Advertisement
২০ মার্চ ২০২৩
ডালমিয়ার না থাকা এক বছর

‘স্যারকে বিশ্বকাপের সময় বারবার মিস করেছি’

একটা বছর রুদ্ধশ্বাসে কেটে গেল। কে বলবে জগমোহন ডালমিয়ার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বছর ঘুরে যে আগামী মঙ্গলবার। সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে নতুন ব্যক্তির বসে পড়া ঘটে এর ঠিক চার দিন বাদে। ডালমিয়াবিহীন সেই একটা বছর নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে।একটা বছর রুদ্ধশ্বাসে কেটে গেল। ডালমিয়াবিহীন সেই একটা বছর নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে।

পূর্বসূরির সামনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

পূর্বসূরির সামনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

গৌতম ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:০৯
Share: Save:

প্রশ্ন: এই একটা বছরের অভিজ্ঞতা কেমন?

Advertisement

সৌরভ: ভালর দিকটা বেশি। বিশাল অভিজ্ঞতা হল। পড়াশোনা করতে করতে যেমন শেখা যায়, কতকটা সে রকমই। হিউজ লার্নিং এক্সপিরিয়েন্স আমার জন্য। আমার জন্য সবচেয়ে ভাল অভিজ্ঞতা হল বিশ্বকাপ সংগঠন করতে পারা। এই টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে আমার স্কিলের সর্বোচ্চ পরীক্ষা নিয়েছে।

প্র: ব্যাট ছাড়া পরীক্ষা।

Advertisement

সৌরভ: ইয়েস ব্যাট ছাড়া পরীক্ষা। কিন্তু এক বার যখন পাকিস্তান ম্যাচটা ঠিকঠাক অর্গানাইজ করে ফেললাম, তখন জানি উতরে গেছি। আর কিছু আটকাবে না।

প্র: ওই ম্যাচ ঠিকঠাক নামিয়ে দেওয়া মানে সেঞ্চুরি করে ফেলা।

সৌরভ: অ্যাবসলিউটলি। ইন্ডিয়া-পাক সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তার পর আর ফাইনাল অর্গানাইজ করাটাও কঠিন নয়। তবে একটা কথা বলি। চ্যালেঞ্জটা খুবই টাফ ছিল। এমনিতেই এমন আইকনিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের চেয়ারে বসাটা বিশাল চাপ। এহেন মানুষ যাঁকে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করতাম।

প্র: প্রশাসক ডালমিয়ার কাছে কী শিখেছেন?

সৌরভ: আমি ওঁকে খুব বেশি বছর সহ-কর্মকর্তা হিসেবে পাইনি। আমি আসার বছরখানেকের মধ্যেই তো উনি হঠাৎ করে চলে গেলেন। তবে যেটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে ধৈর্য একটা মস্ত বড় গুণ ছিল ওঁর। চাপের মুখে দুর্দান্ত ছিলেন। ওই সব বড় বড় ম্যাচ অর্গানাইজ করাটা কী বিশাল চাপ। অথচ কী ইজি সামলাতেন। মাথা গরম করতে দেখিনি। গোটা ব্যাপারগুলো স্থানীয়-রাজ্য-জাতীয় আর আন্তর্জাতিক লেভেলে যে ভাবে পরিচালনা করতেন, তা থেকে পরিষ্কার কেমন মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট ছিলেন। বিশাল গ্রহণযোগ্যতা ছিল। সবাই এক কথায় মানত। আমার ব্যক্তিগত ভাবে যেটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগত তা হল, ক্রিকেটারদের প্রতি ওঁর শ্রদ্ধা। এটা বিশাল কোয়ালিটি যে, টপ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয়েও মনে রেখেছিলেন, মাঠে নেমে খেলে ক্রিকেটাররা। লোকে তাদেরই দেখতে আসে। কর্মকর্তাকে নয়।

প্র: আর?

সৌরভ: নিজে এত সফল হয়ে, এত ধনী হয়েও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কী সহজ ভাবে মিশতেন। আমার সব সময় মনে হয়েছে মানুষ হিসেবে উনি খুব উদার ছিলেন। যে কোনও দর্শনার্থীর লেভেলে নেমে উনি কথা বলতে পারতেন। অ্যাজ অ্যান অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হি ইজ আ রোলমডেল।

প্র: এই এক বছরে ওঁকে মিস করেছেন?

সৌরভ: বেশ কয়েক বার করেছি। আমি ওঁকে স্যার বলতাম। বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড কাপ অর্গানাইজেশনের সময় খুচখাচ মনে হয়েছে স্যারের পাকা মাথার পথনির্দেশ যদি পাওয়া যেত।

প্র: এই যে বিচারপতি লোঢার নির্দেশে ভারতীয় বোর্ড বিধ্বস্ত। এই সময় ডালমিয়া বেঁচে থাকলে কী বলতেন?

সৌরভ: বলা মুশকিল। সুপ্রিম কোর্টের এমন সব নির্দেশ রয়েছে। সো নো আইডিয়া।

প্র: ডালমিয়া-উত্তর যুগের সূচনা হয়েছে আপনার মাধ্যমে। সেই যুগের রোডম্যাপ কী?

সৌরভ: বাংলা ক্রিকেটে সব অর্থে পেশাদারিত্ব চালু করা। ক্রিকেট আর সেই ক্রিকেট নেই। বিশ্বব্যাপী বদলে গেছে। আমি চেষ্টা করছি সেই মানসিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়তে। মুরলীকে এনেছি। ভিভিএসকে এনেছি।

প্র: সে তো ডালমিয়া দেখেই গিয়েছেন।

সৌরভ: ইয়েস। বাট আমি চেষ্টাটা আরও বাড়াতে চাই। আমাদের প্লেয়ারদের ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে আরও এক্সপোজার দিতে হবে। টপ লেভেলে ওদের নিয়মিত পারফর্ম করতে হবে। আমাদের দুটো ছেলে এখন ভাল ভাবে ইন্ডিয়া খেলছে— ঋদ্ধি আর শামি। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। এখন দুনিয়া জুড়ে চলছে টি-টোয়েন্টির দাপট। আমাদের অন্য ছেলেদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তেমন সাফল্য নেই। আইপিএলে আমাদের কোথায় কে ঝকমক করে? বেঙ্গল প্রিমিয়ার লিগ তাই চালু করতেই হবে। নইলে টপ লেভেলে টি-টোয়েন্টির জন্য প্লেয়ার তৈরি করা যাবে না।

প্র: রঞ্জি ট্রফিতেও গত ক’বছর আমরা মোটেও ভাল খেলছি না।

সৌরভ: গত বছর আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে হেরেছিলাম। মনে রাখতে হবে, যে গ্রুপ থেকে আমরা কোয়ালিফাই করেছি তাতে দিল্লি আর কর্নাটক ছিল। আমাদের যদি অসমের সঙ্গে ব্যাড লাইটের জন্য সরাসরি জেতা আটকে না যেত, আমরাই গ্রুপে নাম্বার ওয়ান হতাম। দুইয়ের বদলে এক হতাম। কোয়ার্টার ফাইনালেও এমপির এগেইন্সটে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের ভুল ডিসিশন না নিলে আমার ধারণা সেমিফাইনাল খেলতাম।

প্রশাসক জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জেও সেঞ্চুরি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে আমন্ত্রিত অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে।

প্র: ক্রিকেট প্রশাসনে এসে নিজের সৌরভ গাঙ্গুলি টাচটা কোথায় বলে মনে করেন?

সৌরভ: আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি ক্রিকেট স্ট্রাকচারকে আরও জীবন্ত, আরও মজবুত করে তুলতে। আমরা আসলে স্টেটের টপ কুড়ি জন প্লেয়ারকে দেখি। আর তাদের নিয়ে ভাবি। আমরা ভুলে যাই এদের তুলে এনেছে নীচের তলার সিস্টেম। সেই লোয়ার স্ট্রাকচারটা মজবুত করতে হবে। আমি তাই লিগে তিন দিনের ম্যাচ চালু করেছি। রঞ্জি ট্রফি যেখানে চার দিন ধরে খেলতে হয়, সেখানে আমাদের মনে হয়েছে যদি আমরা এখানে চার দিনের খেলা করতে পারি। একটা কথা আমাদের ছেলেদের মেন্টাল ট্রেনিংয়ে রাখতেই হবে যে, চার দিনের ম্যাচে প্রথম দিন খারাপ খেলা মানেই ম্যাচ থেকে চলে যাওয়া নয়। ফেরার অনেক সময় আছে।

একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আসল লক্ষ্য হল বাংলা থেকে টপ কোয়ালিটি ক্রিকেটার তুলে আনা। এটাই লক্ষ্য। তার জন্য সিস্টেম ঠিক করতে হবে। সুযোগ-সুবিধে বাড়াতে হবে। কম্পিটিটিভ বাতাবরণ তৈরি করতে হবে।

প্র: আপনার এত চেষ্টা সত্ত্বেও কিন্তু সিএবি দুটো গোষ্ঠীতে পরিষ্কার ভাগ হয়ে চলছে। সবার তো চোখে পড়ছে। এটা দুঃখজনক?

সৌরভ: (একটু ভেবে) জীবনের সব ফেজেই এ সব থাকে। হয়তো আমাদের নতুন টিমটার সেটল ডাউন করতে একটু সময় লাগবে। হয়তো এটা সাময়িক।

প্র: বেশ কিছু বিতর্কও কিন্তু আপনার এক বছরের রাজত্বে হল।

সৌরভ: যেমন?

প্র: যেমন মুখ্য নির্বাচক রাজু মুখোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করে চলে যাওয়া।

সৌরভ: ওঁর চলে যাওয়ার কারণ সহ-নির্বাচকের সঙ্গে বিরোধ। আমি বা সিএবি জড়িত নই। বিশ্বাস না হলে রাজুদার সঙ্গে চেক করতে পারেন।

প্র: সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা দেওয়া।

সৌরভ: পদত্যাগ করাটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে এখন উনি জানিয়েছেন যে, ফিরে আসতে চান।

প্র: লক্ষ্মীরতন শুক্লর অবসরকেন্দ্রিক উপাখ্যান।

সৌরভ: লক্ষ্মী রিটায়ার করুক আমি একেবারেই চাইনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওকে বলেছিলাম খেলে যেতে। শোনেনি আমার কথা।

প্র: ওকে। প্রবীর মুখোপাধ্যায় বিতর্ক।

সৌরভ: উনি তো নিজেই চলে গিয়েছিলেন। আর কন্টিনিউ করতে চাননি। খেলার নিয়ম হচ্ছে সবাইকে একদিন না একদিন যেতে হয়। সে সচিন তেন্ডুলকর হোক, সৌরভ গাঙ্গুলি হোক বা প্রবীর মুখার্জি। কিন্তু সিএবি ওঁর কন্ট্রিবিউশন মনে রাখবে।

প্র: আপনি কথা বলেছিলেন প্রবীর বাবুর সঙ্গে?

সৌরভ: হ্যাঁ বলেছিলাম।

প্র: এখনও সিএবির ভেতরে যেন নিঃশব্দ ধারণা যে, আপনি হলেন নাক-উঁচু সুপারস্টার। পুরনো প্রেসিডেন্টের মতো সহজে আপনার কাছে যাওয়া যায় না।

সৌরভ: আপনার এই ধারণাটা ভুল। আমি সবচেয়ে বেশি অ্যাকসেসেবল।

প্র: সিএবির ১২০ জন মেম্বারদের প্রত্যেককে চেনেন?

সৌরভ: প্রত্যেকের নাম জানি। প্রত্যেককে চিনি।

প্র: ইন্ডিয়ান টিমে আপনার বিরোধী কাউকে কাউকেও নিজের দিকে ফিরিয়ে এনেছেন। টিমে থাকা বেশ কিছু দস্যি ছেলেকে পোষ মানিয়েছেন। যেমন হরভজন। যেমন যুবরাজ। সিএবিতে নিজের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে মোটিভেট করে নিজের দিকে টানতে পারছেন না কেন?

সৌরভ: (কিছুক্ষণ চুপ) বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সংখ্যাটা খুব কম। সময়ের সঙ্গে ওরাও সঙ্গে চলে আসবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.