Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
India

শুভবুদ্ধির উদয়, বিরাটকে তিনেই ফেরাচ্ছে ভারত

প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক স্বয়ং মহানুভবতা দেখাতে গিয়েছিলেন।

বদল: রাজকোটে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। ধওয়নকে শুরুতে রেখে  তিনে ফিরছেন কোহালি। রাহুল খেলবেন চার নম্বরে। ফাইল চিত্র

বদল: রাজকোটে সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। ধওয়নকে শুরুতে রেখে তিনে ফিরছেন কোহালি। রাহুল খেলবেন চার নম্বরে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়ার বেত্রাঘাতের পরে দ্রুতই সংশোধনের রাস্তায় হাঁটা শুরু করল ভারতীয় দল। প্রথমেই অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাঁর নিজের জায়গা, অর্থাৎ তিন নম্বরে। যা শুনে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা হাঁফ ছেড়ে বলতে পারেন, যাক তা হলে শুভবুদ্ধির উদয় হল!

প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক স্বয়ং মহানুভবতা দেখাতে গিয়েছিলেন। শিখর ধওয়ন এবং কে এল রাহুল, দু’জনকেই দলে জায়গা করে দেওয়ার জন্য তিনি নিজে চার নম্বরে নেমে আসেন। মহানুভবতা যে ম্যাচ জেতায় না, জেতায় সঠিক রণনীতি, তা ওয়াংখেড়েতে দুরমুশ হওয়ার পরেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ভারত। মঙ্গলবারই ওয়াংখেড়ের ড্রেসিংরুমে ফিরে ভারতীয় দলের অন্দরমহলে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সঠিক সিদ্ধান্তে ফেরার জন্য কোনও ডিআরএসের প্রয়োজন হয়নি। সকলেই বুঝতে পারেন, কোহালিকে চারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল ‘ঐতিহাসিক ভুল’। রাজকোটে প্রথম কাজ হবে, অধিনায়ককে তিনে ফিরিয়ে আনা।

দু’টো জিনিস দিনের আলোর মত স্পষ্ট ছিল। বোঝার জন্য কোনও শার্লক হোমস হওয়ার দরকার ছিল না। এক) কোহালি কখনওই চার নম্বরে সফল হননি। তিনি নিজে যতই আত্মত্যাগ দেখিয়ে বলুন, নীচে নেমে আসতে অসুবিধা নেই, মানসিক একটা অস্বস্তি থেকেই যায়। ২০১৫ থেকে চার নম্বরে নেমে বিশ্বের সফলতম ওয়ান ডে ব্যাটসম্যানের স্কোর ভয়াবহ— ১৬, ৭, ১২, ১১, ৩ নট আউট, ৪ এবং ৯। তার আগে ২০১৪ সালে রান পেয়েছিলেন চার নম্বরে নেমে। আর কে না জানে, গত চার বছরেই ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভিভিয়ান রিচার্ডসের মতো প্রভাব তৈরি করেছে কোহালির ব্যাট। আর তা সম্ভব হয়েছে তিন নম্বরে খেলেছেন বলেই।

আরও পড়ুন: ডার্বির মহড়ায় ইস্টবেঙ্গল জুড়ে শুধুই অন্ধকার

দুই) ভারতীয় ইনিংসে ২৮তম ওভারে ব্যাট করতে আসেন কোহালি। অথচ, ফিডিং বোতল হাতে নেওয়া বাচ্চাও জানে, ক্রিকেটের প্রাথমিক নিয়ম, তোমার সেরা ব্যাটসম্যানকে যত সম্ভব বেশি ওভার ব্যাট করতে দাও। এই কারণেই সচিন-সৌরভ বা সহবাগেরা ওপেন করতেন। ম্যাথু হেডেন গত কাল কমেন্ট্রি করতে গিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় হিসেবে আমি তো দেখে খুব খুশি হয়েছি, কোহালি ২৮তম ওভারে ব্যাট করতে আসছে।’’

আরও পড়ুন: আলেসান্দ্রোকে ‘গো ব্যাক’ সমর্থকদের, আক্রান্ত সিইও

কারও কারও মনে পড়ে যেতে পারে সচিন তেন্ডুলকরের কথা। টেস্টে বরাবর তিনি চার নম্বরে ব্যাট করেছেন, কিন্তু ওয়ান ডে ক্রিকেটে কখনও এই জায়গায় নামতে চাইতেন না। সব সময় ওপেন করতে চেয়েছেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে তাঁকে নীচে ব্যাট করানো হচ্ছিল। তা নিয়ে মোটেও প্রীত ছিলেন না সচিন। অস্বস্তিতেও ভুগছিলেন। আর তার প্রভাব পড়ছিল তাঁর এবং দলের খেলায়। শেষ পর্যন্ত কোচ জন রাইট তাঁর কাছে খোলাখুলি জানতে চান, তুমি নিজে কোথায় ব্যাট করতে চাও? সচিন বলেন, ‘‘আমি টিমের স্বার্থে যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে রাজি। কিন্তু নিজে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি ওপেন করে।’’ রাইট এর পরে কথা বলেন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সচিনকে ওপেনে উঠিয়ে তিন নম্বরে নেমে আসেন সৌরভ। এর পরের ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের রূপকথায় পরিণত। ওপেনারের স্থান ফেরত পাওয়া সচিন তেন্ডুলকর সেঞ্চুরিয়নে শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসদের পাকিস্তানকে ধ্বংস করেন। প্রথম বল থেকেই শোয়েবদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী সচিনকে দেখা গিয়েছিল সে দিন। দেখে মনে হয়েছিল, কেউ যেন তাঁকে কয়েদখানা থেকে মুক্তি দিয়েছে আর মনের আনন্দে তিনি উড়ে বেড়াচ্ছেন।

তেমনই কোহালিকে তাঁর সেরা ফর্মে দেখতে গেলে যে তিন নম্বরেই যেতে হবে, তা নিয়েও কোনও সংশয়ের অবকাশ নেই। দল পরিচালন সমিতির এই ঘন-ঘন পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভ্যেসও অবিলম্বে ত্যাগ করতে হবে। মাত্র তিনটি এক দিনের ম্যাচ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজে। বিশ্বকাপের পরে কার্যত এই প্রথম একটা ভাল সিরিজ হচ্ছে। সেখানেও পরীক্ষা করা কেন? তা-ও আবার কোহালির মতো দলের সেরা সম্পদকে নিয়ে! ওয়াংখেড়েতে খেলা শুরুর আগেই সেমসাইড গোল খেয়ে বসেছিল ভারতীয় দল।

কোহালিকে তিন নম্বর স্থান ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ‘ডট বল’ (যে বলে রান হয় না) খেলা নিয়েও ওয়াখেড়ের ময়নাতদন্তে কথাবার্তা হয়েছে। পাওয়ার প্লে-তে অতি সাবধানতা এবং মন্থর ব্যাটিংয়ের রোগ সারানো দরকার, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। সেই মান্ধাতা আমলের ‘হাতে উইকেট রেখে চলো’ নীতি আধুনিক প্রজন্মে অচল। এখন পাওয়ার প্লে-তে ফিল্ডিং বিধিনিষেধ কাজে লাগিয়ে ‘যত পারো রান তুলে নাও’ রণনীতি চলছে। অইন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড গত দু’বছরে ওয়ান ডে ক্রিকেটের ভাষাই পাল্টে দিয়েছে। ঘন-ঘন চারশো রান তুলে দেখিয়েছে। শিখর ধওয়ন, কে এল রাহুলদের রিমোটে তাই নতুন ওয়ান ডে চ্যানেল সেট করতে হবে। রাতের দিকে শোনা গেল, ব্যাটিং অর্ডার এ রকম হতে পারে— রোহিত আর ধওয়ন ওপেন, তিনে কোহালি, চারে রাহুল। রাজকোটে বৃহস্পতিবার প্রাক-ম্যাচ প্রস্তুতিতে আরও ভাল বোঝা যাবে। তবে ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ গোছের ব্যাপার হল কি না, তা দেখতে হবে।

যে আধিপত্য নিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চরা মঙ্গলবার ভারতীয় বোলারদের উড়িয়ে দিলেন, তা দেখে কারও কারও মনে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া ‘মিশন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। কোহালিরা গত বছর অস্ট্রেলিয়া গিয়ে প্রথম বার টেস্ট সিরিজ জয়ের নজির সৃষ্টি করেছিলেন। তখন স্টিভ স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার বল-বিকৃতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গিয়ে দল থেকে নির্বাসিত। ঘরের মাঠে অপমানের জ্বালা ফিরিয়ে দেওয়ার শপথ নিয়ে তাঁরা ভারতে এসে থাকলে, অবাক হওয়ার নেই। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের রিংটোনই হচ্ছে মেরুদণ্ড দেখানোর ক্রিকেট। ইয়ান চ্যাপেল টিনএজ বয়সে দীর্ঘকায় ফাস্ট বোলারকে খেলতে গিয়ে ভয় পেয়েছিলেন বলে ক্লাব দল থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক। কে সেই প্রধান নির্বাচক? না, তাঁর বাবা মার্টিন চ্যাপেল! বলাই হয়, ‘রুথলেস অসিজ’। নির্মম সেই রূপই দেখেছে ওয়াংখেড়ে।

কোহালির মধ্যে একই আগ্রাসী, হার-না-মানা মনোভাব আছে বলে তাঁকে অনেকে অস্ট্রেলীয় মোড়কে এক ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। সন্দেহ নেই, ওয়ার্নারদের অস্ট্রেলিয়াকে রুখতে ‘অস্ট্রেলীয়’ কোহালিকেই

দরকার রাজকোটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket India ODI Australia Virat Kohli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE