Advertisement
E-Paper

বিজেন্দ্র-মন্ত্র নিয়েই সিদ্ধি দুই কন্যার

বিশ্ব যুব মহিলা বক্সিং যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুয়াহাটির সেই নবীন চন্দ্র বরদলৈ স্টেডিয়ামের বাইরে বক্সিং গ্লাভস হাতে একটা বড়সড় পোস্টার ঝুলছে সাক্ষীর। ছবির নিচে লেখা, ‘ওয়ান পাওয়ারফুল পাঞ্চ টু এম্পাওয়ার মিলিয়ন উইমেন’।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৫
বিশ্ব বক্সিংয়ের মঞ্চে সফল ভারতীয় বক্সারদের সঙ্গে জন আব্রাহাম। রবিবার গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই

বিশ্ব বক্সিংয়ের মঞ্চে সফল ভারতীয় বক্সারদের সঙ্গে জন আব্রাহাম। রবিবার গুয়াহাটিতে। ছবি: পিটিআই

এ যেন অনেকটা ‘দঙ্গল’ ছবির চিত্রনাট্য বাস্তব জীবনে। তফাৎ কেবল খেলায়। কুস্তির বদলে এখানে খেলাটা বক্সিং।

দেশের যে দুই মহিলা ক্রীড়াবিদকে নিয়ে এই কাহিনি তাঁরা বিশ্বসুন্দরী মানুসি চিল্লারকে চেনেন না। নাম শোনেননি ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মিতালি রাজেরও। কিন্তু মেরি কমের কথা শুনলেও মুখ আলো করা হাসি খেলে যায় হরিয়ানার দুই বক্সার কন্যা নীতু ঘাঙ্গাস (৪৮ কেজি) এবং সাক্ষী চৌধুরীর (৫৪ কেজি)।

বিশ্ব জুনিয়র যুব মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে রবিবার অলিম্পিক্সে পদক জয়ী বক্সার বিজেন্দ্র সিংহের অ্যাকাডেমির এই দুই ছাত্রীই সোনা জিতেছে। পদক জয়ের পরে হাসতে হাসতে হরিয়ানভি হিন্দিতে সাক্ষী বলছিল, ‘‘মেরি কম ছাড়া আমাদের এখন কাউকে চেনার প্রয়োজন নেই। আমাদের আদর্শ মেরি দিদি। যুব বক্সিংয়ে বিশ্বসেরা হয়ে থেমে গেলে চলবে না আমাদের দুই বন্ধুকে। এ বার সিনিয়র পর্যায়ে এশিয়ান গেমস ও অলিম্পিক্সের সোনার পদক চাই আমাদের দু’জনের।’’

বিশ্ব যুব মহিলা বক্সিং যেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুয়াহাটির সেই নবীন চন্দ্র বরদলৈ স্টেডিয়ামের বাইরে বক্সিং গ্লাভস হাতে একটা বড়সড় পোস্টার ঝুলছে সাক্ষীর। ছবির নিচে লেখা, ‘ওয়ান পাওয়ারফুল পাঞ্চ টু এম্পাওয়ার মিলিয়ন উইমেন’। বাংলা করলে দাঁড়াচ্ছে, ‘একটা ঘুসি দেশের লক্ষ লক্ষ মহিলাকে কয়েক কদম এগিয়ে দেবে’।

নীতু ও সাক্ষীর এ পর্যন্ত জীবনও যে মহিলাদের জীবনযুদ্ধে পরিধি থেকে কেন্দ্রে চলে আসার মতোই। দুই মেয়ের বিশ্বজয় দেখতে হরিয়ানার ধনানা গ্রাম থেকে গুয়াহাটি এসেছেন নীতু এবং সাক্ষীর বাবা মনোজ কুমার ও জয় ভগবান। জাতীয় পতাকা ওড়াতে ওড়াতে দু’জনেই গ্যালারিতে ম্যাচ দেখছিলেন। তাঁর ফাঁকেই শোনালেন তাঁদের মেয়েদের গল্প।

মনোজকুমার বলছিলেন, ‘‘গত তিরিশ বছর ধরে আমরা দু’জনকে চিনি। আমার মেয়ের জন্মের এক মাস পরে জয় ভগবানের মেয়ে জন্মায়। তখন গোটা মহল্লায় ছেলে হয়নি বলে আমাদের নানা কথা শুনতে হতো। তখনই দু’জনে মিলে ঠিক করি দু’জনের মেয়ে-কে দেখেই একদিন গোটা গ্রাম উদ্বুদ্ধ হবে। সে ভাবে মেয়েদের তৈরি করতে হবে। আজ আমাদের দুই বন্ধুর দিন। মেয়েরা দেখিয়ে দিল গ্রামের ছেলেদের ওরাও পিছনে ফেলে দিতে পারে।’’

পাশ থেকে জয় ভগবান এ বার বলতে শুরু করেন, ‘‘২০০৮ সালে বিজেন্দ্র সিংহ বেজিং এশিয়াডে পদক জেতার পরেই আমরা দুই বন্ধু মিলে ঠিক করি আমাদের মেয়েদের বক্সিংয়ে ভর্তি করে দিলে কেমন হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই আমরা দু’জনে চলে গিয়েছিলাম বিজেন্দ্রর ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে। সেখানেই ওর সঙ্গে কথা বলে ওর অ্যাকাডেমিতে মেয়েদের ভর্তি করে দিই। মেয়ের বাবা হওয়ায় বছর পনেরো আগে যে সব পরিবার ও বন্ধুরা সমাজে ব্রাত্য করে দিয়েছিল, এ বার তাদের গিয়ে বলব, আমাদের মেয়েরা ভারতকে বিশ্বসেরা করে। তাও আবার বক্সিং রিংয়ে লড়ে।’’ মেয়ের সাফল্যে গর্বিত বাবা জয় ভগবানের মুখটা তখন খুশিতে যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

সোনা জিতে ফিরে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সাক্ষী বলছিল, ‘‘স্কুলে দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হতাম। কিন্তু নয় বছর আগে বাবা একদিন এসে বলে, আর দৌড়াতে হবে না। এ বার তোরা বিজেন্দ্র সিংহের অ্যাকাডেমিতে যাবি। তখন অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাগ হয়েছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারি ওটা ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।’’ পাশ থেকে নীতু বলে দেয়, ‘‘ভিওয়ানি বক্সিং ক্লাবে বিজেন্দ্র সিংহের কাছ থেকেই বক্সিংয়ের প্রথম পাঠ নিয়েছি আমরা। অনেক কিছু শিখেছি আমরা বিজেন্দ্র ভাইয়ের কাছে। ওর টিপস আমাদের জীবনের একটা প্রাপ্তি। বক্সিংয়ের ফুটওয়ার্ক, পাঞ্চিং নিয়ে শুরু দিকে অনেক মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছি বিজেন্দ্র ভাইয়ের কাছে।’’ বিজেন্দ্রর েসই মন্ত্রেই বিশ্বমঞ্চে সিদ্ধি পেল দুই কন্যা।

দুই মেয়ের বন্ধুত্বও দেখার মতোই। দু’জনেই জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় শিবিরে ডেকে নেওয়া হয়েছিল সাক্ষীকে। নীতু তাই আধুনিক প্র্যাকটিস পাচ্ছিল না। তাই ছুটিতে বাড়ি এলে নীতুকে অনুশীলন পদ্ধতি দেখিয়ে দিত সাক্ষী। সেই মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন করত নীতু। বিকেলে বিজেন্দ্রর অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস তার আগে সকালে বাড়ির সামনে ক্ষেতের সামনে নীতু বক্সিং অনুশীলন করত একা একা।

২০১৫ তে জুনিয়র বিশ্বকাপে সোনা জিতেছিল সাক্ষী। আর নীতু গত সেপ্টেম্বরে বুলগেরিয়ায় অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে সেরা বক্সারের পুরস্কার পায়। তার পরে দুই বাড়ি মিলে উৎসব করেছিল গোটা গ্রামে।

এ বার মেয়ে বিশ্বজয়ী হওয়ার পরে গ্রামে ফিরে কী করবেন? মনোজ বলছেন, ‘‘আমার মেয়ে আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু তা বিদেশে। তাই গ্রামের লোকের কাছে পাত্তা পায়নি। এ বার দেশে বিশ্ব সেরা হওয়ায় গ্রামে কদর বাড়বে নিশ্চয়ই।’’

AIBA Women's Youth World Boxing Championships Boxing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy