Advertisement
E-Paper

দলবাজির অভিযোগ উড়িয়ে শেষ যুদ্ধে ঝাঁপানোর শপথ

নেট বোলারদের উদ্দেশ্যে সদম্ভে ঘোষণা করলেন, ‘‘তুমমেসে সবসে জাঁবাজ বোলার কৌন হ্যায়, উও আজাও’’ (তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার কে, চলে এসো)। দীর্ঘদেহী স্থানীয় বোলারটিকে দেখে বেশ খুশিই হলেন মনে হল। বললেন, ‘‘মেরে সাথ আ যাও।’’ তার পর তাঁকে বল করতে বলে চলল দুমদড়াক্কা ব্যাটিং।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৮
আজই কি শেষ ম্যাচ? মোহালিতে প্র্যাকটিসের ফাঁকে শাহিদ আফ্রিদি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

আজই কি শেষ ম্যাচ? মোহালিতে প্র্যাকটিসের ফাঁকে শাহিদ আফ্রিদি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নেট বোলারদের উদ্দেশ্যে সদম্ভে ঘোষণা করলেন, ‘‘তুমমেসে সবসে জাঁবাজ বোলার কৌন হ্যায়, উও আজাও’’ (তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বোলার কে, চলে এসো)। দীর্ঘদেহী স্থানীয় বোলারটিকে দেখে বেশ খুশিই হলেন মনে হল। বললেন, ‘‘মেরে সাথ আ যাও।’’ তার পর তাঁকে বল করতে বলে চলল দুমদড়াক্কা ব্যাটিং।

না, ইনি তিনি নন। দু’দিন আগে যিনি ব্যাটে ঝড় বইয়ে পাকিস্তানের জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েও হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন, সেই মারকুটে ওপেনার শার্জিল খান নন।

ইনি মহম্মদ হাফিজ। হাঁটুর চোটের জন্য মঙ্গলবারের ম্যাচে যিনি খেলতেই পারেননি। ডাগ আউটে বসে ছটফট করেছেন। সেই তিনি আকস্মিক সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্যাড-আপ করে নেটে! সবচেয়ে দ্রুত বল করেন যে নেট বোলার, তাঁকে ডেকে নিয়ে আলাদা সেশনে।

প্রশ্ন উঠে গেল, তা হলে কি হাফিজ শুক্রবার খেলতে পারেন? জানা গেল, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন লড়াইয়ে নাকি তাঁকে খেলানোর মরিয়া চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার ব্যাটিংয়ে যা ফর্ম দেখা গিয়েছে, তার পর আর অন্যদের উপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।

নেটে ব্যাটিংয়ের যা বহর দেখা গেল হাফিজের, তাতে তিনি ব্যাট হাতে মাঠে নেমে যেতেই পারেন। কিন্তু নেটে ব্যাট করা আর প্রেশার কুকার পরিস্থিতিতে ম্যাচে নেমে ব্যাট করার মধ্যে যে অনেক ফারাক। সেই ঝুঁকিটা নেওয়া যাবে কি না, তা-ই ভেবে দেখছেন দলের ডাক্তাররা। রাতে জানা গেল, নেটে ব্যাট করার পর হাঁটুতে আবার যন্ত্রণা হয় হাফিজের। শুক্রবার সকালে ফিটনেস টেস্ট দেবেন হাফিজ। তার পর সিদ্ধান্ত। দলের কাছে আর একটা ভাল খবর, ওয়াহাব রিয়াজ ফিট। তাঁর খেলার সম্ভাবনা ভালই।

শুধু হাফিজ নয়, এ দিন আরও বড় একটা চমক ছিল পাক নেটে। শাহিদ আফ্রিদির শুরুতেই নেটে ব্যাট করতে ঢোকা। অন্যরা যখন পিসিএ স্টেডিয়ামের মাঠে কড়া রোদে পুড়তে পুড়তে কঠোর ফিল্ডিং অনুশীলন করছিলেন, তখন নেটে ঝাড়া কুড়ি মিনিট ব্যাট করে নেন আফ্রিদি। পাশের নেটেই হাফিজ।

ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী নেটে ব্যাট করতে নামার রীতিটা বেশিরভাগ দল ধরে না রাখলেও পাকিস্তান রেখেছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেও নেটে সেই অর্ডার অনুযায়ীই নেমেছিলেন তাঁরা। সেই রীতি অনুযায়ী আফ্রিদির নেটে প্রথমে আসা মানে তো ম্যাচে ওপেন করতে আসা! রহস্যের পর্দাটা কিন্তু সরানো গেল না রাত পর্যন্ত।

পাকিস্তান শিবিরে চলছেটা কী?

দু’দিন আগেই আফ্রিদি বলেছিলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচই হয়তো আমার শেষ ম্যাচ।’’ তাই শুক্রবারেরটা শেষ ম্যাচ ধরে নিয়েই কি তাতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে চমকে দিতে চান সকলকে? ইঙ্গিতটা যেন তেমনই।

অনুশীলনে যে রকম সিরিয়াস ছিলেন এ দিন, ভক্তদের অটোগ্রাফ, সেলফির আবদার যে ভাবে ফিরিয়ে দিলেন, তাতে এক অচেনা আফ্রিদিকে যেন পাওয়া গেল। এমনিতেই তাঁর কাশ্মীর-মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর বেশ কিছুটা দমে রয়েছেন পাক ক্যাপ্টেন। তার উপর শুক্রবারের ম্যাচের চাপ। ভিতরে ভিতরে যেন ফুঁসছেন। একটা বিস্ফোরক ইনিংস ছাড়া এই আগুন নেভার আর কোনও উপায় নেই।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুধু বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াই নয় তাঁদের। যাবতীয় জল্পনা, সমালোচনা, নিন্দারও জবাব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ এখন পাকিস্তান টিমের সামনে। দলের ভিতর গ্রুপবাজি, বিশ্বাসঘাতকতারও অভিযোগ উঠেছে। দেশের এক মন্ত্রী পর্যন্ত এই অভিযোগ করতে ছাড়েননি। তার একটা মৌখিক জবাব এ দিন অবশ্য দিলেন শোয়েব।

এ দিন দেশের এক পাক সাংবাদিকের কাছ থেকে শোনেন দলবাজির অভিযোগের তিরটা না কি তাঁর দিকেও ছোড়া হচ্ছে। তার উত্তরে প্রাক্তন পাক ক্যাপ্টেন বললেন, ‘‘শুনুন, শোয়েব মালিকই সেই লোক যে পিএসএলে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছে, তরুণদের জায়গা করে দিতে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছে। তাই শোয়েব মালিক গ্রুপবাজি করে, এ কথা মানতে রাজি নই। দেশে এত কথা হয় বলেই তো টিমটা কোনও দিন দাঁড়াতে পারল না। ধারাবাহিক হতে পারল না। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’’ শুধু মুখে নয়, মাঠেও এর জবাব না দিতে পারলে দেশের বিক্ষুব্ধ মানুষদের যে ঠান্ডা করা যাবে না, তা তাঁরা খুব ভাল করেই জানেন। তাই এ দিন প্র্যাকটিস শুরুর আগে মাঠে গোল হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে শপথ নিলেন পাকরা।

প্রাক্তন পাক অধিনায়ক পরে আরও ব্যাখ্যা করলেন, দলবাজিই যদি সবচেয়ে বড় সমস্যা হত, তা হলে ২০০৯-এ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে পারত না পাকিস্তান। বললেন, ‘‘সে বার দলের মধ্যে অন্তত ছ’জন ক্রিকেটার ছিল, যারা (একে অপরের সঙ্গে) কথাই বলত না। তাও তো আমরা সে বার বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। মাঠে নামলে আর এ সব ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে না। আমরা জানি এটাই লালা-র (আফ্রিদি) শেষ বিশ্বকাপ। ও আমার বড় ভাইয়ের মতো। তাই ওকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলে আমার চেয়ে খুশি কেউ বেশি হবে না।’’

বুধবার চিন্নাস্বামীতে ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতলেও নেট রান রেটটা বাড়িয়ে নিতে না পারায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা দি্য়েছে পাকিস্তানিদের মনে। অস্ট্রেলিয়া যদি ভারতকে হারায় আর তারা যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে, তা হলে তো নেট রান রেটের ভিত্তিতে তাদের শেষ চারে ওঠার আশা থেকেই যাবে।

সেই আশা নিয়েই বুধবার রাতে পুরো টিম টিভির সামনেই বসেছিল। শোয়েব বললেন, ‘‘বাংলাদেশ তো ম্যাচটা জিতেই যেত। আমরা বাংলাদেশেরই জয় চাইছিলাম। তাতে আমাদেরই সুবিধা হত, সে জন্যই।’’

তা না হওয়ায় যে মুষড়ে পড়েছেন শোয়েবরা, তা নয়। বরং আশার যে আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে, তাকে শুক্রবার দাবানলে পরিণত করতে চান তাঁরা।

wt20
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy