Advertisement
০২ মে ২০২৪
Mumbai Indians

৫/৫! আকাশে মুম্বই, চার বছর আগেও টেনিস বলে খেলা ইঞ্জিনিয়ার জেতালেন রোহিতদের

মাত্র চার বছর আগের কথা। তখনও উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলিতে টেনিস বলে দাপিয়ে ক্রিকেট খেলতেন আকাশ মাধওয়াল। বদলে যান ওয়াসিম জাফরের সংস্পর্শে এসে। এখন তিনি আইপিএলের উঠতি তারকা।

akash madhwal

লখনউয়ের বিরুদ্ধে মুম্বইকে জয় এনে দিল আকাশের বোলিং। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৩ ০০:১৫
Share: Save:

মাত্র চার বছর আগের কথা। তখনও উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলিতে টেনিস বলে দাপিয়ে ক্রিকেট খেলতেন আকাশ মাধওয়াল। সাধারণত যাকে ‘খেপ’ খেলা প্রতিযোগিতা বলে, সেখানেই। জীবনটা বদলে গেল ২০১৯-এ ওয়াসিম জাফরের পাল্লায় পড়ে। একটি ট্রায়ালে আকাশকে প্রথম দেখা জাফরের। সঙ্গে সঙ্গে নজর কেড়ে নেন। সেই শুরু। বুধবার এলিমিনেটরে লখনউয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে আকাশ বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর উপর আস্থা রেখে ভুল করেননি কেউ।

২৪ বছর বয়স পর্যন্ত সাদা বলের ক্রিকেটের সঙ্গে কোনও পরিচয়ই ছিল না আকাশের। তিনিই উত্তরাখন্ডের রাজ্য দলের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলে খেলে ফেললেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে উত্তরাখন্ডের কোচ মণীশ ঝা বলেছেন, “২০১৯-এ ও ট্রায়ালে এসেছিল। প্রথম দেখাতেই আমাদের ভাল লেগেছিল। খুব মসৃণ বোলিং অ্যাকশন। ওর মধ্যে একটা এক্স ফ্যাক্টর ছিল। ওয়াসিম ভাই সঙ্গে সঙ্গে ওকে দলে টেনে নেন এবং সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে কর্ণাটকের বিরুদ্ধে খেলিয়ে দেন।”

হঠাৎ করে এত বড় একটা ম্যাচে খেলতে নেমে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন আকাশ। তাঁকে দেখেই মনে হয়েছিল অপ্রস্তুত। পরের বছর কোভিডে রঞ্জি ট্রফি বাতিল হয়ে যায়। কোচের দায়িত্ব পান মণীশ। তখনই আকাশকে জানিয়ে দেন, তিনটি ফরম্যাটেই তাঁকে খেলতে হবে রাজ্যের হয়ে। যত রানই হজম করুন না কেন, দল থেকে বাদ পড়বেন না।

নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মণীশ বলেছেন, “টেনিস বলে প্রচুর ক্রিকেট খেলার কারণে ওর বলে গতি ছিল। কিন্তু নিখুঁত বল করতে পারত না। নিজের বোলিং নিয়ে বড্ড বেশি পরীক্ষা করত। আমার একটাই চিন্তা ছিল, যদি তুমি সোজাসুজি জোরে বল করতে পারো, তা হলে মাঝেসাঝে স্লোয়ার দেওয়ার দরকার কী? তবে আকাশ কম সময়ের মধ্যেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল আমরা ওর থেকে কী চাইছি। তার ফলাফল আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন।”

সূর্যকুমার যাদবের পরিবর্ত হিসাবে গত বছর মুম্বইয়ে যোগ দিয়েছিলেন আকাশ। এখন রোহিতের দলের সেরা অস্ত্র তিনি। বুধবার শুরুতে আউট করেন প্রেরক মাঁকড়কে। পরে এক ওভারেই ফেরান আয়ুষ বাদোনি এবং নিকোলাস পুরানকে। এর পর রবি বিষ্ণোই এবং মহসিন খানকে ফিরিয়ে খেলা শেষ করে দেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচেই ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। তার আগে গুজরাতের বিরুদ্ধে ৩ উইকেট। আউট করেন ঋদ্ধিমান সাহা, শুভমন গিল এবং ডেভিড মিলারকে। গত মরসুমের আগে উত্তরাখন্ডের সাদা বলের ক্রিকেটে অধিনায়ক করে দেওয়া হয় আকাশকে। এতেই বোঝা যায় তাঁর উন্নতির রেখচিত্র।

মণীশ বলেছেন, “প্রত্যেক ক্রীড়াবিদই কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু মানসিকতাই তাদের বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয়। গত বছর ওকে সাদা বলের অধিনায়ক করার পর নিজেই এগিয়ে এসে ভাল পারফর্ম করে। আইপিএলে সবাই নতুন বলে ওর বোলিং দেখেছে। গুজরাতের বিরুদ্ধে দারুণ ভাবে নতুন বল ব্যবহার করেছে। আবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ডেথ ওভারে ভাল বল করেছে। ওকে আইপিএলে ভাল খেলতে দেখে আমি খুশি। এখন থেকেই উত্তরাখন্ডের উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছে আকাশ।”

শুধু খেলাধুলো নয়, পড়াশোনাতেও কম যান না আকাশ। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন তিনি। রুরকির ধান্ধেরা ছেলে আকাশের বাড়ি ঋষভ পন্থের বাড়ির কাছেই। ছোটবেলায় অবতার সিংহের কাছে ক্রিকেট শিখেছেন। এই অবতার পন্থেরও ছোটবেলার কোচ ছিলেন। পরে পন্থ দিল্লিতে চলে যান। অবতার বলেছেন, “ঋষভের বাড়ির উল্টো দিকেই আকাশের বাড়ি। ওরা একে অপরের প্রতিবেশী। ঋষভ ছোটবেলায় আমার কাছে কোচিং নিয়েছে।”

আকাশের বাবা সেনাবাহিনিতে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩-য় একটি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার পরে আকাশ পড়াশোনায় মন দেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। শখের ক্রিকেট খেলতেন। উত্তরাখন্ড তখন রঞ্জিতে খেলত না বলে আকাশ টেনিস বলের ক্রিকেটেই মন দিয়েছিলেন। রাতারাতি জীবন বদলে গেল জাফরের সংস্পর্শে এসে। এখন তিনি শুধু উত্তরাখন্ড নয়, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সেরও গর্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE