Advertisement
E-Paper

কোচিংয়ের জন্য আমি আবার ফ্রি: বরিস বেকার

গুটেন টাগ হের বেকার! এবিপি অফিসে আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারে বসার আগে এ ভাবেই স্বাগত জানানো হল বিশেষ বিদেশি অতিথিকে। প্রত্যুত্তরে যিনি হাসিমুখে বললেন, গুটেন টাগ। মানে গুড ডে। তুলে দেওয়া হল জন নিউকম্বের এই কাগজে দেওয়া পুরনো সাক্ষাৎকারের ইংরেজি অনুবাদ। যেখানে নিউকম্ব বলছেন, উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে বর্গকে হারিয়ে দিত বেকার। হাতে নিয়ে সেটা পড়তে শুরু করলেন। এর পর গত বছর আনন্দবাজারকে লন্ডন থেকে দেওয়া তাঁর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের ফ্রেমে বাঁধানো কপি। যেখানে চুরুট মুখে তিনি। কিন্তু এটা হাতে তুলে পোজ দিতে বিলক্ষণ সমস্যা আছে। পুমা লেজেন্ড তিনি। শহরে এসেছেন কিনা তাদের হয়ে। চুরুট হাতে তোলা প্রচ্ছদচিত্র নিয়ে তিনি কোনও মতেই পোজ দিতে পারেন না। আন্তর্জাতিক কোনও সেলিব্রিটি এখন প্রকাশ্যে ধূমপানের সপক্ষে বিজ্ঞাপন করেন না। চিরবিদ্রোহী তিনিও না। যদিও কথাবার্তায় বরিস বেকার বদলেছেন বলে মনে হল না...গুটেন টাগ হের বেকার! এবিপি অফিসে আনন্দবাজারের সাক্ষাৎকারে বসার আগে এ ভাবেই স্বাগত জানানো হল বিশেষ বিদেশি অতিথিকে। প্রত্যুত্তরে যিনি হাসিমুখে বললেন, গুটেন টাগ। মানে গুড ডে। তুলে দেওয়া হল জন নিউকম্বের এই কাগজে দেওয়া পুরনো সাক্ষাৎকারের ইংরেজি অনুবাদ।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
শহরে কিংবদন্তি। শনিবার সকালে আনন্দবাজার অফিসে। ছবি: উৎপল সরকার।

শহরে কিংবদন্তি। শনিবার সকালে আনন্দবাজার অফিসে। ছবি: উৎপল সরকার।

প্রশ্ন: কপিল দেব আপনার খুব প্রিয় বন্ধু। দিল্লিতে কাল ওঁর সঙ্গে দেখা হল?

বেকার: না। সময়ই হয়নি।

প্র: সে কি! শুনেছি লন্ডনে গেলে কপিল আপনার বাড়ি যাবেনই। আর দিল্লি এলে আপনি ওঁর কাছে।

বেকার: কথাটা ঠিক। লন্ডনে ও গেলে শুধু বাড়ি যাওয়া নয়। আমরা চ্যারিটির কাজও একসঙ্গে করি। কিন্তু এ বার এত টাইট শিডিউল ছিল যে কিছুতেই সময় হল না।

প্র: আপনি কি জানেন এ দেশের মধ্যবয়স্কদের মধ্যে এখনও আপনাকে বা স্টেফিকে নিয়ে প্রচণ্ড উন্মাদনা। আশির দশকের মাঝামাঝি সবাই গভীর উৎসাহের সঙ্গে সেই সব মারকাটারি উইম্বলডন ফাইনাল দেখত। আজও তা নিয়ে নস্ট্যালজিয়া।

বেকার: আমি জানি উইম্বলডন এমন একটা ব্যাপার যা ইংল্যান্ড বা জার্মানি, এ সব দেশগত বাউন্ডারি পেরিয়ে অনেক অনেক দূর চলে যায়। এ দেশে আমি অনেক বার এসেছি। ইন্ডিয়া আমার ফেভারিট ডেস্টিনেশনের মধ্যে একটা। এ দেশের মানুষের প্রত্যক্ষ অনুভূতিও আমি টের পেয়েছি। দারুণ লাগে আর কী বলব।

প্র: আপনি কি জানেন সেই সময়ে অনেক বাবা-মা তাঁদের সদ্যোজাতর নাম রেখেছিলেন বরিস বা স্টেফি?

বেকার: বলছেন কী? এগুলো তো ঠিক ইন্ডিয়ান নাম নয়।

প্র: তা হলেও রাখা হয়েছিল। এতই ছিল ঘরে ঘরে আপনাদের নিয়ে উন্মাদনা।

বেকার: এগুলো শুনলে দারুণ লাগে। কবে সেই দিনগুলো পেরিয়ে এসেছি।

প্র: স্টেফির কথায় আসি। আজ সেরিনা উইলিয়ামসকে নিয়ে যখন এত নাচানাচি হয়। যখন সেরিনাকে শতাব্দীসেরা মহিলা টেনিস প্লেয়ার বলা হয় তখন সেই পুরনো ভালবাসার ওপর অত্যাচার অনেকে সহ্য করতে পারে না। বরিস, আপনার কী মনে হয়, স্টেফি-সেরিনার স্বপ্নের ফাইনাল হলে কে জিতবে?

বেকার: প্রত্যেকটা জেনারেশন তার শ্রেষ্ঠ নায়ক বা নায়িকা পায়। স্টেফির সময় স্টেফি। সেরিনার সময় সেরিনা। সেরিনা তো শুধু টেনিস প্লেয়ার নয়। একজন আইকন। সেরিনা আমারও বন্ধু। স্টেফিরও আমি খুব ফ্যান ছিলাম। তবে অলটাইম বেস্ট বাছতে বললে আমি বলব মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা।

প্র: মার্টিনা মেয়েদের মধ্যে সর্বকালের সেরা?

বেকার: মার্টিনা সিঙ্গলস, ডাবলস আর মিক্সড ডাবলস—তিনটে বিভাগেই কুড়ি বছর ধরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছে। যেটা অবিশ্বাস্য। শ্রেষ্ঠত্বের আর কী পরীক্ষা হবে?

প্র: মোট খেতাব?

বেকার: মোট খেতাবে স্টেফি এগিয়ে। তাই তো?

প্র: ইয়েস।

বেকার: কিন্তু এই স্ট্যাটিস্টিক্স ঠিক নয়। আসলে দুটো ‘এরা’ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি খেতাব মার্গারেট কোর্টের। তা হলে কাকে সেরা বলবেন? কোর্টকে না স্টেফিকে? বলা খুব কঠিন। একই ভাবে পুরুষদের টেনিসে সেরা কে? ফেডেরার সবচেয়ে বেশি জিতেছে। তা বলে কি ও রড লেভারের চেয়ে ভাল? বিয়র্ন বর্গ কি তা বলে কোনও প্লেয়ার ছিলেন না?

প্র: কিন্তু আধুনিক সময়ের বাজনা তো সব সময় কারেন্ট প্লেয়ারকে এগিয়ে দেওয়া।

বেকার: আমি পুরোপুরি এগ্রি করি। এই সেরিনার যে কথাটা বললেন, সত্যি তো তাই। জাস্ট বিকজ সোশ্যাল মিডিয়া বলছে কি কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বলছে তা হলে কি কারেন্ট প্লেয়াররা সর্বকালের সেরা হয়ে গেল? এই সোশ্যাল মিডিয়াওয়ালা কমবয়সিদের আমি বলতে চাই, ভাই তোমরা যখন চূড়ান্ত রায় দিচ্ছ তখন সব কিছু কি হিসেবের মধ্যে রেখেছ? ভেবেছ যে র‌্যাকেটগুলো আগেকার দিনে এত ভাল ছিল না। ভেবেছ যে জুতোগুলো মোটেই উঁচুমানের হতো না। আর তাতে খেলা শুরু করলে ঝামেলায় পড়তে হতো। ভেবেছ আগেকার দিনে প্লেয়ারদের প্রাইভেট জেট ছিল না। ভেবেছ ফার্স্ট ক্লাসে যেতেই তাদের দম বেরিয়ে যেত? কত কিছু ক্যালকুলেশনে আনতে হবে। আমার তাই সময় সময় মনে হয় আমি নিজে এর উত্তর দেওয়ার যোগ্যই না।

প্র: নোভাকের সঙ্গে আপনি এখন আর নেই। মনে করা যাক কাল সকালে ফেডেরারের ফোন এলো, বরিস আমি আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে চাই। তোমার সাহায্য দরকার।

বেকার: ফেডেরার আর কত জিতবে। সতেরোটা তো জিতেছে। এ বার অন্যদের একটু সুযোগ ছাড়ুক (হাসি)।

প্র: সত্যি মনে করুন ফোনটা এলো। নোভাকের কোচ ছিলেন আপনি। এ বার সামনে ফেডেরার।

বেকার: টু বি অনেস্ট রজারকে এই প্রশ্নটা কেউ কেউ করেছে। কিন্তু এটা যে ঘটবে না সেটাও আমি জানি। ইট উইল নেভার হ্যাপেন।

প্র: কেন নোভাকের সঙ্গে আপনার চুক্তির এক্সিট ক্লজে কি এমন কোনও ধারা রয়েছে যে প্রতিদ্বন্দ্বী সুপার পাওয়ারকে কোচ করতে পারবেন না।

বেকার: না না। ও সব নেই। আই অ্যাম আ ফ্রি ম্যান। যে কোনও কাউকে কোচ করতে পারি।

প্র: লিয়েন্ডার পেজ ডাবলসে এত বছর ধরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতছেন। সিঙ্গলসের সেতুটা পেরোতে পারলেন না কেন?

বেকার: এই প্রশ্নটা কালকেও আমাকে দিল্লিতে কেউ করেছিল যে ইন্ডিয়া এত ভাল ভাল ডাবলস প্লেয়ার তোলে। অথচ বিশ্বপর্যায়ে সিঙ্গলসের লোক তৈরি করতে পারে না। খুব গভীরে গিয়ে এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমায় অনেক কিছু ঘাঁটতে হবে। তবে ওপর ওপর বলতে পারি।

প্র: বলুন।

বেকার: সিঙ্গলস প্রকৃতিগত ভাবে ডাবলসের চেয়ে একদম আলাদা। সিঙ্গলসে সব কিছু তোমার নিজের ওপর। ডাবলসে অন্য কেউ তোমার দুর্বলতা ঢেকে দিতে পারে। অন্য কারও ওপর তুমি নির্ভর করতে পারো। সিঙ্গলসে সেটা হবে না। লিয়েন্ডার যেমন কোর্টের মধ্যে খুব দ্রুত। কোর্ট কভারেজ খুব ভাল। কিন্তু সিঙ্গলসে সেটা যথেষ্ট নয়। সিঙ্গলসের অ্যাঙ্গলগুলো আলাদা। প্র্যাকটিস আলাদা। মাইন্ডসেট আলাদা। খেলাটা আলাদা। তাকিয়ে দেখুন লিয়েন্ডারের হাইট মোটেই আহামরি নয়।

প্র: ছ’ফুট তিন হতে হবে?

বেকার: অন্তত পাঁচ ফুট দশ তো হতে হবে। যে কোনও টপ প্লেয়াকে দেখুন লিয়েন্ডারের চেয়ে ফিজিকালি বড়সড়। যারা টপে আছে তাদের কাঁধগুলো অনেক চওড়া। তাদের রিচ বেশি। তাদের পাওয়ার অনেক বেশি।

প্র: যেখানেই যান আপনি বিশ্ববিখ্যাত। জকোভিচের কোচ হয়ে যেখানে যেতেন মনোযোগটা তো ভাগ হয়ে যেত। এটা কোচের পক্ষে সমস্যা নয়? সব সময় তাঁর খ্যাতির ইগোকে সঙ্গে নিয়ে চলা!

বেকার: বিশাল সমস্যা। কোচ হতে গেলে প্রথম শর্ত হল নিজেকে বিসর্জন দেওয়া। মনে রাখতে হবে কোনও কিছুই তোমার জন্য নয়। সব কিছুই প্লেয়ারের জন্য। সে আসল। তুমি নিছক পেছনে থাকা একটা লোক। এই সত্যিটার সঙ্গে যত দ্রুত পারা যায় মানিয়ে নিতে হবে। আমি যদি খেলা ছাড়ার ঠিক পরেই নোভাকের কোচ হতাম, তা হলে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী ছিল। তখনও তো আমি প্লেয়ার বরিস। ও ভাবেই ভাবি।

প্র: এখন তা হলে নন?

বেকার: লাকিলি এখন অনেকটা বছর মাঝখানে কেটে গিয়েছে। বুড়ো হওয়ার অনেক খারাপ দিক আছে। দু’-একটা ভাল দিকের মধ্যে পড়ে যে বয়স আপনাকে ম্যাচিওরিটি দেয়। আপনি নিজেকে প্রয়োজন মতো পিছিয়ে নেওয়া শিখতে পারেন।

প্র: তা হলে শিষ্য নোভাকহীন বরিস বেকারের এখন ভবিষ্যৎ কী?

বেকার: ভবিষ্যৎ টেনিসেই থাকা। আবার কোচিং করা। হয়তো আগামী কালই নয়। আগামী সপ্তাহে নয়। কিন্তু ফোনকল তো আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। নোভাকের সঙ্গে আমার কাজ অনেক প্লেয়ারেরই ভাল লেগেছে। তারা ইন্টারেস্টেড। তবে এখনকার মতো স্পেসটা ওপেনই থাক।

Boris Becker Tennis Exclusive Interview
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy