লিগ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর সুব্রত ভট্টাচার্য যে সব অভিযোগ তুলেছেন, তাঁকে গুরুত্ব দিতে নারাজ কোনও ক্লাব কর্তাই। তাঁদের মনোভাব এ রকম যে, “সুব্রত ও রকম তো নিয়মিত বলেই থাকে। গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে?” আর টালিগঞ্জ টিডির নাম না করে আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিলেন, “কোনও প্রমাণ হাতে না নিয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা অন্যায়। এটা খারাপ মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। এতে বাংলার ফুটবলের ক্ষতিই হচ্ছে।”
ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে লিগ হাতছাড়া হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, আইএফএ-র বিরুদ্ধে সার্বিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন সুব্রত। তাকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে লাল-হলুদের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বললেন, “কোনও শ্রদ্ধেয় ফুটবলারকে তো আমি পাগল বলতে পারি না। সেটা ঠিকও নয়। উনি আমাদের ক্লাবেরও কোচ ছিলেন। খুব কাছ থেকে দেখেছি। শুধু বলছি ওঁর মতো ফুটবল ব্যক্তিত্ব কিছু বললে সেটা গুরুত্ব পায়। সে জন্যই উনি যা বলবেন সেটা যেন একটু ভেবেচিন্তে বলেন।” টালিগঞ্জের কিছু ফুটবলারকে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে ম্যাচের আগে ফোন করা হয়েছিল বলে নিজের অভিযোগে ইঙ্গিত দিয়েছেন সুব্রত। যা শুনে সন্তোষবাবু হাসতে হাসতে বললেন, “কে কোথায় কাকে ফোন করেছিল আমি জানি না। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ওই ম্যাচটা জিততেই হত। আমাদের মাথায় এর বেশি কিছু ছিল না।”
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে হয়েও সুব্রত নিয়মিত নানা বিষয়ে তীব্র আক্রমণ করেন ক্লাবের শাসকগোষ্ঠীকে। ইস্টবেঙ্গল-টালিগঞ্জ ম্যাচের পরও যা থামেনি। সুব্রত সেখানেও ‘চক্রান্ত’ দেখেছেন বাগান কর্তাদের। তবে বিতর্ক যাঁর সব সময়ের সঙ্গী, সেই সুব্রতর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র। বললেন, “টালিগঞ্জ ম্যাচটা ড্র করলে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হত। সেটা সবাই জানে। এ রকম পরিস্থিতিতে কেন যে সুব্রত চক্রান্ত চক্রান্ত করে চেঁচাচ্ছে বুঝতে পারছি না। আরে বাবা কীসের চক্রান্ত? ওর কথার জবাব না দেওয়াই ভাল।” ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান কোনও গুরুত্ব না দিলেও আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু সুব্রতর মতো প্রাক্তন ফুটবলারের বেহিসাবি কথাবার্তা বলা নিয়ে প্রচণ্ড বিরক্ত। বলে দিলেন, “এটা একটা ট্রেন্ড চলছে ময়দানে। হেরে গেলেই নানা অভিযোগ তুলে সবার চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। টালিগঞ্জ যখন মহমেডানকে হারাল তখন যে হারল সে বলল চক্রান্ত। আবার ইস্টবেঙ্গলের কাছে টালিগঞ্জ হারার পর তারাও এখন দেখছি একই কথা বলছে। আমি জানতে চাই কীসের চক্রান্ত? কে করছে?” এর পর যোগ করলেন, “যদি দু’দিন আগেই কেউ জানতে পারে হারানোর চেষ্টা চলছে, আমাকে চিঠি দিয়ে বলা হল না কেন?”
নিশ্চিত পেনাল্টি না দিয়ে রেফারি টালিগঞ্জকে হারিয়ে দিয়েছেন— অভিযোগ তুলেছেন টালিগঞ্জ টিডি। উৎপলবাবু বললেন, “রেফারিং নিয়ে কিছু বলব না। বিশ্বকাপেও রেফারিরা ভুল করে। ভুল হতেই পারে। সেটা দেখার জন্য আমাদের আলাদা বোর্ড আছে। কিন্তু হেরে গেলেই রেফারির দোষ এই মানসিকতার বদল দরকার।”
সুব্রত অভিযোগে এটাও ছিল যে, ছোট দল লিগ পাক, চায় না আইএফএ। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, মোহনবাগান রাজ্য সংস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে শো-কজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা শুনে হেসেছেন সচিব। বললেন, “ছোট-বড় সব দলকেই সমান ভাবে দেখি। আর কারও কথায় কাউকে শাস্তি দিই না। যে দিন সেটা করতে হবে, সচিব পদ ছেড়ে চলে যাব।”
আর রঘু নন্দী কী বলছেন? সুব্রতকে যাঁর জায়গায় মাঝ মরসুমে নিয়ে এসেছেন টালিগঞ্জ কর্তারা। “টিমটা নামানোতেই তো ভুল ছিল। কোন ফুটবলার কোন পজিশনে খেলতে পারে সেটাই তো জানে না মনে হল। এখন হেরে গিয়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে। ঠিক মতো খেললে ম্যাচটা টালিগঞ্জ জিতত। কোকো-বিদেমি একসঙ্গে ফরোয়ার্ডে নামিয়ে দিলেই তো ম্যাচটা জিতে যায় টালিগঞ্জ। ২-১ গোলে হারছি। বড় জোর ৩-১ হত। জেতার ঝুঁকি না নিয়ে ডিফেন্সিভ খেলল। কীসের বড় কোচ তা হলে সুব্রত?” প্রশ্ন তুলে দিলেন রঘু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy