বিমর্ষ হাবাস।
তেতাল্লিশ দিনের ব্যবধানে মিলে গেল দুই আটলেটিকো মাদ্রিদ এবং কলকাতা!
মাদ্রিদ ডার্বি গ্যালারিতে বসে দেখতে হয়েছিল দিয়েগো সিমিওনেকে। স্প্যানিশ সুপার কাপে সহকারী রেফারিকে আঘাত করায় আট ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছিলেন তিনি।
আর কলকাতা আটলেটিকোর কোচ হয়ে এসে একই রকম শাস্তি পেতে হল আন্তোনিও হাবাসকে। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার রবার্ট পিরেসকে গোয়ার মাঠে ঘুষি মারার অভিযোগে তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং চার ম্যাচ সাসপেন্ড করেছে ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। আজ রবিবার তো বটেই পরের আরও তিনটি ম্যাচ গ্যালারিতে বসেই দেখতে হবে হাবাসকে। মাঠে তো ঢুকতে পারবেনই না। বিরতিতেও দিতে পারবেন না কোনও নির্দেশ। কারণ ড্রেসিংরুমে ঢোকার উপরও যে ঝুলে গিয়েছে নো এন্ট্রি বোর্ড।
কিন্তু হাবাসের শাস্তি লঘু পাপে গুরুদণ্ড কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া নিয়েই তো উঠে গিয়েছে বিতর্ক। শোনা যাচ্ছে সাত সদস্যের কমিটির ষাট ভাগকে অন্ধকারে রেখেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত। চেয়ারম্যান নাজির আমেদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান বাবু মাথের এবং কমিটির এক সদস্য রাকেশ বক্সি মিলে সাসপেনশন ও জরিমানার এ রকম কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ আইএসএল শুরুর আগে ৫ অক্টোবর কমিটির সব সদস্যকে মেল করে জানানো হয়েছিল শৃঙ্খলার ব্যাপারটা তাঁরাই দেখবেন। পাঠানো হয়েছিল নিয়ম-কানুনের কাগজপত্রও। কোনও ঘটনা ঘটলে মেল করে জানানো হবে সব কিছু, তাও বলা হয়েছিল। সেটাই হয়নি।
কমিটির অন্যতম সদস্য কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “আরে এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। আমি তো কিছুই জানি না। আরও তিন জনের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ তো কিছুই জানে না।” এ রকম অস্ত্র আর মশলা পেলে মোহনবাগানের অঞ্জন মিত্র বা ইস্টবেঙ্গলের কল্যাণ মজুমদাররা ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বাজার গরম করে দিতেন চিঠির পর চিঠি দিয়ে। ‘চক্রান্ত’ বা ‘আইনের পথে যেতে বাধ্য করবেন না’-র মতো কড়া চিঠিও চলে যেত। কিন্তু আটলেটিকো দে কলকাতার মালিকরা কেউই পোড়খাওয়া ময়দানি কর্তা নন যে, ময়দানের ‘ব্যারিস্টার’ ধরে পাল্টা আক্রমণে যাবেন। ফলে তাঁরা ‘যুদ্ধে’ না গিয়ে আবেদনের রাস্তায় হাঁটছেন। যেটা সহজ-সরল পথ। ব্যবসায়িক বা কর্পোরেট দুনিয়ায় যা ঘটে। তাঁরা চিঠি দিয়েছেন শাস্তি কমানোর। টিমের অন্যতম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আবেদন করেছি। মনে হচ্ছে শাস্তি কমবে। বিনা দোষে আমাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।” আর এক মালিক উত্সব পারেখের মন্তব্য, “চেষ্টা হচ্ছে শাস্তি কমানোর। চিঠি দিয়েছি, কিছু একটা হবে।” শোনা যাচ্ছে ফেডারেশন সচিব প্রফুল্ল পটেলের দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতার কর্তারা।
উজ্জ্বল লোবো। ম্লান ফিকরু। শনিবার আটলেটিকো দে কলকাতার প্র্যাকটিসে।
রাজারহাটে কলকাতার টিম হোটেলে যখন দুপুরে কোচ হাবাস, ফুটবলার ফিকরু আর গোলকিপার কোচ প্রদীপকুমার ভক্তাওয়ারের ‘সাসপেনশন অর্ডার’ মেল মারফত পৌঁছয়, তখন থেকেই অদ্ভুত একটা থমথমে আবহ। শুরু হয়ে যায় দোষারোপের সামান্য চোরাস্রোতও। গুয়াহাটিতে আগুনে মেজাজ এবং বিশ্রী আচরণের জন্য হাবাসকে কড়া চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছিল আইএসএল কমিটি। তার পর গোয়ায় গিয়েও কেন এমন করলেন কলকাতার স্প্যানিশ কোচ? তা নিয়েই চাপান-উতোর। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, কেন ফিকরু হঠাত্ ‘হেড বাট’ করতে গেলেন তা নিয়েও। কলকাতার এক কর্তা বলছিলেন, “আমরা শীর্ষে আছি। প্ররোচনা তো আসবেই। সামান্য ঘটনা সবাই বড় করে দেখাবে। আমরা তাতে পা দেব কেন?”
কোচ বা ফিকরুকে কেউ অবশ্য সামনাসামনি এ সব বলেননি। বলবেনই বা কে? কলকাতা টিমের কর্তারাই তো ঘটনায় কেমন যেন বিহ্বল। হাবাস এ দিন স্টেডিয়ামে চলে এসেছিলেন টিম আসার প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে। মুখটা থমথমে। টিম কর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর চব্বিশ বছরের কোচিং জীবনে কখনও এ রকম ঘটেনি। একটা কালো দাগ নাকি পড়ে গেল তাঁর! তবে দু’গোল করা ফিকরুর কোনও হেলদোল আছে বলে মনে হল না। কানে ওয়াকম্যান লাগিয়ে অনুশীলনে নামার আগে হাসতে হাসতে বলে গেলেন, “ব্যাড লাক।”
সিমিওনে ডাগআউটে না থাকা সত্ত্বেও রিয়ালকে বের্নাবাও-য়ে হারিয়েছিল স্পেনের আটলেটিকো। কলকাতার আটলেটিকো কি সেই পথে হাঁটতে পারবে? হাবাস আজ সিমিওনে হতে পারবেন কি না তা দেখতেই বিকেলে কিন্তু যুবভারতী ভরাবেন ‘রোজি ব্ল্যাঙ্কোরা’।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
শাস্তি যাঁদের
আটলেটিকো দে কলকাতা
• আন্তোনিও হাবাস (কোচ): এআইএফএফ-এর শৃঙ্খলারক্ষা আইনের ৫৮ ধারায় খারাপ আচরণের জন্য পরের চার ম্যাচ সাসপেন্ড। জরিমানা পাঁচ লক্ষ টাকা। এর আগে নর্থইস্ট ম্যাচেও তাঁকে সতর্ক করা হয়।
• ফিকরু তেফেরা (স্ট্রাইকার): একই আইনে পরের দু’ম্যাচ সাসপেন্ড। জরিমানা পাঁচ লক্ষ।
• প্রদীপ কুমার ভক্তাওয়ার (গোলকিপার কোচ): লিগের ২২.২ ধারা ভেঙে পরের এক ম্যাচ সাসপেন্ড। তিরিশ হাজার টাকা জরিমানা
এফসি গোয়া
• রবার্ট পিরেস (মিডফিল্ডার): এআইএফএফ-এর আইনের ৫৮ ধারায় খারাপ আচরণের জন্য দু’ম্যাচ সাসপেন্ড। জরিমানা দু’লক্ষ।
হাবাস আর ফিকরুকে সাসপেন্ড করার ঘটনাটা খুব হতাশাজনক। টুর্নামেন্টের শুরুতেই এমন ঘটনা অবাঞ্ছিত। দু’জনেরই সাসপেনশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়েছি। কারণ, বিনা দোষে শাস্তি দেওয়া হয়েছে আমাদের দলের কোচ ও ফুটবলারকে। এবং আমাদের বক্তব্য না শুনে এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়েই শাস্তির সিদ্ধান্তটা নেওয়া হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি বোধহয়। সে জন্যই আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করি, কোচের সাসপেনশনের মেয়াদ কমানো হবে। ফিকরুর ক্ষেত্রেও দুই থেকে কমে এক ম্যাচ সাসপেনশন হবে হয়তো।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy