Advertisement
০২ মে ২০২৪
দস্তানার দাপট

অলরাউন্ডার হার্দিক প্রাপ্তি হবে ভারতেরও

জয়ের হ্যাটট্রিক করে আসা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের রথের চাকা আটকে গেল সেই ওয়াংখেড়েতে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ জিতল ৩৭ রানে।  

 নায়ক: ব্যাটে ২৫ রান, বল হাতে তিন উইকেট হার্দিকের। এএফপি

নায়ক: ব্যাটে ২৫ রান, বল হাতে তিন উইকেট হার্দিকের। এএফপি

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

ইতিহাসের ওয়াংখেড়েতে বুধবার দু’টো অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে দেখলাম।

এক, ডোয়েন ব্র্যাভোর করা শেষ ওভার। যেখানে হার্দিক পাণ্ড্য এবং কায়রন পোলার্ড মিলে ২৯ রান তুলল। দুই, পোলার্ডের ক্যাচ। সুরেশ রায়নার কাট কভার পয়েন্ট বাউন্ডারিতে দাঁড়িয়ে থাকা পোলার্ড লাফিয়ে উঠে এক হাতে ধরে নেয়। পোলার্ডের উচ্চতা এমনিতে ছ’ফুট চার ইঞ্চি মতো। সেই পোলার্ড যখন শূন্যে থাকা অবস্থায় ক্যাচটা ধরল, বল মাটি থেকে কম করে ন’ফুট উঁচুতে। পোলার্ড ছাড়া ওই ক্যাচ ধরা কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আমার দেখা আইপিএলের অন্যতম সেরা ক্যাচ। আর এই আইপিএলের এখন পর্যন্ত সেরা তো বটেই।

জয়ের হ্যাটট্রিক করে আসা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের রথের চাকা আটকে গেল সেই ওয়াংখেড়েতে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ জিতল ৩৭ রানে।

প্রত্যাবর্তনের এই হার্দিককে দেখে দারুণ লাগল। এই ম্যাচে অলরাউন্ডার হার্দিক শুধু মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্রাপ্তি হয়ে থাকল না, ভারতেরও বড় প্রাপ্তি হয়ে রইল। হার্দিক যে রকম বিধ্বংসী ব্যাটিং করল, সেটা এক জন ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানই করতে পারে। ডেথ ওভারের বিশেষজ্ঞ ব্র্যাভোকে মারা দেখেই যেটা বোঝা যাচ্ছে। হার্দিক আর পোলার্ডের তাণ্ডবের সামনে অসহায় দেখিয়েছে ব্র্যাভোকে। হার্দিক ৮ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকল, পোলার্ড সাত বলে ১৭। হার্দিকের ব্যাট থেকে পাওয়া গেল তিনটে ছয়, পোলার্ডের দুটো।

হার্দিকের মারা একটা শট তো আমি ভুলতে পারব না। ব্র্যাভোর চতুর্থ বলে মারা হেলিকপ্টার শট। মিডউইকেট দিয়ে গ্যালারির উপরে ফেলে দিল। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ধোনিকে দেখতে হল অন্য কেউ হেলিকপ্টার শটে বল গ্যালারিতে ফেলছে!

হার্দিকের ব্যাটিংই নয়, ওর বোলিংটাও কিন্তু আমার ভাল লেগেছে। যথেষ্ট গতিতে বল করেছে। একটু শর্ট অব লেংথে ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে। প্রথম ওভারে মাত্র এক রান দিয়েছিল হার্দিক। তৃতীয় ওভারে তুলে নিল ধোনি এবং রবীন্দ্র জাডেজাকে। ব্যাটসম্যানদের শট খেলার কোনও জায়গাই দেয়নি। সব মিলিয়ে চার ওভারে ২০ রান দিয়ে তিন উইকেট। স্বাভাবিক ভাবে ম্যাচের সেরা হার্দিকই।

বিরাট কোহালি যদি এই ম্যাচটা দেখে থাকে, তা হলে চোট সারিয়ে ফিরে আসা এই হার্দিককে দেখে খুশিই হবে। হয়তো বিজয় শঙ্করের উত্থান হার্দিককে তাতিয়ে দিয়েছে। কারণ যাই হোক না কেন, এই পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপে ভারতের সাত নম্বর জায়গা নিয়ে আর ভাবতে হবে না।

মুম্বইয়ের ফিল্ডিংও এই ম্যাচে অসাধারণ হয়েছে। উইকেটের পিছনে কুইন্টন ডি’ককও চারটে দারুণ ক্যাচ নিল। একটার কথা তো বলতেই হবে। লাসিথ মালিঙ্গার ইয়র্কার ব্র্যাভোর ব্যাটের ভিতরের দিকে লেগে কুইন্টনের বাঁ দিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার এই কিপার ক্যাচটা নিলেন দু’হাতে। কত ভাল অনুমান ক্ষমতা আর ক্ষিপ্রতা থাকলে এক জন কিপার ওই অবস্থায় দু’হাতে ক্যাচ নিতে পারে, সেটা আমি জানি।

হার্দিকের মতো মালিঙ্গাও তিন উইকেট নিয়ে গেল এই ম্যাচে। এ বারই শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে মালিঙ্গার। যেখানে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সম্ভবত মুখিয়ে আছে শ্রীলঙ্কার এই পেসার।

চেন্নাই ব্যাটিংয়ে বলার মতো অবদান রাখল কেদার যাদব। ৫৪ বলে ৫৮ করল কেদার। মিডল অর্ডারে ভরসা করার মতো ব্যাটিং পাওয়া যাচ্ছে এই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে।

এর আগে তিনটের মধ্যে দুটো ম্যাচে হেরেছিল মুম্বই। এই ম্যাচ হারলে প্লে অফের রাস্তাটা কঠিন হয়ে যেত। কিন্তু ব্যাটে-বলে তফাত গড়ে দিয়ে গেল হার্দিক। মুম্বইও জিতে নিল আইপিএলে তাদের একশোতম ম্যাচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE