Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাচ ফেলার রোগের সঙ্গে ফিরল কেপির ছায়াও

রাজকোটের রোগ আরব সাগর তীরে এসেও তাড়া করছে ভারতকে। চলতি ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের প্রথম দিন থেকে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বিরাট কোহালির ভারত, প্রায় এক মাস কেটে গেলেও তার কোনও ওষুধ খুঁজে পাওয়া গেল না। রাজকোটে গোটা পাঁচ-ছয় পড়েছিল।

অশ্বিন: প্রথম দিনে চার উইকেট। কিটন: শূন্য রানে জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি।

অশ্বিন: প্রথম দিনে চার উইকেট। কিটন: শূন্য রানে জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি।

চেতন নারুলা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৫:০২
Share: Save:

রাজকোটের রোগ আরব সাগর তীরে এসেও তাড়া করছে ভারতকে।

চলতি ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের প্রথম দিন থেকে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছিল বিরাট কোহালির ভারত, প্রায় এক মাস কেটে গেলেও তার কোনও ওষুধ খুঁজে পাওয়া গেল না। রাজকোটে গোটা পাঁচ-ছয় পড়েছিল। ভারত টেস্ট ড্র করেছিল কোনও রকমে। বিশাখাপত্তনমে প্রথম চারটে পড়েছিল। ভারত জিতেছিল ঠিকই, কিন্তু ক্যাচ ফেলার রোগ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছিল। মোহালি একটু চুপচাপ। কিন্তু মুম্বইয়ে ঢুকে আবার পুরোনো রোগের প্রত্যাবর্তন।

আবার প্রথম দিন। আবার প্রথম দিকে ক্যাচ। আবার ক্যাচ ছাড়া। আর ক্যাচ পড়ল কার?

না, কিটন জেনিংস! তা-ও শূন্য রানে!

গালিতে দাঁড়িয়ে থাকা করুণ নায়ারের ঘাড়ে একশো শতাংশ দোষ চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ক্যাচটা কঠিন ছিল। অজিঙ্ক রাহানে থাকলে কী হত বলা যায় না, কিন্তু করুণের বাঁ হাত ছুঁয়ে বলটা ছিটকে চলে গেল। চলে গেল, প্রথম দিনই মুম্বই টেস্টের রিমোট বিরাট কোহালির হাতে উঠে যাওয়ার স্বপ্নটাকে নিয়ে। ভারত যে ম্যাচে টেনশনের জায়গায়, বলা যায় না। দিনের তৃতীয় সেশনে রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিজের তেজ ফিরে পেয়ে ভারতকে ম্যাচে বেশ কিছুটা ফিরিয়েছেন। গোটা দিন ভারতীয় বোলিংকে নখদন্তহীন দেখিয়েছে, কিন্তু অশ্বিন তার মধ্যে চারটে তুলে বেরিয়ে গেলেন। ইংল্যান্ড প্রথম দিনের শেষে ২৮৮-৫। শেষ ইংরেজ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি বাইশ গজে। বেন স্টোকস এবং জস বাটলার। শুক্রবার সকালে যদি এঁরা নতুন বিক্রম শুরু করেন, কোহালি চাপে পড়বেন। না পারলে, ইংল্যান্ড পড়বে। কিন্তু ঘটনা হল, অশ্বিনের তেজেও প্রথম দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ ভারত কথাটা লেখা যাচ্ছে না।

কারণ, কিটন জেনিংস। চব্বিশ বছরের অভিষেককারী তো ‘জীবনের’ রিটার্ন গিফট হিসেবে সেঞ্চুরি দিয়ে গেলেন ভারতকে!

আর পাঁচ জন ইংরেজ ক্রিকেটারের মতো কিটনের জন্ম ইংল্যান্ডে নয়। তাঁর বাবা রে জেনিংস প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ। কিটনও দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব পর্যায়ে খেলেছেন। তার পর থেকে ইংল্যান্ডে। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরিকারী বলছিলেন যে, ক্যাচের সময় তাঁর মনে হচ্ছিল টেস্ট জীবনটা কি না শুরুই হচ্ছে শূন্য রান দিয়ে! ‘‘অভিষেকেই সেঞ্চুরি, এখনও কেমন যেন অপার্থিব মনে হচ্ছে। এটা ঠিক, ভাগ্য আমার সঙ্গী হয়েছে। একবার ক্যাচ পড়েছে। একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আমার পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও ভাগ্যের প্রয়োজনও হয়,’’ বলে গেলেন জেনিংস।

অশ্বিনও পরে বলছিলেন যে, জেনিংসের ক্যাচ পড়ার সময়ই বুঝেছিলেন কপালে ভোগান্তি আছে। ‘‘মনে হয়েছিল, বড় ইনিংস খেলে দেবে। ডারহামের বিরুদ্ধে দারুণ ফর্মে আছে তো ও।’’ দিয়েছেনও। ২১৯ বলের ইনিংসে তেরোটা বাউন্ডারি মারেন জেনিংস। ভারতীয় স্পিন সামলাতে ব্রহ্মাস্ত্রও ছাড়েন একটা—রিভার্স সুইপ। জয়ন্ত যাদবকে একটা সময় পরপর রিভার্স সুইপ মারছিলেন জেনিংস। এমনকী সেঞ্চুরির বাউন্ডরিটাও একই শটে, জয়ন্তকে। ভারতের ভাগ্য ভাল যে, তৃতীয় সেশনে অশ্বিন চেনা মারণ-ঘূর্ণি ফিরিয়ে আনলেন। একই ওভারে তুললেন মইন আলি এবং জেনিংসকে। জো রুট, জেনিংস, আলি, বেয়ারস্টোর— সবই তো অশ্বিনের শিকার। তাঁর জন্যই ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে সাড়ে চারশো বা তার বেশির স্বপ্ন ছাড়তে হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ওয়াংখেড়ের প্রথম দিনের বীরের তাজ ভারতীয় অফ স্পিনারকে দেওয়া যাবে না। ওটা আজকের মতো জেনিংসেরই প্রাপ্য।

দিনের শেষে দেখা গেল, মাইকেল ভনের সঙ্গে টুইটে ভাল লেগেছে কেভিন পিটারসেনের। জেনিংসের ইনিংস নিয়ে ভন উচ্ছ্বসিত টুইটের জবাবে কেপি পাল্টা লিখলেন, ‘মেড ইন সাউথ আফ্রিকা মাইকেল!’

ঠিকই তো। দক্ষিণ আফ্রিকাই তো। চার বছর আগে ওয়াংখেড়ের ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টে সেঞ্চুরিকারীর নাম ছিল কেভিন পিটারসেন। এক দক্ষিণ আফ্রিকাজাত। যিনি সিরিজটাকেই ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তার পর। ইংল্যান্ড ফিরেছিল টেস্ট সিরিজ জিতে। ভারত এ বার সিরিজ হারছে না। কিন্তু চার বছর পর আবার ওয়াংখেড়ে, আবার ভারত-ইংল্যান্ড, আবার দক্ষিণ আফ্রিকা কানেকশন ও সেঞ্চুরি।

সিরিজটা কোন দিকে ঘোরে, এখন সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ashwin Keaton
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE