Advertisement
E-Paper

স্পিন বনাম স্পিন ছাপিয়ে এখন তাজের দিকে ছুটছে বিরাট মডেল

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের দুই স্পিন-সাধক বুধবারের গ্রিন পার্কে যা শুরু করেছিলেন, ক্রিকেট সাংবাদিককুলের কাছে তা লোভনীয় দৃশ্য তো বটেই, আদর্শ প্রাক্-ম্যাচ মুখবন্ধও।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:১৭
বিরাট-প্রস্তুতি। গ্রিন পার্কে বুধবার। -এএফপি

বিরাট-প্রস্তুতি। গ্রিন পার্কে বুধবার। -এএফপি

ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের দুই স্পিন-সাধক বুধবারের গ্রিন পার্কে যা শুরু করেছিলেন, ক্রিকেট সাংবাদিককুলের কাছে তা লোভনীয় দৃশ্য তো বটেই, আদর্শ প্রাক্-ম্যাচ মুখবন্ধও।

গুড লেংথ স্পটে সযত্নে ছেড়ে রাখা কিছু মার্কার্স। বোলার স্পটে ফেলে কখনও ভেতরে আনছে, কোনওটা আবার বাইরের দিকে বেরোচ্ছে চকিত টার্নে। উইকেটকিপার মাঝেমধ্যে মার্কার্সের পজিশন পাল্টে-পাল্টে দিচ্ছেন। নির্দেশ, তা-ও আসছে। বোলার আসছে কখনও ওভার দ্য উইকেট, কখনও রাউন্ড দ্য উইকেট। প্রান্ত বদলে যাচ্ছে বারবার।

গ্রিন পার্কের ওই বোলার খুব চেনা। বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট বহু দিন তাঁকে টিমের স্পিন-কোহিনুর বলে স্বীকার করে নিয়েছে।

তিনি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

গ্রিন পার্কের ওই উইকেটকিপারও ভীষণ চেনা। ভারতীয় ক্রিকেট কেন, বিশ্বের সর্বকালের সেরাদের মানচিত্রেও তাঁর একটা সর্বজনীন স্বীকৃতি আছে। শুধু কোহিনুর নন, এই ভদ্রলোক সোজা স্পিন-কিংবদন্তি। আপাতত কিপারের ভূমিকায় যাঁকে দেখা যাচ্ছে।

ইনি, অনিল কুম্বলে!

ভারতবর্ষের মাটিতে চব্বিশ ঘণ্টারও কমে আবারও এক টেস্ট সিরিজের উদ্বোধন। ভারতের মাটিতে খেলা হলে সে ম্যাচের ভবিতব্য কী দাঁড়াতে পারে, মোটামুটি আন্দাজ করে নেওয়া কষ্টসাধ্য নয়। উইকেটে টার্ন থাকবে, অশ্বিন রবির তেজে আরও একবার ঝলসে দেবেন বিদেশি বিপক্ষকে— এটাই তো হালফিল ভারতীয় ক্রিকেটের ‘থাম্ব রুল’। কানপুর উইকেট কিউরেটরের কথা অনুযায়ী বেয়াড়া আচরণ করে থিওরি ওলট-পালট করে দেবে কি না, উত্তর সময়ের গর্ভে। কিন্তু আপাতত এটাই সবচেয়ে গভীর দৃশ্য। সবচেয়ে অর্থবহ ক্যানভাস। আমাদের স্পিন বনাম ওদের স্পিন। অশ্বিন-জাডেজা-মিশ্র বনাম সোধি-স্যান্টনার-ক্রেগ। তার প্রেক্ষিতে গুরু কুম্বলের ক্লাসে শিষ্য অশ্বিন এর চেয়ে ভাল প্রাক-যুদ্ধ মুখবন্ধ কিছু হতে পারে? ধারণাটা জোরালো হয় পরবর্তী ছবিতে। যেখানে কোচ কুম্বলে শিষ্য অশ্বিনকে ছেড়ে একটু দূরে। চারপাশে দাঁড়িয়ে স্লিপ কর্ডন, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, গালি, সিলি পয়েন্ট। কু্ম্বলে ব্যাট হাতে মাঝখানে। ক্লোজ ইনে চকিত ক্যাচ তুলছেন, যার অর্থটাও পরিষ্কার। কাল থেকে আগামী কয়েক দিন অশ্বিনের বলে যে ক্যাচ-ট্যাচগুলো উঠবে, তার একটু মহড়া নিয়ে রাখা। জলবৎ-তলরং, সহজবোধ্য স্ট্র্যাটেজি।

এবং অর্ধসমাপ্ত স্ট্র্যাটেজি।

পাঁচশো টেস্টের পিচ পরীক্ষায় কুম্বলে। বুধবার।

আসলে বৃহস্পতিবার গ্রিন পার্কে যে টেস্ট যুদ্ধটা শুরু হতে যাচ্ছে, তা পুরো সিনেমাটার প্রথম দৃশ্য মাত্র। গোটা সিনেমা কানপুর টেস্ট কেন, নিউজিল্যান্ড সিরিজটাই নয়। ওটা, আগামী তেরোটা টেস্ট। নিউজিল্যান্ড প্লাস ইংল্যান্ড প্লাস অস্ট্রেলিয়া। যে সিনেমার শুরু সেপ্টেম্বরে, সমাপ্তি আগামী ফেব্রুয়ারিতে। অতএব, বিরাট কোহালির টিম ইন্ডিয়ার ধ্যান-জ্ঞান যে শুধুমাত্র আসন্ন সিরিজে সীমাবদ্ধ ভাবার কারণ নেই। কোহালি আসলে খুঁজছেন তাজ। টেস্ট বিশ্বের এক নম্বরের কাজ। কোহালি সৃষ্টি করছেন মডেল। যে মডেল তাঁকে নিশ্চিত পথনির্দেশিকা দেবে স্বপ্নপূরণের।

যেমন?

টিমের প্লেয়ারদের বিশ্বাস দেওয়া যে, একটা-দু’টো ম্যাচ খারাপ মানে তোমার জায়গায় চলে যাবে না। ভারত অধিনায়ক চান, প্লেয়াররা মাঠে নামবে যখন, ভাবতে ভাবতে নামবে যে আগামী আট-দশ বছর জায়গাটা আমার! কারণ, একজন ক্রিকেটারের চারদিকে স্বাচ্ছন্দ্যের চাদর দিলে তবেই সে দু’শো শতাংশ দিতে পারে। গিলোটিনের হুমকিতে নয়।

স্পিন খেলায় উন্নতি। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। কোহালির মনে হচ্ছে, বিদেশে পেস সামলানোয় বেশি সময় খরচ করতে গিয়ে স্পিন বোলিং খেলায় যথেষ্ট নজর দেওয়া হয়নি। যা এ বার অতীব প্রয়োজন। কারণ কোনও চ্যাম্পিয়ন টিম প্রতিপক্ষকে খোলা জানালা দেয় না। যা দিয়ে সে দুর্গে ঢুকে পড়তে পারে।

অটুট মনঃসংযোগ। একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দিনের পর দিন নিজেকে রগড়ে যাওয়া। ট্রেনিং শিডিউল, প্র্যাকটিসের নিয়ামবলি পাল্টাবে না, একই থাকবে। একঘেয়েমি এসে গেলেও কিছু করার নেই। ক্রিকেটে সাফল্যের শ্রেষ্ঠ শৃঙ্গে পৌঁছনোর রাস্তাটাই বড় একঘেয়ে। খাওয়াদাওয়া, সেটাও একটা বড় ব্যাপার। সাফল্য-সংস্কৃতির ওটাও একটা প্রবল গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রাক্-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিরাট কোহালি শুধু শেষ লাইনটা বাদে সবই বলে গেলেন। ওটা শোনা গেল। নিউজিল্যান্ড সফরে যে তিন টেস্ট কেন্দ্রে ম্যাচ হচ্ছে, প্রত্যেক জায়গায় একটা ই-মেল পাঠিয়েছে বোর্ড। যেখানে টিমের ফ্লাইট ডিট্লেস, হোটেল ডিটেলস শেষে একটা লাইন আছে। যে মাঠে টিমের মেনুতে গ্রিলড চিকেন, পনির আর ব্লেন্ডার (জুস) রাখতে হবে। তেল-ঝাল-মশালাদার খাবারের কোনও জায়গা নেই। হাই-প্রোটিন ডায়েট। এটা কার মস্তিষ্কপ্রসূত সেটা না বললেও বোধহয় বোঝা যায়। বিরাট কোহালি— তিনি একই ধরনের মেনু পছন্দ করেন না? যেখানে কাবোর্হাইড্রেটের বদলে থাকবে প্রোটিন। আশিস নেহরা একবার বলেওছিলেন যে, কোহালির সঙ্গে লাঞ্চ বা ডিনার করতে বসা ‘অত্যাচার’-ই প্রায়। মশলাদার কারিতে হাতই দেবেন না বিরাট!

নিজে দেবেন না, টিমকেও দিতে দেবেন না। টিম কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁর মন্ত্রে দীক্ষা নেয়। কেএল রাহুল শোনা গেল, নিজের প্র্যাকটিসের সময় প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর রগড়ানির রোলমডেল এখন নাকি অধিনায়ক। যার প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে কানপুরে ভারতের চার বোলার নিয়ে নামার সম্ভাবনা, স্পিন বনাম স্পিন ডুয়েল নিয়ে আলোচনা সব ফুটনোট লাগে, গুরুত্বহীন মনে হয়। বরং কোহালির বাকি কথাগুলো প্রাসঙ্গিক মনে হয় যখন তিনি বলেন, “দেশের মাঠে এই তেরোটা টেস্ট অনেকের কেরিয়ারগ্রাফ ঠিক করে দেবে। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি যে, আমার টিম চ্যাম্পিয়ন টিম। শ্রেষ্ঠ হওয়ার মশলা যাদের আছে।” মনে থেকে যায় এক অধিনায়কের ছবি, যে ম্যাচের আগে খেলতে শুরু করে ম্যাচ, সিরিজের প্রথম বলের আগে ছুটতে থাকে অভীষ্ট্য লক্ষ্যের দিকে।

দিগন্তবিস্তৃত স্বপ্ন নিয়ে।

Anil kumble Virat kohli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy