Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
বেঙ্গালুরুতে ০-২ পিছিয়ে ভারত

পারিবারিক সমস্যায় ঝটিতি মুম্বই যেতে হল লিয়েন্ডারকে

বিজয় অমৃতরাজ ঠিক ওই সময়ই প্রেস এনক্লোজারের সামনে ভিআইপি সোফা ছেড়ে উঠে পড়লেন! পাশেই বসা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে বলে গেলেন, “ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগটা গেল। জানি না, ০-২ পিছিয়ে প্রথম দিনটা আমরা শেষ করব কি না!”

অনুশীলনে নেমেও ফিরতে হল লি-কে।

অনুশীলনে নেমেও ফিরতে হল লি-কে।

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৫
Share: Save:

বিজয় অমৃতরাজ ঠিক ওই সময়ই প্রেস এনক্লোজারের সামনে ভিআইপি সোফা ছেড়ে উঠে পড়লেন! পাশেই বসা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে বলে গেলেন, “ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগটা গেল। জানি না, ০-২ পিছিয়ে প্রথম দিনটা আমরা শেষ করব কি না!”

প্রথম সিঙ্গলসে ০-২ সেটে পিছিয়ে থাকা য়ুকি ভামব্রি তার কয়েক সেকেন্ড আগেই তৃতীয় সেটে ৪-১ এগিয়ে গিয়েও আবিষ্কার করেছেন, সেটা ৪-৪ করে দিয়েছেন দুসান লায়োভিচ। শেষ পয়েন্টটা য়ুকি প্রতিপক্ষকে দিয়েছেন নেটের দু’হাত দূর থেকে রিটার্ন ভলি জালে মেরে। বিজয়ের কি বছর চল্লিশ আগের উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে নিজের ঠিক এ রকমই একটা টেনিস শিক্ষানবিশের মতো শটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন চিরতরে চুরমারের স্মৃতি তখন মনে পড়ে গিয়েছিল? সে জন্যই এ দিনের মতোই স্টেডিয়াম ত্যাগ? কারণ সেই উইম্বলডনে রাজনৈতিক কারণে অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকা-পূর্ব ইউরোপের সেরা টেনিস তারকাদের টুর্নামেন্ট বয়কটে খেতাবের এক নম্বর ফেভারিট ছিলেন বিজয়ই। যিনি শেষমেশ সে বারের চ্যাম্পিয়ন ইয়ান কোদেসের বিরুদ্ধে আজকের য়ুকির মতোই ম্যাচের মাহেন্দ্রক্ষণে নেটের সামনে দাঁড়িয়ে মারা ভলিও জালে জড়িয়ে ডুবেছিলেন!

তবে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী হুবহু মিলে গিয়েছে ডেভিস কাপের ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাইয়ের প্রথম দিনে। য়ুকির দু’ঘণ্টা চার মিনিটে ৩-৬, ২-৬, ৫-৭ স্ট্রেট সেটে কার্যত উড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় সিঙ্গলসে সোমদেব দেববর্মনও ফিলিপ ক্রাজিনোভিচের কাছে হারায় ভারত ০-২ পিছিয়ে টাইয়ের আরও দু’দিন বাকি থাকলেও ফের এশিয়ান আঞ্চলিক গ্রুপে নেমে যাওয়ার বিপজ্জনক সরণিতে কার্যত দাঁড়িয়ে! য়ুকির হারের সঙ্গে সোমদেবের হারের পার্থক্য বলতে, ভারতের এক নম্বর ডেভিসকাপার ১৯ মিনিট বেশি সময় নিয়েছেন হারতে। আর তিনের বদলে চার সেটে হেরেছেন। দু’ঘণ্টা ২৩ মিনিটে ১-৬, ৬-৪, ৩-৬, ২-৬। দ্বিতীয় সেট জিতে ম্যাচ সমতায় এনেও তার পর খেলা যত গড়িয়েছে, সোমদেবকে কোর্টে ততই বেশি বিবর্ণ দেখিয়েছে।

লিয়েন্ডার পেজ বেঙ্গালুরুতে পা রেখেই একেবারে ঠিক কথাটা বলেছিলেন। “সার্বিয়ার মতো ডেভিস কাপের বিগ পাওয়ারের বিরুদ্ধে গোটা টাইয়ের ভাগ্য গড়ে দেবে বড়জোর সাত-আটটা পয়েন্টই। পাঁচটা ম্যাচে হয়তো দেখা যাবে ওই রকম বিগ পয়েন্ট সাত-আটটা এসেছে। সেগুলো যারা বেশি জিতবে, টাইও তাদের।” অন্তত প্রথম দিন সে রকম বিগ পয়েন্ট দু’টো সিঙ্গলস মিলিয়ে যদি ছ’টা আসে, তা হলে তার প্রতিটাই জিতেছে সার্বিয়ানরা। ঘরের মাঠ, পরিচিত পরিবেশ পেয়েও ভারতীয়রা নন।

য়ুকি যদি ০-২ পিছিয়ে তৃতীয় সেটে ৪-১ করে প্রবল ভাবে ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি করেও সেই সুযোগ জলাঞ্জলি দিয়ে থাকেন, তা হলে পরের ম্যাচে সোমদেব দ্বিতীয় সেট জিতে ১-১ করেও সেই ছন্দ ধরে রাখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। দু’টো ম্যাচেই প্রায় সমস্ত বিগ পয়েন্ট জিতেছেন সার্বিয়ানরা। যার আবার অধিকাংশই ভারতীয়দের আনফোর্সড এররের কল্যাণে। নিজেদের মারা উইনারের দাপটে নয়। দেখা গেল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উঁচু অনভ্যস্ত পরিবেশে খেলতে সার্বিয়ানদের কোনও সমস্যা হল না। তাঁদের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন বোগডান-ই আসল কথাটা বলে গেলেন। “আমরা ধনী দেশ না হতে পারি, কিন্তু কী ভাবে খেলতে হয় জানি। দুসান আর ফিলিপ বেঙ্গালুরুতে গত পাঁচ দিন নিশ্চয়ই এমনি-এমনি কষ্ট করেনি! এ রকম একটা দিন জীবনে আসার জন্যই প্রাণপাত ট্রেনিং করেছে এখানে। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে।”

ভারতের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন কি শুরু-শুরুতেই ছেলেদের হাল বুঝে ফেলেছিলেন? দিনের প্রথম সার্ভিস ব্রেকটা কিন্তু ভারতেরই! প্রথম সিঙ্গলসের প্রথম সেটের চতুর্থ গেমেই দুসানকে ব্রেক করেন য়ুকি। কিন্তু পরের গেমেই নিজের সার্ভিস হারান লাভ-এ। একটাও পয়েন্ট না পেয়ে। গুরুত্বপূর্ণ ওই গেমে একটা পয়েন্টে অহেতুক অতিরিক্ত কোনাকুনি রিটার্ন মারার পরীক্ষা করতে গিয়ে পয়েন্টটা নষ্ট করার পর অমৃতরাজ সাইডলাইনে চেয়ার ছেড়ে উঠে য়ুকির দিকে অবাক চোখে একবার তাকালেন। তার পরেও শেষ পয়েন্টটা ফোরহ্যান্ড ক্রস কোর্ট মারতে গিয়ে বল আকাশে উড়িয়ে দিলেন যখন য়ুকি, আনন্দকে দেখা গেল, দু’হাত মাথায় দিয়ে আকাশই দেখছেন! আর নিজের সাতাশ বছরের সেই পয়া ডেভিস কাপ জ্যাকেটটা (সাতাশিতে ফাইনাল খেলার) খুলে এ বারেরটা পরে নিলেন দ্বিতীয় ম্যাচে সোমদেব প্রথম সেটে টানা তিনটে সার্ভিস গেম নষ্ট করার পর।

কিন্তু এই সময় যাঁর সাইডলাইনে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে জুনিয়র সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করার কথা ছিল, আগের দিন বলেও ছিলেন সে কথা, সেই লিয়েন্ডার পেজ আজ কোথায়? গুঞ্জনটা মিডিয়া মহল থেকে গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে উঠেছিল, যখন ডেভিস কাপের প্রথামতো দু’দলের জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে টাইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় ভারতের টিম লাইনআপে লিয়েন্ডার অনুপস্থিত আবিষ্কৃত হল! ভারতীয় ড্রেসিংরুমের মুখে কুলুপ থাকলেও (রোহন বোপান্না তো দু’টো সিঙ্গলসের মাঝের দশ মিনিটের বিরতিতে লাউঞ্জে দাঁড়িয়ে দাবি করলেন, “লিয়েন্ডার এখানেই আছে। চলে আসবে এক্ষুনি।”) আসল ঘটনা হল, পার্টনার রিয়া পিল্লাইয়ের সঙ্গে তাঁদের মেয়ে আইয়ানার আইনি হেফাজতের অধিকার নিয়ে লিয়েন্ডারের যে মামলা চলছে, আদালতে তার শুনানিতে দাঁড়াতে ভোরের প্রথম ফ্লাইটে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন লিয়েন্ডার। গভীর রাতে বেঙ্গালুরুর টিম হোটেলে ফিরে ফোনে শুধু বললেন, “এআইটিএ আর টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে আগেই অনুমতি নেওয়া ছিল। এটা নিয়ে প্লিজ কিছু জানতে চাইবেন না। একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” তা হলে এটা নিয়ে ভারতীয় দল এত লুকোছাপা করল কেন সারা দিন? “সেটা টিম ম্যানেজমেন্টকেই জিজ্ঞেস করুন,” এ বার কিছুটা বিরক্তি ঝরে পড়ল লিয়েন্ডারের গলায়।

কিন্তু পেশা আর পরিবারের মাঝে স্যান্ডউইচ অবস্থায় রাত পোহালেই এই টাইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে, ভারতের কাছে মরণবাঁচন ডাবলসে কতটা চেনা লিয়েন্ডার পেজকে পাওয়া যাবে? যিনি গত চব্বিশ বছর ডেভিস কাপে ভারতের এ রকম ভুরি-ভুরি মরণবাঁচন ম্যাচে তেরঙার মর্যাদা রক্ষায় কোর্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজয়ী যোদ্ধা রূপে কোর্ট থেকে বেরিয়েছেন।

সে রকম বহু যুদ্ধের ঘোড়ার উপরও যেন এ বার বাজি ধরতে পারছে না টিম ইন্ডিয়া। নইলে সোমদেব কেন বলে যাবেন, “প্রথম দিনই ০-২ পিছিয়ে পড়ার পর এই টাই জেতার আশা খুবই কম। এমনকী কাল ডাবলসটাও আমার মতে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। তবে ডাবলসে একটা লাইফলাইন পেলে শেষ দিন রিভার্স সিঙ্গলসে শেষ চেষ্টা করে দেখব।”

সেই লাইফলাইনের দিকেই এখন তাকিয়ে ভারতীয় টেনিস!

ছবি: পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE