Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্যারিবিয়ান গতির আগুনে পুড়ে ইডেনে কষ্ট করেই জয় পেল ভারত

ব্রায়ান চার্লস লারা ভাগ্যিস কলকাতা ছেড়ে এক দিন আগেই চলে গিয়েছেন! রবিবার ইডেনে থাকলে নিশ্চয়ই মেরুন জার্সিধারী ব্যাটসম্যানদের এই হাল দেখে তাঁর বিখ্যাত ক্যারিবিয়ান মেজাজটা ঠিক রাখতে পারতেন না! 

 ৩৪ বলে ৩১ রান করলেন দীনেশ কার্তিক।  ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

৩৪ বলে ৩১ রান করলেন দীনেশ কার্তিক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

কৌশিক দাশ
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৮
Share: Save:

ব্রায়ান চার্লস লারা ভাগ্যিস কলকাতা ছেড়ে এক দিন আগেই চলে গিয়েছেন! রবিবার ইডেনে থাকলে নিশ্চয়ই মেরুন জার্সিধারী ব্যাটসম্যানদের এই হাল দেখে তাঁর বিখ্যাত ক্যারিবিয়ান মেজাজটা ঠিক রাখতে পারতেন না!

বিরাট কোহালি কি এই ম্যাচ দেখলেন? দেখলে কিন্তু সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেটে জয়ের পরেও তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে।

ইডেনের সবুজ ঘাস নানা ক্যারিবিয়ান কীর্তিতে বহু বারই রঙিন হয়েছে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে এই ইডেনই দেখেছে, দর্শক বিক্ষোভের মধ্যে কনরাড হান্ট নামক এক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার নিজের জীবন তুচ্ছ করে কী ভাবে আগুনের হাত থেকে জাতীয় পতাকা রক্ষা করতে ঝাঁপিয়েছিলেন। দেখেছে, কোনও এক ম্যালকম মার্শাল টেস্টের প্রথম বলেই সুনীল গাওস্করকে ফিরিয়ে দিয়ে গোটা মাঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। বছর দু’য়েক আগে এও দেখেছে, কার্লোস ব্রাথওয়েট অতিমানবীয় দক্ষতায় চার বলে চারটে ছয় মেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কী ভাবে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন।

রবিবারের ইডেন একই সঙ্গে দেখল ওয়েস্ট ইন্ডিজের আত্মসমর্পণ এবং এক তরুণের মরিয়া লড়াই। যিনি একাই ডুবে যাওয়া ক্যারিবিয়ান গর্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।

আরও পড়ুন: চায়নাম্যানের ভেল্কিতে মুগ্ধ ইডেন বাদশা

ওশেন থমাসকে বছর দুয়েক আগে প্রথম দেখেছিলেন ক্রিস গেল। স্থানীয় এক ক্লাব নেটে বছর উনিশের ছেলেটাকে বল করতে দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নিজের দলে নিয়ে নেন গেল। সেই ছ’ফুটের ওপর লম্বা থমাস তাঁর চার ওভারের স্পেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে যে প্রশ্নপত্র রাখলেন, তার জবাব রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়নদের কাছে ছিল না। রোহিত গতি এবং সুইং বুঝতে না পেরে ইনসাইড এজে লাগিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিলেন। ধওয়নেরও একই হাল। তফাতের মধ্যে বাঁ হাতি ওপেনারের স্টাম্পগুলো ছিটকে গেল।

ওশেন ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারের ওপর গতিতে বল করে গেলেন। ২১ রান দিয়ে দু’উইকেট ২১ বছরের তরুণের। ব্রাথওয়েটের গতি অত বেশি নয়। কিন্তু লম্বা বলে ওশেনের মতোই বাউন্সটা পেয়েছেন। তিনি চার ওভারে ১১ রানে দু’উইকেট নিলেন। এবং এই দুই পেসারের স্পেল শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোহালিহীন ভারতীয় ব্যাটিং রীতিমতো চাপে ছিল। যা হয়তো বিরাট কোহালিকে খুশি করবে না। ২০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আট উইকেটে ১০৯ রান করার পরে মনে হচ্ছিল, এক তরফা ম্যাচ অপেক্ষা করে আছে। কিন্তু ক্যারিবিয়ান পেসারদের কল্যাণে কষ্ট করেই জিততে হল ভারতকে।

ইডেনের বাইশ গজে পেসাররা কিছুটা সাহায্য পেয়েছেন। স্পিনারদের বলও মাঝে মাঝে থমকে এসেছে। ঘুরেছে। বাংলার এক প্রাক্তন ক্রিকেটার ইনিংসের মাঝে বলছিলেন, ইডেনের পিচকে একেবারে আদর্শ টি-টোয়েন্টি উইকেট কখনওই বলা যাবে না। অন দ্য রাইজ শট খেলা একটু কঠিন। ম্যাচ শেষে অস্থায়ী অধিনায়ক রোহিতও বলে গেলেন, ‘‘পিচ থেকে পেসাররা সাহায্য পেয়েছে। স্পিনাররাও বল ঘোরানোর চেষ্টা করলে সফল হয়েছে।’’

এই পিচে খলিল আহমেদ তাঁর অভিষেক আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা বল করলেন, তাতে তাঁর বিশ্বকাপ ভিসা মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার কথা। নজরে থাকা দীনেশ কার্তিক নির্বাচকদের খুশিই করবেন তাঁর ফিনিশারের ভুমিকায়। তবে ঋষভ পন্থকে এই রকম চাপহীন ম্যাচে রান করার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

কুলদীপ যাদবের মতো রিস্টস্পিনার সব পিচেই বল ঘোরাতে পারেন। ইডেনের বাইশ গজ তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের কম্ম ছিল না এই পিচে চায়নাম্যানকে খেলার। ড্যারেন ব্র্যাভো, ব্রাথওয়েটরা চায়নাম্যান ডেলিভারি বুঝতে পারেননি, গুগলি তো নয়ই। এর সঙ্গে কুলদীপ আবার একটা নতুন বল আমদানি করেছেন তাঁর ঝুলিতে। ফাস্টার স্পিনিং ডেলিভারি। সাধারণত তিনি ঘণ্টায় ৭৫-৮৫ কিলোমিটার গতিতে স্পিন করান। এই বলটা করছেন একশো কিলোমিটারের বেশি গতিতে। ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে। তা, কুলদীপের চার ওভারে ১৩ রান দিয়ে তিন উইকেট বলে দিচ্ছে, ক্যারিবিয়ানরা যথেষ্ট বিভ্রান্তই হয়েছেন। ইডেনের তিন উইকেট টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কুলদীপের একশো উইকেট পূর্ণ করে দিল। ক্রুণাল পাণ্ড্য আর কুলদীপ মিলে ৮ ওভারে ২৮ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে গেলেন। সেখানেই ম্যাচটা হেরে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ব্রায়ান লারা যে ইডেনে ছিলেন না, তা এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের স্বাস্থ্যের জন্য বোধ হয় ভালই হয়েছে। না হলে ড্যারেন ব্র্যাভোর ব্যাটিং দেখে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারত! একটা সময় বলা হত, এই ব্র্যাভোর মধ্যে নাকি লারার ছায়া দেখা যায়। ইডেনে নৈশালোকের ম্যাচে ফ্লাডলাইটের দৌলতে এক এক জনের চার-চারটে ছায়া পড়ছিল। তা কোনও ছায়ার মধ্যেই হাবল টেলিস্কোপ দিয়েও লারার কোনও চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্র্যাভোকে কেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলানো হচ্ছে, তাও একটা বড় রহস্য।

ইডেনে হিরো কাপের পঁচিশ বছর পালন হয়েছে এই টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে। ১২ রানে ছ’উইকেট নিয়ে সেই হিরো কাপ ফাইনালে সেরা হয়েছিলেন এক স্পিনার। তিনি অনিল কুম্বলে। এই ম্যাচের সেরাও এক স্পিনার— কুলদীপ যাদব। প্রতিপক্ষ? সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ!

স্কোরকার্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৯-৮ (২০)

ভারত ১১০-৫ (১৭.৫)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

শেই হোপ রানআউট ১৪ •১০
রামদিন ক কার্তিক বো উমেশ ২ • ৫
হেটমায়ার ক কার্তিক বো বুমরা ১০ • ৭
পোলার্ড ক মণীশ বো ক্রুণাল ১৪ •২৬
ব্র্যাভো ক শিখর বো কুলদীপ ৫ •১০
রভম্যান ক কার্তিক বো কুলদীপ ৪ •১৩
ব্রাথওয়েট এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ৪ •১১
অ্যালেন ক উমেশ বো খলিল ২৭ •২০
কিমো পল ন. আ. ১৫ •১৩
পিয়ের ন. আ. ৯ •৫
অতিরিক্ত ৫
মোট ১০৯-৮ (২০)
পতন: ১-১৬ (রামদিন, ২.১), ২-২২ (হোপ, ৩.১), ৩-২৮ (হেটমায়ার, ৪.৪), ৪-৪৭ (পোলার্ড, ৯.২), ৫-৪৯ (ব্র্যাভো, ১০.১), ৬-৫৬ (রভম্যান, ১২.৩), ৭-৬৩ (ব্রাথওয়েট, ১৪.৫), ৮-৮৭ (অ্যালেন, ১৭.৬)।
বোলিং: উমেশ যাদব ৪-০-৩৬-১, খলিল আহমেদ ৪-১-১৬-১, যশপ্রীত বুমরা ৪-০-২৭-১, ক্রুণাল পাণ্ড্য ৪-০-১৫-১, কুলদীপ যাদব ৪-০-১৩-৩।

ভারত

রোহিত ক রামদিন বো থমাস ৬ •৬
শিখর ধওয়ন বো থমাস ৩ •৮
রাহুল ক ব্র্যাভো বো ব্রাথওয়েট ১৬ • ২২
ঋষভ ক ব্র্যাভো বো ব্রাথওয়েট ১ •৪
মণীশ ক ও বো পিয়ের ১৯ •২৪
কার্তিক ন. আ. ৩১ •৩৪
ক্রুণাল ন. আ. ২১ •৯
অতিরিক্ত ১৩
মোট ১১০-৫ (১৭.৫)
পতন: ১-৭ (রোহিত, ০.৬), ২-১৬ (শিখর, ২.৫), ৩-৩৫ (ঋষভ, ৫.৪), ৪-৪৫ (রাহুল, ৭.৩), ৫-৮৩ (মণীশ, ১৪.৬)।
বোলিং: ওশেন থমাস ৪-০-২১-২, কিমো পল ৩.৫-০-৩০-০,কার্লোস ব্রাথওয়েট ৪-১-১১-২, পিয়ের ৪-০-১৬-১, কায়রন পোলার্ড ১-০-১২-০, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ১-০-১১-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE