চেন্নাইয়িনের নতুন কোচের সঙ্গে অভিষেক। ছবি: এএফপি
সব চেয়ে দামি ভারতীয় ফুটবলার কে? সুনীল ছেত্রী! বেঙ্গালুরু থেকে তিনি এ বার পাচ্ছেন এক কোটি চল্লিশ লাখ।
এর পরেই কে আছেন? জেজে লালপেখলুয়া! গত বছরে মোহনবাগানে যিনি ছিলেন অনিয়মিত, তাঁকে চেন্নাইয়িন এফসি কিনেছে এক কোটি তিরিশ লাখ দিয়ে।
তিন নম্বরে জাতীয় দলের ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্ঘান। কেরল তাঁকে নিয়েছে বার্ষিক এক কোটি কুড়ি লাখ দিয়ে।
এরপর? যদি আজ, রবিবার ইন্ডিয়ান সুপার লিগ নিলামে বিক্রি হন তা হলে যুগ্মভাবে টাকার দিক থেকে চতুর্থ হবেন আনাস এডাথোডিকা এবং ইউজেনসন লিংডো। তার পর এক-এক করে আসবেন সুব্রত পাল, অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল-রা। এসবই আইএসএলের খাতার হিসেব। যা অডিট হবে। ক্লাব ফুটবলে খেলোয়াড়দের দলবদল ছিল লুকোছাপা। আইএসএলের নিলাম চালু হওয়ার পর তা এখন প্রকাশ্যে। টেবিলের তলা দিয়ে টাকা দেওয়ার অভিযোগ নেই এখনও। সরাসরি টেবিলে বসে কেনা-বেচা!
আর মহাযজ্ঞের আগের দিন যা দৃশ্য দেখা গেল শনিবাসরীয় মুম্বইতে, আগের দু’বারের নিলামকে তা টেক্কা দেবেই। তবে সেটা আড়ম্বরের জন্য নয়, বাজেট বাঁচিয়ে ফুটবলার কেনার কঠিন অঙ্ক কষার জন্য। এবং এটা এতটাই কঠিন হিসেব যে, বুঝতে গেলে সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে ল্যাপটপ, ক্যালকুলেটর। নজর রাখতে হবে কোচদের উপস্থিত বুদ্ধির দিকে।
ফলে কীভাবে ফুটবলার নেওয়া হবে সেই স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে অঙ্ক কষা। চাইলেই টার্গেট করা ফুটবলার না-ও পাওয়া যেতে পারে। ফলে প্ল্যান বি, সি, ডি সাজিয়ে রাখতে হচ্ছে সবাইকেই। সব মিলিয়ে পনেরো রাউন্ড ধরে নিলাম। তার মধ্যে প্রথম দু’রাউন্ডে টাটাদের জামশেদপুর, দিল্লি ও পুণে পাঁচ ফুটবলার তোলার সুযোগ পাবে। এরপর আসবে এটিকে-সহ অন্যদের সুযোগ। আইএসএলের নিয়মে স্বদেশী এবং বিদেশি ফুটবলার নিতে খরচ করা যাবে ১৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১৫জন দেশি ফুটবলারের জন্য সাড়ে পাঁচ কোটি।
দামি ফুটবলার তিনটে নিলে বাকি ১২জন নেওয়ার সময় বাজেটে টান পড়বেই। যেমন, এটিকের অবস্থা। দেবজিৎ মজুমদার আর প্রবীর দাশকে চুক্তিবদ্ধ করে তাদের খরচ হয়ে গিয়েছে এক কোটি দশ লাখ। টিডি অ্যাসলে ওয়েস্টউড আর কোচ টেডি শেরিংহ্যাম নাকি টিমে চাইছেন লিংডো আর প্রীতমকে। ওদের নিতে হলে খরচ সব মিলিয়ে এক কোটি পঁচাশি লাখ। তা হলে হাতে থাকল কত? আড়াই কোটির সামান্য বেশি। তাতে বাকি এগারো বা বারো ফুটবলার নিতে হবে।
এ বারের নিলামে অবশ্য সেই অর্থে সেলিব্রিটির ভিড় উপচে পড়ছে না। বরং কিছুটা অনাড়ম্বর ভাবেই হচ্ছে সবকিছু। তবে তিন টিমের তিন বলিউড মালিক অভিষেক বচ্চন, রণবীর কপূর এবং জন আব্রাহাম আসছেন। তাঁরা নিলাম টেবিলেও বসবেন। সচিন তেন্ডুলকর বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনীর মতো কেউ আসছেন না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও থাকবেন না এটিকের টেবলে। ফলে সব টিমের কোচ, সহকারী কোচ এবং মালিকরাই অংশ নেবেন নিলামে।
সকাল ন’টা থেকে দফায় দফায় হবে নিলাম। এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে তালিকায় থাকা ২০৫ জন ফুটবলারের মধ্যে থেকে ১৩৫ জন বিক্রি হবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু কে কোন দলে যাচ্ছেন? কোচেদের পছন্দই বা কী? কেউই স্ট্র্যাটেজি ভাঙতে চাইছেন না। তবে শোনা যাচ্ছে, শুরুতেই আনাস এডাথোডিকা-কে কিনে নিতে পারে জামশেদপুর। আনাস অবশ্য তাঁর বিক্রির সময় থাকবেন না এখানে। তিনি মক্কায় গিয়েছেন।
জামশেদপুরের লক্ষ্যে রয়েছেন গোলকিপার হিসাবে আইজলের অ্যালবিনো গোমস বা সুব্রত পাল। মেহতাব হোসেনকেও নিতে পারেন স্টিভ কপেল। দিল্লি শুরুতে সুযোগ পেলে নিতে পারে সুব্রতকে। পুণে তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে নিতে পারে জয়েশ রানে, মিলন সিংহ-কে। দিল্লি নিতে পারে শৌভিক চক্রবর্তীকে। এটিকের তালিকায় লিংডো, প্রীতমদের সঙ্গে রয়েছেন বেঙ্গালুরুতে খেলা কয়েক জন ফুটবলার। তবে সবই নির্ভর করছে কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি কখন ফুটবলার তোলার সুযোগ পাবে তার উপর। যেমন সুব্রত পালকে দিল্লি না-ও পেতে পারে যদি টাটা আগে তুলে নেয়। ফলে নানারকম অঙ্ক কষা চলছে লোয়ার প্যারোলের পাঁচ তারা হোটেলের ঘরে-ঘরে। মুম্বইয়ের এই হোটেলেই বসছে নিলামের আসর।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা ফুটবলারের ফোন আসছে কোচ বা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের কাছে। প্রীতম, মেহতাব, রবিন সিংহ, বলবন্ত সিংহ থেকে রহিম নবি, সৌমিক দে-র মতো ফুটবলারের ঘুম ছুটেছে। সবারই টেনশন— বিক্রি হবে তো?
ফুটবলারদের হয়ে রাত পর্যন্ত হোটলের ঘরে-ঘরে গিয়ে কোচেদের কাছে তদ্বির করছেন তাদের এজেন্টরা। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, তাঁর ‘ক্লায়েন্ট’ কতটা ভাল খেলেছেন শেষ মরসুমে। বিক্রি করতে পারলেই কেল্লা ফতে। কমিশনে ভরে উঠবে পকেট। ফুটবলারদের মতো তাই তাঁদের এজেন্টরাও টেনশনে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত এই পরিস্থিতিই থাকবে। কারণ নিলাম শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে যাবে। মজার ব্যাপার হল, বাজেট মানতে গিয়ে নিলামে এমন কিছু ফুটবলার ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কিনবে, যাঁদের নাম আগে কেউ শোনেনি। অথবা বহুদিন ফুটবল বৃত্তের বাইরে তাঁরা।
সব মিলিয়ে মুম্বইয়ে রবিবার আইএসএলের ফুটবলার-নিলাম ঘিরে উত্তেজনা পারদ চড়ছে। যা হয়তো যে কোনও থ্রিলারকেও হার মানাবে বলে মনে হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy