Advertisement
০৪ মে ২০২৪
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

ওয়েম্বলিতে ফের মেসির জাদুতে মুগ্ধ ফুটবল বিশ্ব

টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে বার্সেলোনা জিতল ৪-২। ফুটবল বিশ্লেষকরা লিখলেন, বার্সেলোনা নয়, জিতল আর্জেন্টাইন মহাতারকার ‘ঐশ্বরিক’ ফুটবল।

উচ্ছ্বাস: গোল করে ভক্তদের উদ্দেশে ‘ফ্লাইং কিস’ মেসির। রয়টার্স

উচ্ছ্বাস: গোল করে ভক্তদের উদ্দেশে ‘ফ্লাইং কিস’ মেসির। রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৭
Share: Save:

টটেনহ্যাম ২ বার্সেলোনা ৪

ওয়েম্বলিতে লিয়োনেল মেসির অবিশ্বাস্য ফুটবল দেখে ফিলিপে কুটিনহোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘লিয়োই সর্বকালের সেরা।’’

টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে বার্সেলোনা জিতল ৪-২। ফুটবল বিশ্লেষকরা লিখলেন, বার্সেলোনা নয়, জিতল আর্জেন্টাইন মহাতারকার ‘ঐশ্বরিক’ ফুটবল। নিজে দু’টি গোল করলেন। সারা ম্যাচে কত যে অসাধারণ পাস বাড়ালেন তার ইয়ত্তা নেই। এখানেই শেষ নয়। দু’বার তাঁর শট পোস্টে প্রতিহত হল। এবং স্বাভাবিক ভাবেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ বার টানা দু’টি ম্যাচ হেরে গেল স্পার্স। ইন্টার মিলানের পরে বুধবার রাতে বার্সেলোনার কাছেও।

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে ফুটবল মহল। প্রশ্ন উঠে গেল, এর পরেও কেন মেসিকে বলা হবে না সর্বকালের সেরা? ওয়েম্বলিতে দলকে ১-০ এগিয়ে দেওয়া কুটিনহো ম্যাচের পরে বললেন, ‘‘লিয়োই সর্বকালের সেরা। মাঠে নেমে সব সময়ই ও নতুন কিছু করে। আজ ওকে দু’টো গোল করতে দেখে কী যে আনন্দ হল। এমনিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সব ম্যাচই কঠিন। নিজেদের একশো ভাগ দিতেই হয়। আজকের জয়টা মেসির জন্যই আরও বেশি করে আমাদের প্রাপ্য ছিল।’’

বুধবারের জোড়া গোলে এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির পাঁচটি গোল হয়ে গেল। বড় মঞ্চে তাঁর বারবার জ্বলে ওঠা নিয়ে বার্সা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে বললেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসভি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে এখানে খেলল লিয়ো। ওর স্বভাবই হচ্ছে সব সময় অবিশ্বাস্য কিছু করা। খারাপ লাগছে ওর দু’টি শট পোস্টে লেগেছে ভেবে। তবে এ সব নিয়ে লিয়ো নিজে কিছু মনে করে না। দল জেতায় ও দারুণ খুশি। আর এটাই আমাদের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’

যুগলবন্দি: গোলের পরে মেসির গোলে কুটিনহো। গেটি ইমেজেস

এই সে দিন লন্ডনে ফিফার বর্ষসেরাদের পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানে মেসি গরহাজির ছিলেন। যার সমালোচনাও হয়েছে। সেখানে সেরার পুরস্কারটা নিয়ে যান ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ। মেসির সে দিন না থাকা নিয়ে বুধবার জর্দি আলবা বলে ফেললেন, ‘‘ও ছিল না তো কী হয়েছে? মদ্রিচ খুব ভাল ফুটবলার হলেও সেরা তো একজনই। সে লিয়ো। ও যে ফুটবলটা খেলে সেটা পুরোপুরি অন্য স্তরে নিয়ে যায় আমাদের। ওয়েম্বলিতে আজও বুঝিয়ে দিল, ওর ধারেকাছে কেউ নেই। লিয়ো বল নিয়ে দৌড়লে আমরা কার্যত নীরব দর্শকে পরিণত হই। ওর জন্যই মনে হয় জীবনটা সুন্দর, আমরাও আগের চেয়ে আর একটু ভাল আছি।’’

এ দিকে ৫৬ মিনিটে নিজের প্রথম গোলের পরে মেসি যে ভাবে উৎসব করলেন, তা দেখে অনেকেই বেশ অবাক। গোল করেই আঙুল তুলে ছুটে যান পোস্টের পিছনে রাখা ক্যামেরার দিকে। তার পরেই দেখা যায় তিনি হাত দিয়ে নিজের মাথার উপরে চাপড় মারছেন। এবং সবশেষে মুখটা ফুলিয়ে শূন্যে চুম্বন দিচ্ছেন। স্পেনের সংবাদমাধ্যমে এই উৎসবের রহস্য উদ্ঘাটনের একটা চেষ্টা হয়েছে। এ সবই নাকি আর্জেন্টাইন মহাতারকা তাঁর তিন সন্তান থিয়াগো, মাতেয়ো ও সিরোকে গোল উৎসর্গ করতে চেয়েছেন। ম্যাচের সময় মেসির পরিবার বার্সেলোনাতেই ছিল। হয়তো টিভিতে খেলাও দেখেছেন। এমনিতে ১২৭টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে মেসির গোল হয়ে গেল ১০৫টি। নিজেই বলেছেন, ইউরোপ সেরার এই প্রতিযোগিতায় কাপ ধরতে না পারলে মনে হয় কিছুই যেন করা হয়নি। তাঁর কথা, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ হল সবার জন্যই চূড়ান্ত মঞ্চ। এর আগে বা পরে কিছু থাকতে পারে না।’’ সঙ্গে অবশ্য যোগ করেছেন, ‘‘লিগ আর স্প্যানিশ কাপও এ বার আমরা জিততে চাই। চূড়ান্ত লক্ষ্য অবশ্যই ত্রিমুকুট জয়।’’

আপাতত অত এগিয়ে আর কেউ ভাবছেন না। খেলার শুরুতেই হুগো লরিসের ভুলে কুটিনহোর গোল করে যাওয়া। ২৮ মিনিটে ইভান রাকিতিচের ২০ গজ দূর থেকে অসাধারণ ভলিতে ২-০ করা। ৫২ আর ৬৬ মিনিটে হ্যারি কেন ও এরিক লামেলার প্রত্যাঘাত। এ সবের কোনও কিছুই মনে রাখতে চান না কেউ কেউ। রিয়ো ফার্ডিনান্ড যেমন বললেন, ‘‘বাকি সব কিছু পরে ভাবা যাবে। টানা দু’ ম্যাচ হেরে টটেনহ্যামের গ্রুপ থেকে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেও এটা বলছি কারণ ওয়েম্বলিতে আমিও হাজির ছিলাম। এবং প্রত্যক্ষ করলাম লিয়ো নামে এক ফুটবলারের অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য এক ফুটবল। যা দেখার পরে মনে হচ্ছে আমি বিরাট ভাগ্যবান বলেই এই ম্যাচটা স্টেডিয়ামে বসে দেখতে পেরেছি।’’ টটেনহ্যাম ম্যানেজার মাউরিসিয়ো পচেত্তিনোও যেন ঘুরিয়ে সেই কথাটাই বললেন, ‘‘মনে রাখবেন, আমরা ফুটবলটা খেললাম লিয়োনেল মেসি আর ওর বার্সেলোনার বিরুদ্ধে। ওদের বিরুদ্ধে শুরুতেই পিছিয়ে পড়লে আর বিশেষ কিছুই করার থাকে না। আমরাও পারিনি। কিন্তু যে লড়াইটা মেসিদের বিরুদ্ধে আমার ছেলেরা করেছে তার জন্য আমি গর্বিত।’’

পরিসংখ্যান বলছে, কত কিছুই এই ম্যাচে হয়েছে। শেষ ১১টা ম্যাচের ন’টায় জিতেছে বার্সেলোনা। ওয়েম্বলিতে আবার সফল লিয়ো মেসি। টানা তিন বার। ইংল্যান্ড বাদে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে এত গোল (২২টি) করেননি মেসি। গোল করিয়েছেনও সবচেয়ে বেশি। কুটিনহোর গোলটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সার দ্রুততম গোল (৯২ সেকেন্ডে)। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজের শততম ম্যাচ খেললেন জেরার পিকে।

এমন কত কী।

কিন্তু আলবা যেটা বললেন সেটাই বোধহয় ঠিক, ‘‘কখনও কখনও অসাধারণ কিছু চোখের সামনে দেখার পরে অন্য কোনও কিছু নিয়েই আর ভাবতে ইচ্ছে করে না। আজ শুধু মেসিকে নিয়েই ভাবতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE