আত্মবিশ্বাসী: হিমার সামনে এ বার জাকার্তার চ্যালেঞ্জ। ফাইল চিত্র
স্বাধীনতা দিবসের সন্ধেয় চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ থেকে সতীর্থ ভারতীয় অ্যাথলিটদের সঙ্গে তিনি উড়ে যাবেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। তাই মঙ্গলবার সকালেই ব্যাগে ভরে নিয়েছেন ভারতীয় জাতীয় পতাকা।
যে তথ্য জানিয়েই আসন্ন এশিয়ান গেমসে অ্যাথলেটিক্সে ভারতের পদক জয়ের অন্যতম আশা হিমা দাস বলে দেন, ‘‘তেরঙ্গা পতাকা আমাকে সব সময় ভাল পারফর্ম করতে উদ্বুদ্ধ করে। বিশ্বের যেখানেই যাই, ব্যাগে জাতীয় পতাকা নিতে ভুলি না।’’
মাত্র এক মাস আগেই ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ৪০০ মিটারে সোনা জিতে ইতিহাস গড়েছেন অসমের এই কৃষক-কন্যা। শেষ আশি মিটারে তিন জনকে পিছনে ফেলে সোনা জিতেছিলেন তিনি। দারিদ্রকে হারিয়ে তাঁর এই বিশ্ব জয়ের পরে আলোড়িত হয়েছিল গোটা ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহালি, অমিতাভ বচ্চনরাও কুর্নিশ জানিয়েছিলেন অষ্টাদশী এই কন্যার সাফল্যকে। সে কথা তুলতেই ফোনের ও পার থেকে থামিয়ে দেন হিমা। বলে দেন, ‘‘পুরনো সাফল্য নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। ওটা এখন ভুলে গিয়েছি। সামনে এখন এশিয়ান গেমস। সেখানে সোনা জিতে পোডিয়ামে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়াতে চাই। তার জন্যই কঠোর পরিশ্রম করছি প্রাগের অনুশীলন শিবিরে। জোরে, আরও জোরে দৌড়তে হবে আমাকে।’’
অসমের নগাঁও-এর কান্ধুলিমারি গ্রামে বাবা রণজিৎ দাসের সম্বল দুই বিঘা জমি। মা জোনালি দাস গৃহবধূ। চার ভাইবোনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। পেটের খিদেকে হারিয়ে জোরে দৌড়ানোর খিদেই হিমাকে তুলে এনেছে এই মুহূর্তে ভারতের সেরা প্রতিশ্রুতিমান অ্যাথলিটদের তালিকায়।
গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতেন এক সময়। সেখান থেকেই অসমের বিখ্যাত অ্যাথলেটিক্স কোচ নিপন দাস তুলে এনেছেন হিমাকে। দু’বছর আগে কলকাতায় পূর্বাঞ্চলীয় মিটে ২০০ ও ৪০০ মিটারে সোনা জেতার পরেই প্রথম প্রচারের আলোয় আসা। একাগ্রতা, সেরা হওয়ার তাগিদ, গতি, লম্বা পদক্ষেপে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করে যাওয়া সম্পদ সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার এই অসমিয়া অ্যাথলিটের। এশিয়ান গেমসে ৪০০ মিটারে সোনা জয়ের জন্য প্রাগে অনুশীলনে ডুবে থাকলেও হিমার আক্ষেপ, ভারত ও চেক প্রজাতন্ত্রের সময়ের পার্থক্য। তাই বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে সব সময় কথা বলতে পারছেন না। মোবাইল ফোনটাও সব সময় কাছে না থাকায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটেও প্রবেশ নিষেধ। হিমা বলছেন, ‘‘কিছু পেতে গেলে, কিছু তো ছাড়তে হবেই।’’
ফুটবলে আর্জেন্টিনা আর গানে জ়ুবিন গর্গের ভক্ত এই অ্যাথলিট গত এপ্রিলে গোল্ড কোস্টে কমনওয়েলথ গেমসে ৪০০ মিটারের ফাইনালে উঠলেও ষষ্ঠ হয়েছিলেন। সময় করেছিলেন ৫১.১৩ সেকেন্ড। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সময় করেছেন ৫১.৪৬ সেকেন্ড। সে কথা জানিয়ে হিমার কোচ নিপন বলে দেন, ‘‘এশিয়ান গেমসে ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার ও ৪x৪০০ মিটার রিলে-তে নামবে হিমা। আশা করছি, সব বিভাগেই পদক নিয়েই ভারতে ফিরবে আমার ছাত্রী। তবে পদকের রংটা কী হবে, সেটা সময় বলবে।’’
এশিয়ান গেমসে হিমার প্রিয় ইভেন্ট ৪০০ মিটারে যিনি কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারেন, তিনি বাহরিনের সালওয়া ইদ নাসের। ডায়মন্ড লিগে দারুণ পারফর্ম করেছেন। নাইজিরীয় বংশোদ্ভূত এই বাহরিনের অ্যাথলিট গত মাসেই হারকিউলিস মিটে ৪০০ মিটার দৌড়েছেন ৪৯.০৮ সেকেন্ডে। সে প্রসঙ্গ উঠলেই হিমা বলে দেন, ‘‘আমি সময় ভাল করবই। আর ট্র্যাকে যখন ছুটতে থাকি, তখন মাথায় রাখি না কে সঙ্গে ছুটছে। তখন লক্ষ থাকে একটাই—সবার আগে দৌড় শেষ করতে হবে। আর তার জন্য ভারতীয় শিবিরে ৪০০ মিটারের মার্কিন কোচ গ্যালিনা বুখারিনার কাছে কঠোর অনুশীলন করছি। সকালে তিন ঘণ্টা আর বিকেলে আড়াই ঘণ্টা। হচ্ছে মানসিক ভাবে শক্ত থাকার অনুশীলনও।’’ হিমা আরও যোগ করেন, ‘‘আমার আগে কেউ ছুটতে থাকলেই তাঁকে হারানোর জেদটা আরও বেড়ে যায়। আমার সময় আরও ভাল হতে শুরু করে। জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও সেটা হয়েছিল। আশা করছি, এশিয়ান গেমসেও তা হবে। চারশো মিটারের শেষ একশো মিটারেই তো আসল লড়াই। তার জন্য নিজেকে তৈরি রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy