সোমবার মোহনবাগান বনাম টালিগঞ্জ ম্যাচ ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল মোহনবাগান মাঠ। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ ম্যাচ বন্ধ থাকার পর বাতিল করে দেওয়া হলেও বিতর্ক চলছেই। এতটাই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল যে বাড়তি পুলিশ ফোর্সের সঙ্গে মাঠে নামাতে হয় র্যাফও। তার পর গ্যালারি ফাঁকা করে বের করা হয় রেফারিদের। কারণ, মোহনবাগান সমর্থকদের ক্ষোভের কারণই ছিল রেফারি, লাইন্স ম্যানের সিদ্ধান্ত। মোহনবাগানের তিনটি গোল অফ সাইডের কারণে বাতিল হওয়ার পরই আগুন জ্বলতে শুরু করে গ্যালারিতে। প্রথম থেকেই তাতছিল সমর্থকরা। শেষ মুহূর্তের বাতিল গোল তাতে ঘিয়ের কাজ করে। সেই ম্যাচ ও রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে মঙ্গলবার আইএফএ-এর কাছে রিপোর্ট জমা দিলেন ম্যাচ কমিশনার। ম্যাচের রেফারি ও লাইন্সম্যানদের সঙ্গে আলোচনার পরই এই রিপোর্ট জমা দেন তিনি।
সোমবার ম্যাচ দু’মিনিট বাকি থাকতে ভেস্তে যাওয়ার পর মোহনবাগানের তরফে তাদের শীর্ষ কর্তারা দাবি করেছিলেন ম্যাচের রি প্লের। এবং সূচি মেনেই ম্যাচের রি প্লে দিতে হবে। তার মানে এই ম্যাচের রি প্লে না খেলে অন্য কোনও ম্যাচ খেলবে না মোহনবাগান। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছিলেন বাগান সভাপতি টুটু বসু ও সচিব অঞ্জন মিত্র। তা হলে ৭ সেপ্টেম্বরের ডার্বি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় আইএফএ কী সিদ্ধান্ত নেবে এখন সেটাই দেখার। আইএফএ-তে রেফারির রিপোর্ট পৌঁছে গেলেও এদিন তা নিয়ে মুখ খোলেননি সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়। রেফারির রিপোর্ট দেখে তার পরই যাবতীয় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গিয়েছে আইএফএ-এর তরফে। এই বিষয়ে বুধবার হতে পারে কলকাতা লিগ কমিটির মিটিং। তার পরই সিদ্ধান্ত হবে মোহনবাগানের দাবি আদৌ মানতে পারবে কী না আইএফএ।
প্রসঙ্গত, সোমবার ঘরের মাঠে টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে কলকাতা লিগের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের দৌঁড়ে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচ জিততেই হত মোহনবাগানকে। এই মূহূর্তে ৬ ম্যাচ খেলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। ৫ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোহনবাগান টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে জিতলে সম সংখ্যক ম্যাচ খেলে হত ১৬ পয়েন্ট। দু’পয়েন্ট পিছনে থাকলে আশা থাকত। কারণ ডার্বির আগে একটি করে ম্যাচ খেলতে হত দুই প্রধানকে। ১ সেপ্টেম্বর ইস্টবেঙ্গল খেলবে জর্জ টেলিগ্রাফের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে ২ সেপ্টেম্বর মোহনবাগানের খেলার কথা ছিল ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে। তার পর ডার্বি। ডার্বির পরও আরও দুটো করে ম্যাচ বাকি থাকবে দুই দলের। কিন্তু টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করলে সমস্যায় পড়ে যেত মোহনবাগান। তা হলে ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল ড্র করলেই কলকাতা লিগ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেত লাল-হলুদের।
এমন অবস্থায় টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে ম্যাচে অফ সাইডে গোল বাতিলের হ্যাটট্রিক মানতে পারেনি মোহনবাগান সমর্থকরা। কারণ ততক্ষণে ১-১ করে ফেলেছে টালিগঞ্জ। তার আগেই ড্যানিয়েলের গোলটি নিশ্চিত অফ সাইড। কিন্তু ৬০ মিনিটে প্রবীর দাসের অফ সাইডে গোল বাতিল নিয়ে থাকতে পারে প্রশ্ন। যদিও তার আগেই গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিয়েছিলেন এই প্রবীরই। ১-১ হওয়ার পর যখন পয়েন্ট নষ্টের প্রমাদ গুনছে বাগান শিবির তখনই আজহারউদ্দিন মল্লিকের গোল আবার বাতিল হয় অফ সাইডের জন্য। তাতেই ছড়ায় উত্তেজনা। মাঠে উড়ে আসতে থাকে জলের বোতল থেকে ইটের টুকরো। উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে পুলিশের লেগে যায় ঘণ্টা খানেক। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।
আরও খবর
অফসাইডে তিন গোল বাতিল, তাণ্ডবে পণ্ড মোহনবাগান-টালিগঞ্জ ম্যাচ