অধিনায়ক মিতালি রাজ।
রবিবার লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে মিতালি রাজের দল হেরে যাওয়ার পরে অনেক সমালোচনাই কানে এসেছে। আমি ওই দলে ভিড়তে নারাজ। কারণ আমি হারের পরেও মনে করছি, ঝুলন-মিতালিরা ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করে দিল রবিবার।
ঠিক যেমন ভাবে তিরাশির পঁচিশে জুন কপিলদেবের ভারত বিশ্বকাপ জেতার পরে গোটা দেশে ক্রিকেট নিয়ে একটা উন্মাদনার শুরু হয়। অনেকেই বলবেন, ঝুলনরা তো চ্যাম্পিয়ন হয়নি। তা হলে কী ভাবে নতুন যুগের প্রসঙ্গ আসছে? ঠিকই, মিতালি, হরমনপ্রীতরা হেরে গিয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে দীপ্তি শর্মা, পুনম রাউতদের ক’জন চিনত? রবিবার থেকে কিন্তু ওরা ভারতের ঘরে ঘরে ঢুকে গিয়েছে।
বিবেকানন্দ পার্কে আমার অ্যাকা়ডেমির পাশেই স্বপন সাঁধুর কোচিং ক্যাম্প থেকে ঝুলনের উঠে আসা। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সেখানে এমন অনেক মেয়ে আছে, যাদের অভিভাবকরা নবম-দশম শ্রেণিতে উঠলেই মেয়ের খেলা বন্ধ করে দেন। কেউ বলেন, খেলে কি চাকরি হবে? কেউ বলেন, মেয়েদের ক্রিকেট কে দেখে? কেউ বা আবার বলেন, খেললে মেয়ের বিয়ে হবে না। আশা করছি, এই সব অর্বাচীন, নেতিবাচক প্রশ্নগুলো সোমবার থেকে গোটা ভারতে কেউ করবে না। একই সঙ্গে খুব দ্রুত অনেক নতুন প্রতিভা উঠে আসার প্রবল সম্ভাবনাও রয়েছে। পাশাপাশি, মাঠে নেমে আমরাও পারি— এই বোধটা কিন্তু আমাদের দেশের মেয়ে ক্রিকেটারদের মাথায় গেঁথে গিয়েছে ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। এর চেয়ে বড় পাওনা আর কিছু হতে পারে না।
সোমবার বিকেলে আরও একটা বড় খবর পেলাম। তা হল আইসিসি মহিলাদের যে বিশ্ব একাদশ গড়েছে তার অধিনায়ক করা হয়েছে ভারতের মিতালি রাজ-কে। দুর্দান্ত খবর, সন্দেহ নেই। মিতালির মধ্যে সৌরভ বা বিরাটের মতো আগ্রাসন নেই। বরং ওর মধ্যে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ঠান্ডা মাথায় দল পরিচালনার বড় গুণ রয়েছে। ওর সঙ্গে বিশ্ব একাদশে ভারতের হরমনপ্রীত কৌর এবং দীপ্তি শর্মাও জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এই তালিকায় ঝুলনকে রাখা হল না কেন তা বোধগম্য হল না। বিশ্বকাপ ফাইনালে ঝুলনের ২৩ রান দিয়ে তিন উইকেটের স্পেল সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো থাকবে। আমি নিশ্চিত, এখন অনেক ছোট ছোট মেয়েকেই তাদের অভিভাবকেরা কোচিং সেন্টারে নিয়ে আসবেন ঝুলন, মিতালি হওয়ার লক্ষ্যে।
মেয়েদের ক্রিকেটে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy