এক জন ছিলেন তথাকথিত ব্যর্থ খেলোয়াড়, অন্য জন তথাকথিত ব্যর্থ কোচ। এক জন সাফল্য ফিরে পেলেন মহিলা হকি দলের কোচ হয়ে, অন্য জন যুব হকি দলে। তফাৎ বলতে এইটুকুই। নইলে ‘চক দে ইন্ডিয়া’র কবীর খান বা বাস্তবের মিররঞ্জন নেগির সঙ্গে হরেন্দ্র সিংহের জীবন হুবহু মিলে যাচ্ছে।
রবিবার বেলজিয়ামকে হারিয়ে যুব হকি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। হরেন্দ্র সিংহই ছিলেন এই বিশ্বজয়ী দলের কোচ। অথচ ব্যর্থতার বোঝা মাথায় নিয়ে এগারো বছর আগে তাঁকেই সরে যেতে হয়েছিল। ২০০৫ সালে নেদারল্যান্ডস-এর রটারডামে যুব হকি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল ভারতীয় দল। সেই দলেরও কোচ ছিলেন হরেন্দ্র। ফেভারিট হয়ে শুরু করেও সেমিফাইনালে হেরে সোনা-রুপোর দৌড় থেকে ছিটকে যায় ভারত। ব্রোঞ্জ জয়ের লড়াইয়েও স্পেনের কাছে পেনাল্টি শুটআউটে হেরে যায়। তার পরই কোচিংয়ের দায়িত্ব থেকে কার্যত তাড়িয়ে দেওয়া হয় হরেন্দ্রকে।
ঠিক যেমনটা ঘটেছিল মিররঞ্জনের জীবনেও। ১৯৮২-র এশিয়ান গেমস ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ৭-১ গোলে হেরেছিল ভারত। মিরই ছিলেন সেই হতভাগ্য গোলকিপার। সেই হারের পরে কার্যত সামাজিক নির্বাসনে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। পরে তাঁর হাত ধরেই মহিলা হকি দল ২০০২ সালে কমনওয়েলথ গেমস জেতে। এই ঘটনার ছায়ায় তৈরি হয় জনপ্রিয় ছবি ‘চক দে ইন্ডিয়া’। সেখানে কোচ কবীর খানের ভূমিকায় অভিনয় করেন শাহরুখ খান।
হরেন্দ্রর কাহিনিও যেন সিনেমার মতো। সিনেমার কবীরের মতোই নিজের দলটাকে দল হিসেবে খেলতে শিখিয়েছেন। অথচ বিহারের ছপরার এই বাসিন্দা বছর দুয়েক আগে যখন ফের দায়িত্ব পান, অনেকেই নাক কুঁচকেছিলেন। ধ্যানচাঁদ স্টেডিয়ামে রবিবার বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ফাইনালে নামার আগে সে সব কথা ভেবে চোখে জল এসে গিয়েছিল হরেন্দ্রর। জেতার পরে ফোনে বললেন, ‘‘ছেলেদের বলেছিলাম আমাদের জিততেই হবে। রংটা তোমরা ঠিক করে নাও।’’ কম অপমান তো সহ্য করতে হয়নি। ২০০৫-এর পর চুপচাপ গ্রামে ফিরে এসে সেখানকার ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন। পরে ফের ডাক পেয়ে দিল্লি যান। হরেন্দ্র বলছেন, ‘‘রটারডম স্টেডিয়ামের স্মৃতি আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। তবে নিজের মনের ক্ষত আমি ছেলেদের সঙ্গে কখনও শেয়ার করিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy