালে উঠে আলোড়ন ফেলে দেওয়া আইজল কোচ জহর দাস আবার বিশ্বাসী অ্যালেক্স ফার্গুসনের তত্ত্বে। খুব বিপদে না পড়লে স্ট্র্যাটেজি বদলান না। অপেক্ষায় থাকেন। পাল্টা আক্রমণে গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর এ ভাবেই তো আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুকে দু’পর্বেই হারিয়ে, স্পোর্টিং ক্লুবকে তাদের গোয়ার মাঠেই আটকে ফাইনালে উঠে আসা সানডে-আলফ্রেডদের।

সঞ্জয় এবং জহর কোচ হিসেবে দু’জনেই কখনও ফেড কাপ জেতেননি। ক্ষুধার্ত অবস্থার জন্যই হয়তো ফাইনালের আগের দিন দুই বাঙালি কোচই বেশ টেনশনে।

সঞ্জয়ের মোহনবাগানের অবস্থা অনেকটা রাত-দিন ভাল পড়াশোনা করার পরেও ফেল করা ছাত্রের মতো। দেশি-বিদেশি টিমের বিরুদ্ধে চমকপ্রদ সব জয়ের পরেও এখনও কোনও ট্রফি নেই তাদের লকারে।

জহরের আইজল তো অঘটনের পর অঘটন ঘটিয়েও নেমে গিয়েছে আই লিগ থেকে। ফলে মরসুমের শেষ টুর্নামেন্ট ফে়ড কাপের ফাইনালে দু’জনের মগজাস্ত্রের লড়াই যে রক্তক্ষয়ী, ধুন্ধুমার হবে ধরে নেওয়া যায়। যার তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা আগের সাংবাদিক সম্মেলনে একে অন্যের দিকে গোলাগুলি ছোড়া দেখেই।

প্রথমে বলতে এসে চার ফুট দূরে বসে থাকা আইজল কোচকে লক্ষ্য করে সঞ্জয় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, ‘‘আইজল ভাল টিম। কিন্তু আমরা এখানে ট্রফি জিততে এসেছি। এটা আই লিগ নয়, ফেড কাপ ফাইনাল। ওখানে হেরেছিলাম বলে এখানে হারব ভাবার কোনও কারণ নেই।’’ নিজের টিমের আইজল-ম্যান জেজেকে পাশে বসিয়ে বাগান কোচের হুঙ্কারের পর পাল্টা তোপ দাগলেন জহরও। ‘‘আমরা বাঘ। রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছি আই লিগ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুকে হারানো থেকেই। ভেজিটেবলে (পড়তে হবে রানার্স) আমাদের পোষাবে কেন?’’ সামনেই সঞ্জয় তখন বসে। চেতলা বনাম হাওড়বাসীর ‘তরজা’ ফিরিয়ে আনছিল যেন উনিশ বছর আগের ফেড কাপে পিকে বনাম অমল বাকযুদ্ধের স্মৃতি।

খাতায়-কলমে দেখলে ফাইনালে বাগান-ই ফেভারিট। সঞ্জয়ের অস্ত্র ভাণ্ডারে সনি, গ্লেন, জেজে, কাতসুমি মজুত। আর জহরের ইউএসপি? একদল তরুণ পাহাড়ি ছেলের জেদ তারকা হওয়ার। সঙ্গে অ্যালফ্রেড, সানডের মতো কলকাতার বাতিল বিদেশিরা।

আগের দিন কলকাতায় আর আজ গুয়াহাটিতে অনুশীলনের পর পিকের মতো ছেলেদের সামনে আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছেন সঞ্জয়। ‘‘তোমরা অনেক পরিশ্রম করেছ। ভাল খেলেছ। প্রশংসা পেয়েছ। কিন্তু পাশ করোনি। ফুটবলে ট্রফি না পেলে কেউ ভাল খেলা মনে রাখে না। কাল সেই দিন। নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে ট্রফিটা জেতো।’’ পেশাদার দুনিয়ায় ভোকাল টনিক হয়তো মানানসই নয়। কিন্তু টিম মিটিং থেকে বেরিয়ে বাগানের হৃৎপিণ্ড সনি নর্ডির মুখ থেকে কিন্তু বেরিয়েছে, ‘‘ফাইনালের পরেই দেশে চলে যাব। গত বার আই লিগ খেতাব নিয়ে গিয়েছিলাম। এ বার ফেড কাপ জেতার আনন্দটা নিয়ে যেতে চাই।’’

সনির পাল্টা আবার আইজল এফসি-র অ্যালফ্রেড বলে দিলেন, ‘‘প্রথম বার ফেড কাপে খেলেই ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছি। কাপটা জিতে আরও একটা ইতিহাস গড়ব।’’ কোচ জহরও তাঁর টিমের এই আবেগেই খোঁচা মারছেন। টিম মিটিংয়ে বলেছেন, ‘‘তোমাদের সামনে ইতিহাসের হাতছানি। সেটা ছুঁতেই হবে। তোমরাই পারবে। পারবেই।’’

সকালে দু’দলের অনুশীলন দেখে মনে হয়েছে, কেউই কাল শুরুতে ঝুঁকি নেবে না। পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় যাবে সমতল এবং পাহাড়—দুই-ই। বাগান টিমে সেমিফাইনালের দল থেকে পরিবর্তন হচ্ছে না শনিবার। আইজল তাদের সেরা ফুটবলার তথা অধিনায়ক ডেভিডকে পাচ্ছে না। তাকে কী? সনিকে থামাতে চুল্লুভা নামের এক টাট্টু ঘোড়াকে মাঠে নামাচ্ছেন জহর। দাবি করলেন, ‘‘বাচ্চা ছেলেটা সনির বিষ দাঁত ভেঙে দেবে কাল।’’

আট বছর আগে গঙ্গাপারের ক্লাবে শেষবার ফেড কাপ ঢুকেছিল যার গোলে সেই হোসে ব্যারেটো এখন ইংল্যান্ডে। মুম্বইয়ের রিল্যায়ান্স অ্যাকাডেমির ছেলেদের নিয়ে গিয়েছেন। বোধহয় জানেন না, তাঁর কৃতিত্ব ছুঁতে কয়েক হাজার মাইল দূরে মাঠে নামছেন সনিরা। ব্যারেটোদের সেই দলের কোচ করিম বে়ঞ্চারিফার খোঁজ নেই। সেই টিমের সহকারী কোচ সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় গুয়াহাটিতে এসেছেন ম্যানেজার হয়ে। বাগানের ফুটবল সচিব বলছিলেন, ‘‘সে বারের ফাইনালিস্ট ডেম্পো ছিল তারকায় ভরা। এ বার বিপক্ষে অনামী সব ছেলে। ফলে ওদের কোনও চাপ নেই। কিছু হারানোর ভয় নেই যাদের, তারা সব সময় ভয়ঙ্কর হয়। সেটাই আমাদের ভয়ের ব্যাপার।’’

সত্যজিতের বিখ্যাত সিনিয়র সুব্রত ভট্টাচার্যের গলায় আবার সাতাত্তরের প্রথম ফেড কাপে বাগানের সেই কুখ্যাত আত্মবিশ্বাসের স্মৃতি ফিরে আসছে। কোথাকার এক অনামী আইটিআই সে বার ফাইনালে হটফেভারিট মোহনবাগানকে এক গোলে হারিয়ে কাপ নিয়ে গিয়েছিল ‘‘আরে একশোটা গোলের সুযোগ পেয়েছিলাম আমরা। শ্যাম, সুভাষ, হাবিব-আকবর কত গোল যে নষ্ট করেছিল ইয়ত্তা নেই। কী বলব! পরে ওদেরই পাঁচ-ছয় গোল মেরেছি। কিন্তু প্রথম বছরই ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার যন্ত্রণাটা তাতেও যায়নি।’’ সেই বাগানের কোচ পিকে পরে বলেছিলেন, ‘‘কুখ্যাত আত্মবিশ্বাসই সে দিন আমাদের শেষ করে দিয়েছিল।’’ সঞ্জয় তাই সতর্ক। বারবার মনে করাচ্ছেন, ‘‘আইজল কিন্ত বেঙ্গালুরু, স্পোর্টিংকে হারিয়ে ফাইনালে নামছে।’’

সঞ্জয় সেন কিছুতেই আজ ঊনচল্লিশ বছর আগের পিকে হতে চান না। চান না আইজলকে আইটিআই করে তুলতে!

আজ ফেডারেশন কাপ ফাইনাল

মোহনবাগান : আইজল এফসি (টেন টু, ৭-০০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sanjay sen Mohunbagan Fed cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE