Advertisement
E-Paper

সুনীলের বেঙ্গালুরুকে উড়িয়ে দিয়ে খেতাব লড়াইয়ে মোহনবাগান

সনি নর্দে নামক ঝড় যখন ওঠে তখন কি এরকম সুনামি হয়েই আছড়ে পড়ে বিপক্ষ টিমের ওপর? ইউসা কাতসুমি নামক জাপানি বোমার বর্ষণ যখন শুরু হয় তখন কি এ ভাবেই আছড়ে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে দেয় প্রতিপক্ষকে?

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৪
উল্লাস: মোহনবাগানের দুই গোল স্কোরার। কাতসুমির সঙ্গে ডাফি। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: মোহনবাগানের দুই গোল স্কোরার। কাতসুমির সঙ্গে ডাফি। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সনি নর্দে নামক ঝড় যখন ওঠে তখন কি এরকম সুনামি হয়েই আছড়ে পড়ে বিপক্ষ টিমের ওপর?

ইউসা কাতসুমি নামক জাপানি বোমার বর্ষণ যখন শুরু হয় তখন কি এ ভাবেই আছড়ে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে দেয় প্রতিপক্ষকে?

রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম ফেরত সবুজ-মেরুন জনতার জয়ধ্বনির মধ্যে দিয়ে উচ্চারিত হচ্ছিল, ওই দু’টি নামই। মূলত যাঁদের কাঁধে ভর করে শনিবাসরীয় রাতের পর ফের আই লিগ খেতাব জয়ের যুদ্ধে ফিরে এল মোহনবাগান।

ম্যাচের শুরু থেকেই সরোবরের গ্যালারিতে উড়েছিল সবুজ-মেরুন আবির। শুরু হয়ে গিয়েছিল গান, ‘‘আমাদের সূর্য মেরুন…..।’’ দেখা গেল, মাঠে নামার আগে সেই দৃশ্য ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে সোনালি চুলের হাইতি তারকা বিড়বিড় করে নিজের মনেই কী যেন বলছেন! হয়তো হারিয়ে যাওয়া সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার কোনও গুপ্ত মন্ত্র জপছিলেন। কিন্তু তা বলে ঠিক ডার্বি ম্যাচের আট দিন আগে সনি যে এ ভাবে আগুনে ফুটবল খেলবেন সেটা কে জানত? তিনি নিজেও কি ভেবেছিলেন? ম্যাচের পর ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে বলে দিলেন, ‘‘এই ঘুরে দাঁড়ানোটা দরকার ছিল। খেতাব জিততে হলে আমাদের এখন এভাবেই জিতে যেতে হবে।’’ বোঝাই গেল গতবারের চ্যাম্পিয়নকে দুরমুস করার পর আত্মবিশ্বাসের সলতেতে আগুন লেগেছে তাঁর এবং পুরো সঞ্জয় ব্রিগেডের।

কী করেননি মোহনবাগান জনতার হার্ট থ্রব?

তিরিশ গজ দূর থেকে সোয়ার্ভিং ফ্রিকিকে গোল করিয়েছেন, পঁয়ত্রিশ গজ দৌড়ে এসে গোলের পাস বাড়িয়েছেন নিখুঁতভাবে, বিপক্ষ রক্ষণকে বোকা বানিয়েছেন ডিফেন্স চেরা থ্রু পাসে গোল করিয়ে— সনির পা থেকে বেরোনো এই তিনটে ‘মুক্তো’ থেকেই তো এল সব গোল। টিমের সবথেকে ধারাবাহিক কাতসুমি জোড়া গোল করেছেন ঠিক, ঠিকানা লেখা ফ্রি-কিক থেকে গোল করেছেন ডাফি। বিরতির আগেই সনিরা ২-০ করে ফেললেন। কিন্তু সবই তো সেই সোনালি চুলের মিডিও-র কৃপায়। হোসে ব্যারেটো যেমন নিজের একক ক্যারিসমায় এক সময় পালতোলা নৌকোকে স্রোতে ভাসাতেন বহু কঠিন ম্যাচে, সনি যেন তাঁর নতুন সংস্করণ এখন। ওকোলি ওডাফা তিন বছর সবুজ-মেরুন জার্সি পরে সবুজ তোতাকে ছুঁতে পারেননি, সনি হয়তো পারবেন। এ দিনের গ্যালারিতে জ্বলে ওঠা নতুন উৎসবের সামগ্রী— দর্শকদের জ্বালানো মোবাইলের কয়েক হাজার আলো সেটা হয়তো জানিয়ে দিয়ে গেল।

এই ম্যাচ জিততে না পারলে খেতাব যুদ্ধ থেকে ছিটকে যেত মোহনবাগান। সেই জীবন-মরণ ম্যাচে কার্যত একতরফা খেলে গেল সঞ্জয় সেনের টিম। এতটাই যে, পুরো ম্যাচে মাত্র একটা গোলের সুযোগ পেয়েছিল বেঙ্গালুরুর মান্দার রাও দেশাই। সুনীলরা গত বছর শিলিগুড়িতে আই লিগে পাঁচ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন সনিদের হাতে। সেটা এ দিনও হতে পারত। হল না, কাতসুমি, ডাফিরা সুযোগগুলো কাজে না লাগাতে পারায়। বেঙ্গালুরু কোচ আলবার্তো রোকা স্বীকার করলেন, এএফসি ম্যাচের কথা ভেবে সুনীল ছেত্রীকে নামাননি। ‘‘এই হারের সব দায় আমার,’’ বেঙ্গালুরু কোচের গলায় হতাশা।


লড়াই: বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে বল দখলের লড়াইয়ে সনি। ফাইল চিত্র

স্প্যানিশ কোচ বিশ্রী হারের দায় নিজে নিলেও প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। সুনীলদের কোচ ম্যাচের আগে বলেছিলেন, ‘‘আমার তিরিশ জনের দল। সবাই জেতাতে পারে।’’ সেই টিমের হাল এমন হল কী করে? চৌম্বকে চরম দু’টো সত্য হল, এক) মোহনবাগান রক্ষণ পরীক্ষিতই হয়নি এ দিন। দুই) মরসুমে প্রথমবার সঞ্জয় সেনের মাঝমাঠ এত জমাট ছিল। শেহনাজ সিংহ, শৌভিক চক্রবর্তীরাও পাল্লা দিয়ে ভাল খেললেন সনি-কাতসুমির সঙ্গে।

আই লিগের শেষ পর্বে এসে সঞ্জয় সেনের টিমের এই জ্বলে ওঠা আদৌ ধারাবাহি হবে কী না, সেটা সময় বলবে। মোহনবাগানকে তেরো বছর পর আই লিগ দেওয়া কোচ সম্ভবত এ রকম জয়ের পরও তাই চূড়ান্ত সতর্ক। ‘‘এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। এরপর আরও পাঁচটা ম্যাচ আছে। তার মধ্যে ইস্টবেঙ্গল, আইজল, লাজং-এর সঙ্গে খেলতে হবে। তবে এই ঘুরে দাঁড়ানোটা দরকার ছিল।’’ লিগের সাপ-লুডোর অঙ্ক কষা কোচ সঞ্জয় জানেন, এ সব জয় কোনও কাজেই লাগবে না খেতাব জিততে না পারলে। ড্রেসিংরুমে আপাতত সেই বার্তাই হয়তো ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। সেজন্যই হয়তো এ রকম ম্যাচের পর সাদার্ন অ্যাভিনিউতে জয়ের মিছিল বেরোলেও অদ্ভুত রকম শান্ত থাকল সনিদের ড্রেসিংরুম।

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, প্রীতম কোটাল, আনাস এডাথোডিকা, এদুয়ার্দো ফেরিরা, রাজু গায়কোয়াড়, কাতসুমি ইউসা, শেহনাজ সিংহ, শৌভিক চক্রবর্তী (পিন্টু মাহাতো), সনি নর্দে, আজহারউদ্দিন মল্লিক (বলবন্ত সিংহ), ড্যারেল ডাফি (জেজে লালপেখলুয়া)।

Darryl Duffy Katsumi Yusa Sony Norde Mohun Bagan Bengaluru FC Mohun Bagan vs Bengaluru I-League
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy