Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বিধ্বংসী চহালের পাঁচ উইকেটে ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন রান দক্ষিণ আফ্রিকার

ভারতের এই বোলিং এখন বিশ্বের সেরা

ভারতের কোনও ঘূর্ণি পিচে এই ধরনের বোলিং হিসেব দেখলেও তারিফ করতে হয়। আর যখন এ রকম কাণ্ড ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও পিচে, তখন তাকে কী বলা যায়? বিস্ময়কর, অভাবনীয় না কি অন্য কিছু?

যুগলবন্দি: ডারবানের পরে সেঞ্চুরিয়নেও কামাল যুজবেন্দ্র চহাল ও কুলদীপ যাদবের। দু’জনে জুটিতে তুলে নিলেন আট উইকেট। ছবি: গেটি ইমেজেস এবং এএফপি।

যুগলবন্দি: ডারবানের পরে সেঞ্চুরিয়নেও কামাল যুজবেন্দ্র চহাল ও কুলদীপ যাদবের। দু’জনে জুটিতে তুলে নিলেন আট উইকেট। ছবি: গেটি ইমেজেস এবং এএফপি।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৩
Share: Save:

সেঞ্চুরিয়নের ম্যাচটা নিয়ে কিছু বলার আগে আমি একটা অনুরোধ করব। এক বার ভারতের দুই স্পিনারের বোলিং হিসেবের ওপর চোখ বুলিয়ে নিন। প্রথম জন যুজবেন্দ্র চহাল। ৮.২-১-২২-৫। অন্য জন কুলদীপ যাদব। ৬-০-২০-৩। মানে দাঁড়াল, ১৪.২ ওভারে ৪২ রান দিয়ে আট উইকেট!

ভারতের কোনও ঘূর্ণি পিচে এই ধরনের বোলিং হিসেব দেখলেও তারিফ করতে হয়। আর যখন এ রকম কাণ্ড ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও পিচে, তখন তাকে কী বলা যায়? বিস্ময়কর, অভাবনীয় না কি অন্য কিছু?

মানছি, দক্ষিণ আফ্রিকা ওদের সেরা দু’জন ব্যাটসম্যান, এ বি ডিভিলিয়ার্স এবং ফ্যাফ ডুপ্লেসি-কে চোটের জন্য পাচ্ছে না, কিন্তু তাতে ভারতীয় স্পিনারদের কৃতিত্ব এতটুকু কমছে না। ঘটনা হল, শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দলের সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরা আমাদের এই রিস্ট স্পিনারদের (যারা কবজি ব্যবহার করে বল ঘোরায়) বল খেলতে সমস্যায় পড়ছে। রবিবার যেমন হল সেঞ্চুরিয়নে।

বিরাট কোহালি টস জিতে একেবারে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিল্ডিং করার। দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুটাও খারাপ করেনি। পঞ্চাশ রানের ওপর তুলে দিয়েছিল এক উইকেট হারিয়ে। তার পরেই কোহালি দুই স্পিনারকে আক্রমণে নিয়ে এল। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার তিন উইকেট পড়ে যায় শূন্য রানে। দু’টো কুলদীপ, একটা চহাল। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখছি, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ১১৮ রান ওদের নিজেদের দেশে সর্বনিম্ন স্কোর। এই রান ভারত যে ২১ ওভারের মধ্যে তুলে দেবে, আশ্চর্য কী। শুধু রানটা এত কম হওয়ায় শিখর ধবন (৫১ ন.আ.) হাফসেঞ্চুরি পেলেও কোহালি (৪৬ ন.আ.) পেল না।

কেন এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এই দুই স্পিনার? দেখুন, রিস্ট স্পিনারদের খেলতে হলে গ্রিপ দেখে বুঝতে হবে বলটা কোন দিকে টার্ন করছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের দেখছি বলটা পিচে পড়ার পরে বোঝার চেষ্টা করছে কোন দিকে যাবে। এতে করে ওরা অনেক কম সময় পাচ্ছে বলটা ‘রিড’ করার। এবং ভুল স্ট্রোক খেলে আউট হয়ে যাচ্ছে।

জে পি ডুমিনির কথাই ধরুন। প্রথম ওয়ান ডে-তে দেখলাম, চায়নাম্যান কুলদীপের গুগলিটা বুঝতে এত সময় নিল, যে কিছু করতে পারল না। এ দিন নেমেছিল সুইপ অস্ত্রে স্পিন সামলানোর লক্ষ্যে। যেটা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা অনেক ক্ষেত্রে করে থাকে। কিন্তু এই ডুমিনি আর আগের ডুমিনি নেই। আর এই দুই স্পিনারকে শুধু সুইপ দিয়ে সামলানো সম্ভব নয়। লেগস্পিনার চহালের একটা ফ্লাইটেড বলে সুইপ করতে গিয়েই ফিরতে হল ডুমিনিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বাকি ব্যাটসম্যানদের আউট থেকেও স্পষ্ট, ওরা বুঝতেই পারছে না বল কোন দিকে ঘুরবে।

চহাল এবং কুলদীপের দু’টো গুণ সবার আগে চোখে পড়ে। এক, ফ্লাইট করানোর মানসিকতা। দুই, সাহস। যে কোনও অবস্থাতেই ফ্লাইট করায় এই দুই স্পিনার। ফলে ব্যাটসম্যান এক-আধটা বল মেরে দিলেও আউট হওয়ার সম্ভাবনা সব সময় থেকেই যায়।

ক্রিকেটে একটা কথা আছে। স্পিনারদের পরিণত বোধ আসে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তখন সাহসটাও বাড়ে। এই দু’জনকে দেখছি, এই বয়সেই পরিণত হয়ে উঠছে। কোনও অবস্থাতেই ঘাবড়ায় না। কেউ যদি ছয় মেরেও দেয়, তা হলেও ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাব নিয়ে পরের বল ফ্লাইট করাচ্ছে। এই সাহস এবং পরিণত বোধটা এসেছে কিন্তু আইপিএল খেলে খেলে।

এ দিনের ম্যাচের সেরা চহালের তুলনায় কুলদীপের হাতে বৈচিত্র অনেক বেশি। বড় স্পিন করায়, গুগলিটা দারুণ দেয়। স্ট্রেটারটাও ভাল। চহালকে সেই তুলনায় আমি বলব, কিছুটা মধ্যবিত্ত স্পিনার। তবে সীমিত ক্ষমতাটাকে দারুণ ভাবে কাজে লাগায়। বিশেষ কিছু পরীক্ষার মধ্যে যায় না। ভাল লেগস্পিন করায়, গুগলিটা অত মারাত্মক নয়। তবে দু’জনেরই লাইন-লেংথটা মারাত্মক। ওদের বোলিংয়ে পুল বা কাট শট মারতে প্রায় দেখাই যায় না ব্যাটসম্যানদের। এটা কিন্তু বুঝিয়ে দিচ্ছে নিজেদের বোলিংয়ের ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ ওদের। যেটা রিস্ট স্পিনারদের কাছে খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। রিস্ট স্পিনাররা বলটা ছাড়ে হাতের বাইরের দিক দিয়ে। তাই অফস্পিনার বা বাঁ-হাতি স্পিনারদের চেয়ে বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখাটা ওদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।

কিছু দিন আগেই স্টিভ স্মিথের মতো ক্রিকেটার বলেছিল, ভুবনেশ্বর কুমার এবং যশপ্রীত বুমরা এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বের সেরা পেস বোলিং জুটি। একদম ঠিক কথা। ওরা নতুন বলে যতটা ভাল, পুরনো বলেও তাই। ়ডেথওভারের সেরা অস্ত্র। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে এই দুই রিস্ট স্পিনার। যারা এখন মিডল ওভারে বিশ্ব জুড়ে ব্যাটসম্যানদের ঘুম ছুটিয়ে দিচ্ছে। তার মানে ৫০ ওভারের মধ্যে ৪০ ওভারের জন্য কোহালির হাতে আছে সীমিত ওভারের সেরা চার বোলার। বাকি দশ ওভারের জন্য হার্দিক পাণ্ড্যর মতো পেসার বা কেদার যাদবের মতো পার্টটাইমার আছে। এর পাশে বাইরে আছে মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবের মতো পেসার। অক্ষর পটেলের মতো বাঁ-হাতি স্পিনার। সব মিলিয়ে আমি কিন্তু সীমিত ওভারে এত বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং আক্রমণ আর কোনও দলের দেখছি না।

বিশ্বকাপের জন্য আদর্শ বোলিং আক্রমণ পেয়ে গিয়েছে ভারত। যে বোলিং আক্রমণকে বলতেই হবে এই মুহূর্তে ওয়ান ডে-তে বিশ্বসেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE