Advertisement
E-Paper

প্রার্থনা থেকে সাধনায় ডুবে ভারত

রবিবারের নাগপুর আর এটা তার আসন্ন পুজোর আবহ। ফোনের উল্টো দিকে যে ভদ্রলোক পুজোর যাবতীয় নির্ঘণ্ট নামতা পড়ার মতো শোনাচ্ছিলেন, তিনি বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার বেশ উঁচু পদাধিকারী এবং এই মুহূর্তে ভাল রকম বিভ্রান্ত। পরিচিত-অর্ধ পরিচিতদের টিকিট প্রত্যাশা মেটাতে গিয়ে অবস্থা একেই ঢিলে।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫২
নাগপুরে নেহরার ওয়ার্ম আপ। -উৎপল সরকার

নাগপুরে নেহরার ওয়ার্ম আপ। -উৎপল সরকার

পাঁচশোর একটা-দু’টো আছে? প্রত্যাশা অর্থহীন।

হাজার-দেড়-দুইয়ের গোটা কয়েক? নিঃশেষ।

চার হাজার? পাঁচ হাজারের টিকিট? বহুমূল্যের যে কোনও কিছু? পরের ম্যাচের হবে।

রবিবারের নাগপুর আর এটা তার আসন্ন পুজোর আবহ। ফোনের উল্টো দিকে যে ভদ্রলোক পুজোর যাবতীয় নির্ঘণ্ট নামতা পড়ার মতো শোনাচ্ছিলেন, তিনি বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার বেশ উঁচু পদাধিকারী এবং এই মুহূর্তে ভাল রকম বিভ্রান্ত। পরিচিত-অর্ধ পরিচিতদের টিকিট প্রত্যাশা মেটাতে গিয়ে অবস্থা একেই ঢিলে। মঙ্গলবারের সব ধরণের, সমস্ত মূল্যের টিকিট শেষ বললেও কেউ শুনছে না। তার উপর আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টার ‘টু ডু লিস্ট’। শশাঙ্ক মনোহর এর মধ্যে ক্রিকেট সংস্থায় যাননি, কিন্তু মঙ্গলবার আসবেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট মাঠে থাকলে ব্যবস্থাপনা কোন পর্যায়ে থাকা দরকার, বিশদে না গেলেও চলে। প্রচুর ভিভিআইপি ব্যক্তিত্বও চলে আসছেন। লিস্ট মিলিয়ে তাঁদের নিয়ে আসা-নিয়ে যাওয়া আছে। ভারত এবং নিউজিল্যান্ড সোমবার দুপুরে আবার মাঠে। আলাদা-আলাদা নয়। একসঙ্গে। পিচ, তার খেয়ালও রাখতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যা হয়েছিল, আইসিসি টুর্নামেন্টে ও সব হলে আর রক্ষা থাকবে না। এ সবের সঙ্গে আইসিসির বায়নাক্কা থেকে মিডিয়ার দেখাশোনা, সেগুলোও বাদ যাচ্ছে কোথায়? ক্রিকেট কর্তা দুঃখ করছিলেন যে, নাওয়া-খাওয়ার সময় তো গিয়েছেই, কিছু দিন পর যে রামনবমী আসছে সেটাও নাকি তিনি টের পাচ্ছেন না!

কিছু করার নেই। ক্যালেন্ডারে রামনবমীর আগে যদি ক্রিকেট-নবমী পড়ে যায়, উপায় কী? আর পাঁচটা টুর্নামেন্ট নয়, এটা একেবারে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। যেখানে ভারতের প্রথম ম্যাচটাই নাগপুরে। খাওয়া-দাওয়া শিকেয় উঠবে, রাতের ঘুম যাবে। টিকিট একটাও থাকবে না কিন্তু অনন্ত চাহিদা থাকবে। তা-ও তো মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রস টেলরদের নাগপুর এ দিনের মতো মাঠে নামতে দেখল না। সকাল থেকে বিকেল, বিভিন্ন সময়ে দু’টো টিম এসে যে যার মতো হোটেল চলে গেল। মাঠের দিকে গেল না। নইলে সাত সকালে ধোনিদের এয়ারপোর্টে দেখে যে শ’পাঁচেকের তীব্র ধাক্কাধাক্কি আর পুলিশের লাঠি হাতে ছুটোছুটির খবর পরে পাওয়া গেল, তা মাঠের দিকে আজই ঘুরে গেলে ওই ক্রিকেট কর্তার কপালের ভাঁজ গোনা আর ম্যাচের পাঁচশোর দু’টো টিকিট খোঁজা, ব্যাপারটা বোধহয় একই দাঁড়াত!

নাগপুরে কোহালিদের পা। গণেশ টেকরি মন্দিরে রাহানের পুজো।

তবে একই সঙ্গে এটাও বলে রাখা ভাল যে, ধোনিরা এ দিন নামেননি বলে কিছু যে করেননি ভাবাটা ভুল। সব সময় নেটে সর্বসমক্ষে কিছু করতে হয়, এমন নয়। নিভৃতে ঘটে চলা অনেক ঘটনাবলীও টিমের মেজাজের খোঁজ দিয়ে যায়। যেখানে দু’টো প্র্যাকটিস ম্যাচ উত্তর ভারতীয় সংসারে প্রার্থনা থাকল। হরভজন সিংহের স্ত্রী-র জন্মদিনে ধোনিদের কেক কাটা থাকল। টিমের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে সমর্থকদের সঙ্গে ক্রিকেটারের লাইভ চ্যাটে বসে যাওয়া থাকল। আবার ক্রিকেট সেটাও কিন্তু পুরোপুরি উপেক্ষিত থেকে গেল না। কোথাও তার প্রকাশ কাহিনিতে। কোথাও প্রত্যক্ষ দর্শনে।

হরভজনের স্ত্রী গীতা বসরার জন্মদিন উৎসব।

আশিস নেহরা যেমন। যে বয়সে ক্রিকেটার কেরিয়ার ছেড়েছুড়ে সন্তানের হোমটাস্ক সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সে বয়সে তিনি বিস্ময় প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে মাঠে। আর কেন তিনি মাঠে, সে প্রশ্নের উত্তরের আন্দাজ কিন্তু দিয়ে গেল জামথা। ভারতীয় টিমের এ দিন কোনও প্র্যাকটিস শিডিউল ছিল না। কারও যাওয়ার ব্যাপারও ছিল না। দুপুরের দিকে ভারতীয় টিমের সাপোর্ট স্টাফ টিম পিচ-টিচ দেখে চলে এসছিল। যা মোটামুটি ব্যাটিং ট্র্যাকই হবে বলে খবর। এর পর আচমকাই জামথা মাঠে আবির্ভাব ঘটে নেহরার। প্রায় সন্ধে পর্যন্ত যিনি রানিং-স্ট্রেচিং সেরে গেলেন। তা-ও একা! অজিঙ্ক রাহানে তখন গণেশ টেকরি মন্দিরে। রোহিত শর্মা লাইভ চ্যাটে বসে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বজয়ের স্মৃতিচারণে বলতে শুরু করেছেন, “উফ, তখন যে দিকে তাকাতাম সে দিকে মহানায়ক। ন’টা বছর কেটে গেল। তখন এত বাচ্চা ছিলাম যে আমার উপর কোনও দায়িত্বই বলতে গেলে ছিল না...।” বিরাট কোহালি সাধনার আর এক মুখ। নয়াদিল্লিতে থেকে ফোনে তাঁর কোচ রাজকুমার শর্মা বলছিলেন যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মোডে বিরাট নাকি নিজেকে ঢুকিয়ে ফেলেছেন অনেক দিন হল। ক্রিকেটীয় স্কিলের চেয়ে এই টুর্নামেন্টে মানসিক দিকে বেশি জোর দিচ্ছেন। অনুপ্রেরণামূলক আত্মজীবনী নাকি পড়ছেন। আর গুরুর সঙ্গে কথাবার্তা হলেই তিনি শিষ্যকে বুঝিয়ে যাচ্ছেন, কোটি-কোটি দেশবাসীর আশাবাদের কথা ভাবো। ভেবে নিজেকে চার্জ করো বিশ্বকাপের জন্য।

ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা আবার আগাম চার্জড হয়ে যেতে পারেন বুধবারের প্রতিপক্ষ নিয়ে টিমের মনোভাবের কথা জানলে। গত রাতে শিখর ধবনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, মার্টিন গাপ্টিল-কেন উইলিয়ামসনদের নিউজিল্যান্ড নিয়ে কী ভাবছেন? শেষ প্র্যাকটিস ম্যাচে ইংল্যান্ডের আদিল রশিদের স্পিনের সামনে তাঁরা যে ভাল রকম কাবু হয়েছেন, সেটা জানেন কি না। ধবন পাত্তাই দিলেন না। বলে দিলেন, প্র্যাকটিস ম্যাচে গাপ্টিলদের কী হয়েছে না হয়েছে, জানেন না। আর বললেন, নিউজিল্যান্ডকে আগেও খেলেছেন। আর টেকনোলজির যুগে কোনও প্রতিপক্ষেরই নতুনত্ব বলে কিছু থাকে না। ভিডিও অ্যানালিসিসেই সব বেরিয়ে আসে। আর যা ক্যালকুলেশন প্রয়োজন সবই করা হবে। এক চুলও বাড়তি সম্মান নয়। বরং যেন মৃদু তাচ্ছিল্য উত্তরে গুঁজে দেওয়া। ঘটনা হল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড কিন্তু অত সোজাসাপ্টা টিম নয়। ভারতের একটা রোহিত থাকলে তাদেরও একটা উইলিয়ামসন আছে। একটা বিরাটের উত্তরে তাদের একটা মার্টিন গাপ্টিল পাওয়া যাবে। আর টুর্নামেন্টের গোড়াতেই ভারতের পাল্লায় পড়তে হচ্ছে বলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা যে গুটিয়ে আছে, এমন কিন্তু নয়। তারাও যথেষ্ট চনমনে। যথেষ্ট চাপহীন, ফুরফুরে। নমুনা চাই?

মুম্বই বিমানবন্দরের কফিশপে সব বাদ দিয়ে রস টেলরদের আজ তাস খেলতে দেখা গিয়েছে!

virat kohli t-20 world cup dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy